করোনা আছে কি নেই এ কথাটা এখন সারা পৃথিবীতেই একটা প্রশ্ন হয়ে আছে। তবে আনন্দের বিষয় হলো সব দেশ চেষ্টা করছে করোনাকে জয় করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে। করোনায় স্বজন হারানোর বেদনা যেমন একদিকে আছে। অন্যদিকে পারিবারিক আর্থিক দৈন্যতা জীবন বদলে দিয়েছে কারো কারো। আবার পোস্ট কোভিডের স্বাস্থ্যগত জটিলতাতে ভুগছে অনেকেই।আসলে করোনার সাথে যুদ্ধ করাটা কতটা কষ্টের তা কেবল বুঝে যারা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে তারা আর প্রিয়জন হারানো পরিবারগুলো । সে কারণে সবার উচিত স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা।
করোনার মহামারীর প্রভাব যে খুব সহজে কেটে যাবে না তা আগে থেকেই অনুমেয়। কারণ লকডাউনের ফলে বিগত ২ বছরে আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে যে স্থবিরতা নেমে এসেছিল তার ভুক্তভোগী সরকার ও জনগন। কিন্তু এ মহামারীকে কাটিয়ে উঠার জন্য ভবিষ্যৎ কোন পরিকল্পনা বা প্রস্তুতি ছিল না বলে দেশের সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনে এখন আর্থিক সংকট বিশাল প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু মানুষের আয় সে অনুপাতে বাড়ছে না। যদিও উচ্চবিত্তরা এ আলোচনায় আসে না। তাদের কাছে করোনার কারনে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বৃদ্ধিকে সামান্য বিষয় বলে মনে হয়। অথচ সমাজের মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষদের এখন চাল ডাল দিয়ে জীবন চালানো দায় হয়ে গেছে। কারন দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের রয়েছে কর্মের অভাব আর আয় রোজগার কমেছে আগের তুলনায়।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরাও করোনার দোহাই দিয়ে নানা অজুহাতে দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে বাজারকে অস্থির করে তুলছে। তবে এ বিষয়গুলোকে দেখার মত কোন লোক নেই। কারন এদেশে গরীব মানুষদের মত বা চিন্তার কোন মূল্য নেই। আর আজকাল সব অন্যায়কে মেনে নিয়ে চলা ছা-পোষা মানুষদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তারা মনে করে তাদের কথা শোনার মত কেউ নেই।প্রতিবাদ করে লাভ হয় না।ক্ষমতাধর ব্যবসায়ীদের প্রভাব পাহাড়সম।
নামে মাত্র গনতান্ত্রিক দেশ এখন বাংলাদেশ। জনগনের ভালো থাকার সংজ্ঞাটা কাগজে কলমে যতটা কল্পনাপ্রসূত বাস্তবে তার প্রতিফলন ততটা নয়। উন্নয়নের ভাবনা আর বাস্তবতা দুটো সম্পূর্ণ আলাদা গল্প। অবকাঠামোগত উন্নয়ন দিয়ে দেশকে পরিবর্তন করা অবশ্যই সাধুবাদের কাজ। তবে সে সাথে যদি মানুষের জীবনযাত্রা সহজ,সাবলীল ও স্বস্তির না হয় সেক্ষেত্রে ইট পাথরের উন্নয়ন যে ম্লান হয়ে যায় তা বোধ করি সরকার ও প্রশাসনকে উপলব্ধি করা দরকার ।
দুঃখজনক হল সরকারের দিক থেকে সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা নিয়ে চিন্তা করার মত লোকের অভাব রয়েছে । তা না হলে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর লাগামহীন দাম নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা হত দ্রুত গতিতে । এ দেশে যতক্ষণ পর্যন্ত কোন বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ না করে সে বিষয়ে সুরাহা হবার আশা করা ভুল। তাই বাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোন আশার বানী শোনাবেন সে প্রত্যাশায় অপেক্ষামান আছে জনগন।
করোনার কারনে বেসরকারি অনেক চাকরিজীবি এখন কর্মহীন।আবার আর্থিক লোকসান সামাল দিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যয় সংকোচন করছে নানাভাবে লকডাউন না থাকা সত্ত্বেও। যার প্রভাব পড়ছে সমাজের সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায়। সঞ্চিত অর্থ দিয়ে চলার সার্মথ্য এ দেশে খুবই কম মানুষের রয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই চাল আনতে পান্তা ফুরায় মানুষের কাছে জীবন এখন করোনার চেয়ে ভয়ংকর হয়ে পড়ছে বাজার পরিস্থিতির কারনে।
বলা হয় দেশে কৃষি জাত পন্যে উৎপাদনে ঘাটতি নেই।এমনকি কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের যথাযথ মূল্য পায় না। বাজারে দাম লাগামহীনের কারণ হিসাবে উঠে আসছে মধ্যস্বত্বভোগীদের নাম। এ মধ্যস্বত্বভোগীদের দাপটের কাছে অবরুদ্ধ সকল আইন নিয়ম নীতি। কিন্তু তারা কি করে এত প্রভাবশালী তার ব্যাখ্যা দিতে পারে না সরকার ও প্রশাসন। একই সাথে ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফা অর্জনের কাছে পরাজিত হচ্ছে সরকারের সকল ব্যবস্থা তাও অস্বীকার করার জো নেই। প্রকৃত পক্ষে করোনার কারনের লোকসান পুষিয়ে নিতে ব্যবসায়ীরা জুলুমবাজি করছে জনগণের উপর। সে সাথে এ ধরনের অনৈতিক কাজকে রুখে দেবার সব পদ্ধতি অন্ধ হয়ে আছে বলেই সব সম্ভবের দেশে পরিনত হচ্ছে বাংলাদেশ।
একটি দেশের সামাজিক বৈষম্যতাকে পুঁজি করে যখন ধনী আরও ধনী হয় তখন তাকে উন্নয়ন বলা যায় না। উন্নয়নের ভাবনাতে অবশ্যই সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় স্বাভাবিক স্বস্তি থাকতে হবে।অন্তত তাদের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার নিশ্চয়তা দিতে হবে।সারা বিশ্ব যখন করোনার মহামারীতে আক্রান্ত সেখানে এদেশের এক শ্রেণির মানুষের কর্মকান্ড দেখে মনে হয় না আসলে কোন সংকট দেশে আছে। বাস্তব চিত্র যদি গভীরভাবে অবলোকন করা হয় তবে দেখা যায়, সাধারণ আয়ের মানুষদের ক্ষুধা নিবারনের জন্য শাকে ভাতের যোগড় করে জীবন কাটানো এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।
এসব সাধারণ মানুষদের পরিস্থিতি নিয়ে হয়তোবা রাজনৈতিকভাবে চিন্তা ভাবনা করার প্রয়োজন নেই।কারন গনতান্ত্রিক চিন্তার রাজনীতির চর্চা দেশে এখন আর নেই। তাই সরকার ও প্রশাসনকে অন্তত মানবিক চিন্তা ও মূল্যবোধ থেকে সাধারণ মানুষকে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো থাকার জন্য ব্যবস্থা করা উচিত । আর সে জন্য যে কাজটি করা সবার আগে প্রয়োজন তা হল, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামাগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা করা। তা না হলে অতি লোভী ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকা সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বিষাদের গল্প রচনা করবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)