ইমরান খানের দল পিটিআই বাদে প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দল পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেছে। এরই মধ্যে ইমরান খান কেন্দ্রে সরকার গঠনের চেষ্টা শুরু করেছেন।
এদিকে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ৫৬ ঘন্টারও বেশি সময় পর শনিবার প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)।
ইসিপির দেওয়া ফল অনুযায়ী, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে। জাতীয় পরিষদের ২৭০টি আসনের মধ্যে ১১৫টিতে জয় পেয়েছে পিটিআই।
যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য ১৩৭টি আসন প্রয়োজন।
পিটিআইএর যেসব নেতা একাধিক আসনে জয় পেয়েছে তাদেরও আসন ছেড়ে দিতে হবে। কারণ আইনানুযায়ী একজন কেবলমাত্র একটি আসনই নিজের দখলে রাখতে পারে।
সরকার গঠন করতে পিটিআইকে স্বতন্ত্রদের ছাড়াও মিত্র শেখ রশিদের আওয়ামী মুসলিম লীগসহ পিএমএল-কিউ, বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি) এবং গ্র্যান্ড ডেমোক্রেটিক অ্যালাইয়েন্সের (জিডিএ) উপর নির্ভর করতে হবে। এছাড়াও এমকিউএম-পাকিস্তানের সাথে সম্ভাব্য জোটগঠনের আভাসও রয়েছে।
চলতি বছরের মে মাসে সরকারের মেয়াদ শেষ করা পিএমএল-এন এবার ৬৪টি আসনে জয় পেয়েছে। আর পিপিপি ৪৩টি আসন পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
কয়েকটি ধর্মীয় দলের জোট মুত্তাহিদা মজলিস-ই-আমাল (এমএমএ) ১২টি আসনে জয় পেয়েছে। এমকিউএম-পি পেয়েছে মাত্র ৬টি আসন।
পিএমএল-কিউ এবং নবগঠিত বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি) চারটি করে আসন পেয়েছে এবং সিন্ধুভিত্তিক গ্র্যান্ড ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (জিডিএ) পেয়েছে দুইটি আসন।
আখতার মেঙ্গালের বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি (বিএনপি) সংসদের নিম্নকক্ষে তিনটি আসন পেয়েছে। আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টি পেয়েছে একটি।
আওয়ামী মুসলিম লীগ (এএমএল), পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসানিয়াত এবং জামহুরি ওয়াত্তান পার্টি (জেডাব্লিউপি) জাতীয় পরিষদের একটি করে আসন পেয়েছে।
তেরজন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাদের নিজ নিজ আসনে জয় পেয়েছে। ফেডারেল সরকার গঠনে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
জাতীয় পরিষদের দুইটি আসনে নির্বাচন স্থগিত করেছিলো ইসিপি। একাধিক আসনে জয়ী প্রার্থীদের ছেড়ে দেওয়া আসনে যে উপনির্বাচন হবে তার সাথে ওই দুইটি আসনেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
ফল প্রকাশে বিলম্বের কারণ
ব্যালট পেপার গণনায় দেরি হওয়ার জন্য টেকনিকাল ত্রুটির কথা বলেছে ইসিপি। প্রিসাইডিং অফিসার থেকে কমিশনে ফল পৌঁছে দেওয়ার সফটওয়্যার রেজাল্ট ট্রান্সমিশন সিস্টেমকে (আরটিএস) দায়ী করছে তারা।
ফল প্রত্যাখ্যান
শুক্রবার নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলন করে ৬৪ আসন পেয়ে দ্বিতীয় হওয়া নওয়াজ শরীফ ও শাহবাজ শরীফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ।
পাকিস্তান মুসলিম লিগ ছাড়াও মুত্তাহিদা মজলিস-ই-আমল- এমএমএ এবং মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট- এমকিউএম সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা যৌথভাবে ফল জালিয়াতির অভিযোগ করেন।
অনতিবিলম্বে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেছেন পিপিপি’র চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো।
ভোট গণনার প্রক্রিয়াও তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই পুনর্গণনার দাবি জানিয়েছে। শুক্রবারের বহুদলীয় কনফারেন্স থেকে পুনর্নির্বাচনের দাবিও উঠেছে। যেখানে পিএমএল-এন, এমএমএ, পিকেএমএপি, এএনপিসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলো।
বিদেশী পর্যবেক্ষকরাও কমিশনকে ব্যালট পেপার গণনার প্রক্রিয়ার আরও ভালো করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র হিথার নোয়ার্ট সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের অনিয়মে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু পাকিস্তানি জনগণকে সাহসিকতার সঙ্গে কেন্দ্রে ভোট প্রদানের ঘটনাকে তিনি স্বাগত জানান। পাশাপাশি নির্বাচনী সহিংসতার নিন্দা জানান।
অন্যদিকে নির্বাচনে সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছিল না বলে উল্লেখ করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক দল।
পাঞ্জাবে জিতেছে পিএমএল-এন কিন্তু পিটিআই খুব পিছিয়ে নেই
পরপর দুইবার পাঞ্জাব শাসন করা পিএমএল-এন এবারও প্রদেশটিতে সবচেয়ে বড় দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তারা ২৯৫টি প্রাদেশিক আসনের ১২৯টিতে জয় পেয়েছে।
তবে প্রদেশটিতে যে পিএমএল-এনই সরকার গঠন করতে পারবে তার নিশ্চয়তা নেই। কারণ পিটিআইও ১২৩টি আসন পেয়ে তার ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে। স্বতন্ত্রদের (২৮) সাহায্য নিয়ে পিটিআই নিজেদের মুখ্যমন্ত্রী দিতে পারে।
পিএমএল-কিউ প্রদেশে তৃতীয় বড় দল হয়েছে। তারা পেয়েছে ৭টি আসন। পিপিপি ৬টি, জামশেদ দাস্তির পাকিস্তান আওয়ামী রাজ একটি ও বিএপি একটি আসনে জয় পেয়েছে।
সিন্ধুতে পিপিপি’র জয়
সিন্ধু পরিষদের সরকার গঠন করতে পিপিপির কোন জোটের প্রয়োজন হবে না। পরিষদের ১৩০টি আসনের মধ্যে দলটি জয় পেয়েছে ৭৬টিতে। পিটিআই ২৩টি এবং এমকিউএম-পি ১৬টি আসন পেয়েছে।
পিপিপিরি একাধিপত্য ভাঙার লক্ষ্যে নির্বাচনে লড়াই করা জিডিএ মাত্র ১১টি আসন পেয়েছে।
তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি) দুইটি এবং এমএমএ একটি আসন পেয়েছে। প্রদেশটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা একটি আসনেও জয় পায়নি।
কেপিতে পিটিআই’র জয়
রাজনীতি পর্যবেক্ষকদের অবাক করে দিয়ে খাইবার পাখতুখাওয়ার (কেপি) ৯৭টি আসনের ৬৬টিই দখলে নিয়েছে পিটিআই। এমএমএ ১০টি এবং এএনপি ৬টি আসন পেয়েছে। পিপিপি চারটি আসন পেয়েছে। ৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছে।
বেলুচিস্তানে এগিয়ে বিএপি
১৫টি আসন পেয়ে বেলুচিস্তানে বড় দল হয়ে বিএপি। এমএমএ ৯টি পেয়ে দ্বিতীয়।
প্রদেশটিতে কে সরকার গঠন করবে তা এখনও অস্পষ্ট। কারণ বিএনপি, বিএনপি-আওয়ামী, হাজারা ডেমোক্রেটিক পার্টি (এইচডিপি) যথাক্রমে ৬টি, ৩টি ও ২টি আসনে জয় পেয়েছে। পিটিআই জিতেছে ৪টিতে। পিকেএমএপি একটি, পিএমএল-এন ১টি আসনে জয় পেয়েছে।
জেডাব্লিউপি একটি আসনে জয় পেয়েছে। যেখানে ৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতেছে।