বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে চ্যানেল আই ভবনে আসেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। অংশ নেন শহিদুল আলম সাচ্চুর গ্রন্থণা ও উপস্থাপনায় ‘৩০০ সেকেন্ড রাজনীতি নয়’ অনুষ্ঠানে।
রেকর্ড সম্পন্ন করে তিনি কথা বলেন চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে। মন্ত্রীর সাথে কথোপকথনে উঠে আসে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক, দেশি সিনেমায় অনুদান এবং সম্প্রতি ঘোষিত চলচ্চিত্রের উন্নয়নে ১ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল প্রসঙ্গ:
‘বঙ্গবন্ধু’ চলচ্চিত্রটি এখন আলোচনায়। মুম্বাইতে ছবিটির শুটিংও শুরু হয়েছে। অগ্রগতি কেমন দেখছেন?
‘বঙ্গবন্ধু’ চলচ্চিত্রটির জন্য আলাদা একটা কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। আমি যতদূর জানি, শিডিউলে পরিবর্তন না হলে আগামি মার্চের মধ্যে ভারতের অংশের শুটিং সম্পন্ন হওয়ার কথা। আমাদের দেশ থেকে ইতোমধ্যে অনেক আর্টিস্ট সেখানে গেছেন, সামনে আরো যাবেন। আমি নিজেও আগামি মাসে একদিনের জন্য মুম্বাই যাচ্ছি। তো ‘বঙ্গবন্ধু’ সিনেমাটা নিয়ে অগ্রগতি খুব ভালো।
এই সিনেমার বাজেট নিয়ে কোনো ধারণা দেয়া যায়?
বাজেটের সঠিক অংকটা আমি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। এটা দেখে সিওর হয়ে বলতে হবে। তবে বাজেটের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারত- দুই দেশের সরকারের অংশগ্রহণ আছে। যেহেতু এটি একটি যৌথ প্রযোজনার ছবি।
গেল বছরের শুরুতে শ্যাম বেনেগাল যখন বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক করতে বাংলাদেশে এলেন, প্রি-প্রোডাকশন শুরু করেছিলেন। ঠিক একই সময়ে ভারতীয় নির্মাতা রিচি মেহতার একটি দলও ঢাকায় আসেন, তারাও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণের উদ্দেশ্যেই এসেছিলেন। ওই সিনেমার সাথেও কি সরকার বা মন্ত্রণালয় যুক্ত কিনা?
না, ওই সিনেমাটা হলিউডের মুভি। সেটা ভিন্ন, সেটা সরকারিভাবে নয়। বেসরকারি অর্থায়নে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে হলিউড সিনেমা।
তারাও এফডিসিতে বিশাল পরিসরে প্রি-প্রোডাকশনের কাজ শুরু করেছিলেন?
তারা এফডিসির সেট, স্থাপনাগুলো ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছিলো। আমাদের দেশে সিনেমা করতে হলে এমনিতেই অনুমোদন লাগে, গতানুগতিক অনুমোদন সব সিনেমার জন্যই দেয়া হয়। সেগুলো ওই হলিউড সিনেমার জন্যও দেয়া হয়েছিলো। অর্থাৎ শুটিং করতে বাইরে থেকে কেউ আসলে একটা অনুমোদনের দরকার হয়, সেটা তাদেরকেও দেয়া হয়েছিলো।
চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রতি বছরই অনুদান দেয় সরকার। এবছর শুনছি অনুদান চেয়ে রেকর্ড সংখ্যক চিত্রনাট্য জমা পড়েছে। এ বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
এবছর দুই শতাধিক চিত্রনাট্য জমা পড়েছে। এটা আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। যারা প্রাথমিকভাবে চিত্রনাট্য বাছাইয়ের কাজটি করবেন, তাদের প্রতিজনকে দুইশোর বেশি স্ক্রিপ্ট পড়তে হবে! অনুদান কমিটিতে যারা আছেন, তাদের বেশিরভাগ প্রাইভেট পার্সোনালিটি। সিনেমার সাথেই যুক্ত। স্ক্রিপ্টগুলো দেখে প্রত্যেককে মার্ক দিতে হয়, মার্ক দিতে হলে তো প্রত্যেকটা পড়তে হবে। মন্ত্রণালয় থেকে সময় দিয়েছে এক মাস, তো আমি বললাম- এক মাসে দুইশো চিত্রনাট্য কীভাবে পড়বে, পড়া কঠিন হয়ে যাবে! সেটা আমি দুই মাস করে দেয়ার কথা বলেছি। দেখা যাক।
চিত্রনাট্য বাছাই প্রক্রিয়ার আগে জুরি বোর্ডে কারা আছেন, মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানানো হয়। এবার কি হয়ে গেছে?
চিত্রনাট্য যারা পড়বে, সেটা হয়েছে। আর জুরি বোর্ড প্রতি বছর নতুনভাবে গঠিত হয়। সিনেমার সাথে যুক্তরাই জুরি বোর্ডে থাকেন, কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাও থাকেন। কিন্তু মেইন রোলটা প্লে করেন সিনেমা জগতের যারা আছেন। তারাই বসে অনুদানের সব ঠিক করেন। আবার যারা চিত্রনাট্য পড়েন, তারা সার্বিক দিক বিবেচনা করে সেই স্ক্রিপ্টটিকে মার্ক দেন। সেটার উপর ভিত্তি করে নানা যাচাই বাছাই শেষে অনুদানের জন্য নির্বাচিত করা হয়। সুতরাং খুবই স্বচ্ছ একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, একটা ধাপের পর আরেকটা ধাপ।
চলচ্চিত্রের উন্নয়নের জন্য যে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে, সেই প্রক্রিয়া কতোদূর?
এটা কোনো বরাদ্দ নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে। যেটা ব্যাংকিং চ্যানেলে ব্যাংকের মাধ্যমে লোন হিসেবে ডিসবার্স হবে। এটা লোনের মতো। শুধু এখানে সুবিধা হচ্ছে, অন্য ব্যাংক থেকে লোন নিলে সেটা পাঁচ বা সাত বছরের মধ্যে ফেরত দিতে বলে; কিন্তু এটা লং টার্ম। দশ বছরের জন্য। যদিও আমরা সেটা ১২ বছর করার চেষ্টা করছি। আর এটার সুদের হারটাও একটু কম হবে। আমরা চেষ্টা করছি সুদের হার ৪ পার্সেন্ট এর মধ্যে রাখার জন্য। যদিও এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাপার, তারা কতোটুকু করবে। কিন্তু আমরা বলেছি, চার পার্সেন্টে করার জন্য, কারণ ৯ পার্সেন্টে রেগুলার লোনতো এমনিতেই পাওয়া যায়।
দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি, দেশব্যাপী সিনেপ্লেক্স করার পরিকল্পনার কথা। এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ আছে কিনা?
১ হাজার কোটি টাকার যে বিশেষ তহবিল, সেখান থেকে লোন নিয়েই যে কেউ সিনেপ্লেক্স করতে পারবে। আরেকটা কথা হচ্ছে, আমরা বিভিন্ন জেলায় তথ্য অফিস করবো। আপাতত ২৮টি জেলায় সেটা হচ্ছে, সেটি পাশ হয়েছে। সেখানে কিছু সিনেমা হলও থাকবে। জেলাগুলোর কোথাও সিঙ্গেল স্ক্রিন থাকবে, বিভাগীয় কোনো কোনো জেলায় থাকবে ডাবল স্ক্রিন। এগুলো সম্পন্ন হওয়ার পর সেগুলো হয়তো আমরা প্রাইভেটলি লিজ আউট করতে পারি, সেরকম পরিকল্পনা আছে। সেটিও একটি সিদ্ধান্তের ব্যাপার। সরকারতো সিনেপ্লেক্স বানাবে না, সিনেপ্লেক্স বানাবে বেসরকারি লোকজন। সেজন্যই বিশেষ তহবিল গঠন করে লোন দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যে লোন প্রাইভেট ব্যাংকের মাধ্যমেও পাবে, সরকারি ব্যাংকের মাধ্যমেও পাবে।
চ্যানেল আই অনলাইনকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।