সংবাদপত্রের সঙ্গে ‘সম্পাদকীয়’ শব্দটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। সুদীর্ঘকাল ধরেই সংবাদপত্রের প্রতিটি আইটেম এর সম্পাদকীয় নীতিমালার আলোকে পরিচালিত হয়ে আসছে। আধুনিক সংবাদপত্রে জড়িত প্রত্যেক সংবাদকর্মী তাদের ব্যক্তিগত মতভিন্নতার স্বকীয়তা বজায় রেখে সংশ্লিষ্ট সংবাদ মাধ্যমটির সম্পাদকীয় চরিত্রে আদ্দিষ্ট হয়ে একটি বিশ্বস্ত সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠায় নিবেদিতপ্রাণ থাকেন। এ ধরণের সংবাদপত্রই পাঠকের মনে স্থায়ী আসন লাভ করে। সম্পাদকীয় চরিত্রের বিচ্যুতি ও সংবাদকর্মীদের দলবাজিতায় নিমগ্ন পত্রিকা কালের গহ্বরে অবধারিতভাবে হারিয়ে যায়।
সাধারণত কোনো সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় নীতিমালার সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটে পত্রিকাটির সম্পাদকীয় এবং সম্পাদকীয় নিবন্ধে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত সম্পাদকীয় নিবন্ধগুলো নিয়মিত পাঠকদের কাছে সংশ্লিষ্ট পত্রিকার রাজনৈতিক অবস্থানসহ আর্থ-সামাজিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেয়।
প্রিন্ট মিডিয়ায় সম্পাদকীয় নিবন্ধ অত্যাবশ্যকীয়। যদিও কিছু ট্যাবলয়েড ও আঞ্চলিক পত্রিকায় সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রকাশ করা হয় না। পত্রিকার সব পাঠক যেমন একই রুচি ও একই উচ্চতার হয় না, তাদের পছন্দের জায়গাগুলোও একই হয় না। বহু আয়োজনে সমৃদ্ধ পত্রিকায় একেক ধরণের পাঠকের কাছে একেক ধরণের নিউজ আইটেম পছন্দ।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত মতামতধর্মী উপ-সম্পাদকীয় এবং সম্পাদকীয়গুলোর পাঠক সাধারণত একটু আলাদা। এরা চিন্তা চেতনা সমাজ সচেতনতা ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভংগি পোষণ ও তার চর্চায় সাধারণ পাঠকের মতো নয়। স্বাভাবিক কারণেই এই শ্রেণীর পাঠকের কাছে প্রথম পছন্দ থাকে সম্পাদকীয় ও উপ-সম্পাদকীয় নিবন্ধ।
ইদানিং টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে ‘উপ-সম্পাদকীয়’ ব্যানারে টকশো অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। তবে, একটা পার্থক্য হলো, যে কথা একজন লেখক তার উপ-সম্পাদকীয়তে লিখবেন না তিনি টক-শোতে অবলীলায় তা বলে দেন। তবে, সংবাদ মাধ্যমে সম্পাদকীয় নিবন্ধ কিংবা অনুষ্ঠান যাই হোক তার গুরুত্ব যে অস্বীকার করা যায় না, টকশো অনুষ্ঠানই তার প্রমাণ। বলাবাহুল্য, কিছু সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও এ ধরণের অনুষ্ঠানের দর্শক ও জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সাম্প্রতিককালে অনলাইন পত্রিকার সংখ্যা যেমন বাড়ছে, বাড়ছে তার পাঠক সংখ্যাও। প্রতিষ্ঠিত সংবাদপত্রগুলো তাদের প্রিন্ট ভার্সনের পাশাপাশি অনলাইন ভার্সন চালু করছে। টেলিভিশন মিডিয়াও তাই। হিসাব করলে দেখা যাবে, সংবাদপত্রের মোট পাঠকের বেশিরভাগ অনলাইনে। অনলাইন পত্রিকাগুলোর ক্রমবর্ধমান পাঠকপ্রিয়তা প্রিন্ট মিডিয়ার জন্য শিগগিরই বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে অনুমান করা যায়। সংবাদপত্র তথা নিউজ মিডিয়া নিয়ে যারা ভাবেন, গবেষণা করেন তারা এই ‘ভবিষ্যতবাণী’ স্বীকার করবেন নিশ্চয়ই।
দ্রুত পরিবর্তনশীল বাস্তবতায় সংবাদ দ্রুত পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ায় অনলাইন পত্রিকাগুলো অপ্রতিদ্বন্দ্বী। বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাঠকের রুচি অনুযায়ী তাদের স্পেস সাজাচ্ছে। এখানেও তীব্র প্রতিযোগিতা লক্ষণীয়। একসময় আমি সংবাদপত্রের নিয়মিত পাঠক ছিলাম। বলতে গেলে প্রতিদিনকার নির্দিষ্ট পত্রিকাটি পড়া ছাড়া আমার দুপুরের খাবার হজম হতো না। তবে এখন তার অনেকাংশে বিচ্যুতি ঘটেছে। অনলাইন পত্রিকাগুলোই এখন আমার কাছে মূল ভরসা। ইতিমধ্যে চ্যানেল আইসহ কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায় মাঝে মধ্যে লেখালেখির কারণে অনলাইন পত্রিকার প্রতি আমার ব্যক্তিগত আগ্রহ ও আকর্ষণ বাড়তে থাকে। কিন্তু, বলতে দ্বিধা নেই, অনলাইন পত্রিকাগুলোর নিত্য নতুন অনেক আইটেমের মাঝেও আমার কাছে কিসের যেনো একটা অভাব অনুভূত হচ্ছিল।
যেহেতু ছাপা সংবাদপত্রে আমার প্রথম পছন্দ ছিল সম্পাদকীয় এবং উপ-সম্পাদকীয় নিবন্ধ, অনলাইন পত্রিকাগুলোতে আমি সম্পাদকীয় নিবন্ধের অভাববোধ করছিলাম। প্রায়ই লেখালেখির সুবাদে এ বিষয়টি যুক্ত করার জন্য আমি চ্যানেল আই অনলাইনের সম্পাদক শ্রদ্ধেয় জাহিদ নেওয়াজ খান জুয়েল ভাই’র কাছে একরকম ‘আবদার’ করি। তাও বছর খানেক আগে। সম্প্রতি চ্যানেল আই অনলাইন তার দ্বিতীয় সংস্করণে টোটাল মেকআপ গেটআপে দারুণ পরিবর্তন এনেছে। যে কোনো রুচিশীল পাঠকের কাছে চ্যানেল আই অনলাইনের বর্তমান অবয়ব ভালো লাগার কথা। এই সুযোগে আমি আবারো আমার পুরনো প্রস্তাব পেশ করি প্রিয় সম্পাদক বরাবর।
প্রসঙ্গত, এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনায় জুয়েল ভাই এর আগে হ্যাঁ বা না কোনটাই বলেননি। প্রথমবারের মতো দ্বিতীয়বারও তাই।
গতকাল রাত ৯টায় আমার ফেসবুক ইনবক্সে চ্যানেল আই সম্পাদকের একটি লিংক পেলাম। তারপর যা দেখলাম তা একটি স্বপ্ন পুরণের অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা। কৃতজ্ঞতা আর ধন্যবাদ জানানোর আগেই একজন পাঠক হিসেবে নিজের আত্মবিশ্বাস আর মর্যাদাবোধের কথা ভাবলাম। সংবাদপত্র- হোক তা প্রিন্ট কিংবা অনলাইন- পাঠকই তার প্রাণ। প্রাণহীন সবকিছুই নিস্তেজ। নিস্তেজ বস্তুর গুরুত্ব নিয়ে কেউ আলোচনা করেন না।
আমি অতি সাধারণ একজন পাঠক হলেও চ্যানেল আই অনলাইন কর্তৃপক্ষ তার পাঠকের চাহিদা পূরণে সচেষ্টতার যে নজির রেখেছে, আমার বিবেচনায় তার মূল্য অপরিসীম।
ধন্যবাদ চ্যানেল আই অনলাইন। স্বাগতম চ্যানেল আই অনলাইন সম্পাদকীয় নিবন্ধকে। আশা করব, চ্যানেল আই অনলাইন’র প্রতিদিনকার সম্পাদকীয় নিবন্ধ হবে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সময়ের সাহসী, বস্তুনিষ্ঠ ও দিকনির্দেশনার বিশ্বস্ত বাতিঘর।
চ্যানেল আই অনলাইন’র জন্য শুভ কামনা।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)