ভারতের ছুঁড়ে দেয়া ১৭৭ রানের লক্ষ্যটা টপকে যেতে হলে বড় শট খেলতে হত। সঙ্গে দেখাতে হত দায়িত্বশীলতা। বাংলাদেশের টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা শট খেলার বিলাসিতা দেখালেন ঠিকই, তাতে থাকল না শুধু দায়িত্বশীলতা। ফল, মিডলঅর্ডারের দৃঢ়তায় সম্ভাবনা জাগিয়েও ১৭ রানে ম্যাচ হাতছাড়া।
এই জয়ে চার ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে নিধাস ট্রফির ফাইনাল নিশ্চিত করল ভারত। তাদের সঙ্গী হতে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার পরের ম্যাচটি এখন অঘোষিত সেমিফাইনাল। দুদলেরই পয়েন্ট দুই করে। তবে রানরেটে এগিয়ে লঙ্কানরা। ১৬ মার্চ টাইগার-সিংহের লড়াইয়ে জয়ী দলই ১৮ মার্চের শিরোপা লড়াইয়ে রোহিতের দলের প্রতিপক্ষ হবে।
বুধবার প্রেমাদাসায় শুরুতে ব্যাট করে নির্ধারিত ওভারে ৩ উইকেটে ১৭৬ রান তোলে ভারত। জবাবে নির্ধারিত ওভারে ৬ উইকেটে ১৫৯ রানে আটকে যায় বাংলাদেশ।
বুধবার দলীয় সংগ্রহ ফিফটি পেরোতে পেরোতেই টাইগারদের প্রয়োজনীয় রানের গতিতে ভাটা পড়ে। সঙ্গে ইনিংসের অর্ধেক ছুঁতেই সাজঘরে তামিম, লিটন, সৌম্য ও মাহমুদউল্লাহ। সেই ধাক্কা মুশফিক-সাব্বির জুটি কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বাড়ন্ত প্রয়োজনীয় রানরেটের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেননি।
এদিন পাওয়ার প্লে’ই কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। সময়টাতে টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফেরেন। তিনজনকেই ফেরান ওয়াশিংটন সোন্দর। লিটনকে ফিরিয়ে শুরু। আগের ম্যাচে দারুণ সূচনা এনে দেয়া ডানহাতি ব্যাটসম্যান মাত্র ৭ রানে উইকেট দিয়ে আসেন। অফস্পিনার ওয়াশিংটনের ভেতরে ঢোকা বলে বেরিয়ে এসে মারতে যেয়ে লাইন মিস করে স্টাম্পড হন।
খানিকপরেই সৌম্যও ফেরান এই স্পিনার। স্টাম্পের বলে চড়াও হয়ে ব্যক্তিগত এক রানে বোল্ড বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। দ্রুত দুই উইকেট হারানো বাংলাদেশ তামিমের আউটে বিপদে পড়ে। সোন্দরের টানা তৃতীয় শিকারে তামিমের অবদান ৪ চার ও এক ছক্কায় ১৯ বলে ২৭ রান। ফিরেছেন বোল্ড হয়ে।
সেই বিপদ আরও বেড়ে যায় মাহমুদউল্লাহ উইকেট দিয়ে আসলে। লেগস্পিনার যুজবেন্দ্র চাহালের নিরীহ একটি বলে আউট হন টাইগার অধিনায়ক। উড়িয়ে মারতে যেয়ে ডিপ মিডউইকেটে লোকেশের ক্যাচ। থামে ২ চারে ৮ বলে ১১ রানের ইনিংস।
লঙ্কান ম্যাচের সেরা মুশফিকুর রহিম তখনও ছিলেন। সাব্বির রহমানকে নিয়ে লড়াই এগিয়ে নিচ্ছিলেন। দুজনে ৬৫ রান যোগ করে ম্যাচ জমিয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু জয় থেকে পঞ্চাশ রান দূরে থাকার সময় শট খেলতে যেয়ে সাব্বির বোল্ড হলে আবারও পিছিয়ে পড়ে গতি। সাব্বির ২ চার ও এক ছক্কায় ২৩ বলে ২৭ রানে থামেন।
মুশফিক শেষপর্যন্ত লড়েছেন। ৫৫ বলে ৭২ রানে অপরাজিত থাকেন। ৮ চার ও এক ছক্কার ইনিংসটিকে স্বার্থকতা দিতে অপর প্রান্ত থেকে ঝড় তুলতে হত কাউকে। সেই কাজটা করার মত ব্যাটসম্যানই যে খুঁজে পাচ্ছে না টাইগাররা।
ভারতের হয়ে ২২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সেরা ওয়াশিংটন। একটি করে উইকেট নিয়েছেন চাহাল, শার্দুল ও সিরাজ। শার্দুল ৪ ওভারে মাত্র ২১ রান দিয়ে রানের চাকায় লাগাম টানেন।
এর আগে টস জিতে প্রতিপক্ষকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আগের ম্যাচে ভাল করতে না পারা তাসকিনের জায়গায় একাদশে ঢোকা আবু হায়দার রনি শুরুটা দারুণ করেছিলেন। প্রথম ওভারে এক ওয়াইডে দেন দুই রান।
পরে রানের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন মিরাজ-অপুরা। অন্যদিকে রোহিত শর্মা ও শেখর ধাওয়ান সুযোগ পেলেই ব্যাট চওড়া করা চেষ্টা করেছেন। চেষ্টার বিপরীতে প্রথম সাফল্য আনেন রুবেল হোসেন।
ইনিংসের দশম ওভারে স্লো-ইয়র্কারে ধাওয়ানের (৩৫) স্টাম্প উপড়ে উল্লাসে মাতেন। মিডল স্টাম্পের বল ড্রাইভ করতে যেয়ে থামে বাঁহাতি ওপেনারের ২৭ বলের ইনিংস। ৯.৫ ওভারে ভাঙে ৭০ রানের জুটি।
দেখেশুনে এগোতে থাকা রোহিত পরে সুরেশ রায়নাকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন। বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয় পঞ্চাশ স্পর্শ করতে ৪২ বলে খেলেন তিনি। ইনিংসের শেষ বলে ৮৮তে রানআউট হয়ে থামে তার ৬১ বলে সমান পাঁচটি করে চার-ছক্কার ইনিংস।
রোহিতের সঙ্গে ১০২ রানের জুটি গড়া রায়না ফেরেন ৩০ বলে ৪৭ করে। রুবেলের বলে সৌম্যের হাতে সীমানার কাছে ক্যাচ দিয়েছেন রায়না। নির্ধারিত ওভারে ৩ উইকেটে ১৭৬ রানে থামে ভারত।
৪ ওভারে ২৭ রানে দুই উইকেট নিয়ে সফল বোলার রুবেল। ৪ ওভারে ২৭ রান দুলেও উইকেটের দেখা পাননি নাজমুল অপু। মোস্তফিজ ৩৮ এবং আবু হায়দার ৪ ওভার করে হাত ঘুরিয়ে উইকেটশূন্য।
আগের ম্যাচেই শ্রীলঙ্কার দেয়া ২১৪ তাড়া করে জয়ের টাটকা স্মৃতি নিয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। আত্মবিশ্বাসটা হয়ত ছিল ভারতের বিপক্ষেও। কিন্তু সেটাকে কেবল সাফল্যে রূপান্তর করা যায়নি। তবে সব শেষ হয়ে যায়নি। শেষ ম্যাচে সুযোগ থাকছে হাথুরুর দলকে আরেকবার হারিয়ে শিরোপার মঞ্চে যাওয়ার।