বৈশ্বিক মহামারী করেনাভাইরাসে প্রভাব বাংলাদেশেও বিদ্যমান। এখন পর্যন্ত দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের আর সুস্থ হয়েছেন ৪৯ জন।
দেশের এমন দুর্যোগে অনেক প্রবাসীরাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সরকারের সমালোচনা করছেন। তাদেরকে সমালোচনা না করে করোনার সময়ে কি করলে দেশের ভালো হবে- সেটা চিন্তা করার পরামর্শ দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের মেয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা কাবেরী মজুমদার।
সম্প্রতি তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে বলেন, ‘‘প্রত্যেকটা মানুষের নিজস্ব দায়বদ্ধতা আছে, কমিটমেন্ট আছে। প্রথমত তার নিজ, তারপর নিজ নিজ পরিবার, সমাজ, সবশেষে নিজের দেশের কাছে!! দেশের এ কঠিন সময়ে আমাদের কিছু বন্ধু বিশেষ করে কিছু প্রবাসী চিন্তাশীল বন্ধু যারা দেশকে অনেক ভালোবাসেন, দেশকে নিয়ে অনেক চিন্তা করেন, যাদের অগাধ সময় আছে শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় থেকে তাবাত নিউজ আন্যালাইসিস করে ১৭ কোটি মানুষের এই বাংলাদেশের কয়েকটি নেগেটিভ বিচ্ছিন্ন ঘটনা ধরে গোটা দেশ নিয়ে সবসময় নেগেটিভ মানসিকতা, স্ট্যাটাস, কমেন্ট দিয়ে থাকেন এবং সুযোগ পেলেই সরকার,মন্ত্রী,এম পি, জনপ্রতিনিধিদের ঢালাওভাবে অভিযুক্ত করেন এবং তাদের চোদ্দগুস্টির তুস্টি করেন এবং সুযোগ পেলে তাদের মরণও কামনা করেন।’’
‘‘দেশ নিয়ে অনেক পজিটিভ নিউজ পেয়েও সারাক্ষণ বিভিন্ন নেগেটিভ নিউজ শেয়ার করেন ও বিদেশে বসে দেশের বারোটা বাজানোর কাজে নিয়োজিত আছেন, তাদের বলছি- সিস্টেমেটিক দেশে যেখানে কি না বৃদ্ধ বয়সে শান্তিতে মরতে চেয়েছেন, নতুন প্রজন্মের জন্য সুন্দর ভবিষ্যত চেয়েছেন (চাওয়াটা অমূলক না) আপনারাও সেখানে একই অবস্থায় আছেন!! লকডাউন!!! সিভিলাইজড, স্বল্প জনসংখ্যার দেশের সাথে আপনার ভালোবাসার দেশকে এত তাড়াতাড়ি গুলিয়ে ফেললে চলবে না! আরো একটু সময় দিতে হবে!!
এখনো আমাদের মেহনতি মানুষেরা মাটির সোঁদা গন্ধ নিতে, খোলা হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিতে,খোশ গল্প করতে অভ্যস্ত! কে জানে এতদিনে এই এক মাসে এই নিষ্ঠুর করোনা এই চিরচেনা অভ্যাসগুলোকে এক নিমেষেই থামিয়ে দেবে!! এই সরল মানুষগুলো তার জীবনের করোনা ভয় থেকে এই অভ্যাসগুলোকেই বেশী বিশ্বাস করে!
আপনারা কি জানেন বাংলাদেশের এই দূর্যোগ মুহূর্তে এই সরল সাদা, অশিক্ষিত,অজ্ঞ মানুষগুলোকে সচেতন করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে মাঠ পর্যায়ের প্রত্যেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কর্মচারী, পুলিশ, আর্মি, ডাক্তার, নার্স, ব্যাংকার, ইঞ্জিনিয়ার,শিল্পী, সাংবাদিক,স্বেচ্ছাসেবী , প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা,কর্মচারী, কিভাবে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন?
আর এখন আসি মন্ত্রী ,এম পি,জনপ্রতিনিধি, আপনাদের কি মনে হয় তারা নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন ??? একজন রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হিসেবে নিজেকে সবসময় গর্বিত মনে করি! নিজের চোখে দেখি কিভাবে এই বৈশ্বিক মহামারীতে রাত দিন শুধুমাত্র জনগনের কথা চিন্তা করে,জনগনের জন্য কাজ করে সারাদিন পার করে দেয়া যায়! কোন নিউজ কাভারেজ দেবার জন্য না! কোন প্রশংসা পাবার আশায় না, হ্যাঁ দায়বদ্ধতার জন্য, প্রতিজ্ঞতাবদ্ধতার জন্য , জনগনকে ভালোবাসার জন্য সর্বোপরি মানবিকতার জন্য এইসব মন্ত্রী ,এম পি জনপ্রতিনিধিরা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন!
অনেকেরটা প্রকাশ পাচ্ছে,মানুষকে অনুপ্রানিত করছে অনেকেরটা প্রকাশ পাচ্ছেনা ! কিন্তু সিনারিও সবার জন্য একই! আপনাদের কঠিন সমালোচনাও তাদের থামিয়ে রাখতে পারবেনা! আপনি একটু খেয়াল করে দেখবেন -আপনার পাড়া,প্রতিবেশী,বন্ধু,আত্মীয় স্বজন যাদের কোনদিন কল্পনাও করেননি তাদের অনেকেই যার যার জায়গা থেকে যতটুকু যেভাবে সম্ভব আর্থিক,খাদ্য, পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী ,কিছু না পারলে মুখের সচেতনতামুলক কথা বলে সাহায্য, সহযোগিতা করে যাচ্ছে !
এ যেন এক অন্য রকম বাংলাদেশ ! হ্যাঁ এরকম বাংলাদেশইতো আমরা চেয়েছিলাম! অবশ্য আমাদের জাতিগতবোধ একই জিনের বিধায় আমরা পেয়েছিলাম আমাদের এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ!
‘‘বন্ধুরা, আপনারা দেশকে নিয়ে অনেক ভাবেন, ভালোবাসেন, স্বজনদের নিয়ে চিন্তা করেন ,খুব স্বাভাবিক! কিন্তু আমরা যারা দেশে থাকি, আপনাদের কাছে অনেক আশা -প্রত্যাশা করি, এই মহাদূর্যোগে দেশ কি করছে এই সমালোচনা করার থেকে দেশে কি করলে ভালো হয় ,অন্য দেশে কি ব্যবস্থা নিয়েছে যা আমাদের দেশে নিলে আমরা সুফল পাবো অথবা সরকার আরো কি ব্যবস্থা নিলে মহামারীকে মোকাবিলা করতে পারবে এরকম মূল্যবান উপদেশ দেশের জন্য মঙ্গল হবে! আমরা সবাই যার যার জায়গা থেকে আরেকটু সহনশীল হয়ে ধৈর্য্যের সাথে এই করোনা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। বিচ্ছিন্ন ঘটনা তো থাকবেই,তার শাস্তি তারা পাবেই, কথায় আছে পাপ বাপকেও ছাড়েনা!!
আসুন শুধু স্যোশাল মিডিয়ায় এখন দেশ , সরকার, আওয়ামী লীগ,বিএনপি,বাম,জামাতি নিয়ে সমালোচনার
ঝড় তুলে আপনার মেধাকে প্রমান না করে ,দেশের স্বার্থে ভালো জ্ঞান,উপদেশ,আইডিয়া দিয়ে মেধার যথাযথ প্রয়োগ ঘটাই! বেঁচে থাকলে প্রমান দেখানোর সুযোগ আবার নিশ্চয়ই পাবেন।
আমরা যারা দেশে আছি ও যাদের সুযোগ আছে, কিন্তু এখনও শুধু কে কি করছে এই আপডেট দেয়া বা নেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ আছি, তারা সবাই আজ একসাথে যারা সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর দিকে এগিয়ে এসেছে তাদের যেভাবে যতটুকু পারি সহযোগিতা করি; অন্তত তাদের কাজগুলোকে উৎসাহিত করি!
জয় আসবেই!!’’