‘ওয়ান ম্যান শো’ বুঝি একেই বলে! ২৫৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামা উইন্ডিজ ওপেনার শাই হোপ একাই গন্তব্যে নিয়ে গেলেন দলকে। চেয়ে চেয়ে দেখলেন মিরপুরে আসা প্রায় ২০ হাজার দর্শক। শুরু থেকে শেষ, পুরো ম্যাচটাই দুলল পেন্ডুলামের কাটার মতো। শেষ পর্যন্ত হোপের ১৪৪ বলে ১৪৬ রানের অপরাজিত ইনিংসের কাছে ম্যাচ হাতছাড়া হল মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার দলের।
১২টি চার ও তিন ছক্কায় সাজানো এ ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়াসেরা ইনিংসে উইন্ডিজ জিতেছে ৪ উইকেটে। প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেটের সহজ জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে কষ্টার্জিত জয় পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে এখন ১-১ সমতায়। শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে হবে শিরোপার ফয়সালা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ-২৫৫/৭ (৫০ ওভার), উইন্ডিজ-২৫৬/৬ (৪৯.৪ ওভার)
২৫৬ রানের লক্ষ্য ৬ উইকেট হারিয়ে ৪৯.২ ওভারে টপকে যায় উইন্ডিজ। দুইবার জীবন পাওয়া কিমো পল অপরাজিত থাকেন ১৮ রান করে।
কাইরেন পাওয়েলের জায়গায় একাদশে আসা চন্দরপল হেমরাজ (৩) সাজঘরে ফেরেন দ্বিতীয় ওভারেই। মেহেদী হাসান মিরাজ নিজের প্রথম ওভারেই এ বাঁহাতিকে করেন এলবিডব্লিউ। শুরুতে সাফল্য পেলেও ক্যারিবীয়দের দ্বিতীয় উইকেট পেতে ঘাম ঝরাতে হয় টাইগার বোলারদের।
হোপ ও ড্যারেন ব্রাভো মিলে গড়েন ৬৫ রানের জুটি। ব্রাভোকে বোল্ড করে ব্রেক-থ্রু আনেন রুবেল হোসেন। অফস্টাম্পের বাইরে টানা বল করে যাচ্ছিলেন এ পেসার। ডেলিভারির আগেই ব্রাভো শাফল করে অফসাইডে খেলতে উদ্যোগী হলে রুবেল বল করেন লেগস্টাম্প বরাবর। ৪৩ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ২৭ রান করে সাজঘরে ফেরেন এ বাঁহাতি। ভাঙে প্রতিরোধ।
ক্যারিবীয়দের তৃতীয় উইকেট জুটি অস্বস্তিতে ফেলে বাংলাদেশকে। মারলন স্যামুয়েলসকে নিয়ে দলীয় শতরান পার করেন হোপ। জুটি ভাঙেন মোস্তাফিজুর রহমান। ইনিংসের ৩০তম ওভারে একের পর এক কাটারে বিপর্যস্ত করেন স্যামুয়েলসকে। ওভারের শেষ বলে ব্যাট ছুঁইয়ে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান সাজঘরে। ভাঙে ৬২ রানের জুটি।
বাংলাদেশ সফরে উইন্ডিজের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান শিমরন হেটমায়ার ফিরে যেতে পারতেন শুরুতেই। রুবেল হোসেনের বলে স্কয়ারলেগে সহজ ক্যাচ ছাড়েন ইমরুল কায়েস। হাত পিছলে বল লাগে ইমরুলের পাঁজরে। চলে যান মাঠের বাইরে। পরে আর ফিল্ডিংয়ে নামতে পারেননি।
সেই রুবেলকেই উইকেট দিয়ে ফেরেন হেটয়ামার। তবে যোগ করেন আরও ১৩ রান। ততক্ষণে দেড়শ পেরিয়ে (১৫৫) গেছে উইন্ডিজ। ১০ বলে এ বাঁহাতির ১৪ রানের ইনিংসে ছিল একটি ছয়ের মার।
উইন্ডিজের আর ২ রান যোগ হতেই মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা হানেন তার প্রথম আঘাত। ক্যারিবীয় অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েলকে (১) সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান সাজঘরে।
১৫৭ রানে ৫ উইকেট ফেলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা যাচ্ছিল না। কেননা হোপ গলার কাটা হয়ে একটু একটু করে আগাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির পথে।
হোপের সঙ্গে জুটি গড়েন রোস্টন চেজ। ব্যক্তিগত ৪ রানের মাথায় রানআউট থেকে বাঁচেন এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান। রুবেলের থ্রো গ্লাভসে আটকাতে পারেননি মুশফিক। তবে ফিরে যান কিছুক্ষণ পরই ৯ রান করে, মোস্তাফিজের বলে মিডঅনে তামিম ইকবালের হাতে ক্যাচ দেন। ৬ উইকেটে উইন্ডিজের সংগ্রহ তখন ১৮৫। ক্যারিবীয়দের দরকার পড়ে ৬৬ বলে ৭১ রান, তাতে ৪ উইকেট।
৬ রানে জীবন পান কিমো পল। ৪২ বলে তখন ৫০ রান দরকার উইন্ডিজের। মিরাজের বলে মিড উইকেট থেকে অনেকটা সামনে দৌড়ে এসে ডাইভে বল হাতে পড়লেও আটকাকে পারেননি নাজমুল ইসলাম অপু। প্রথম ওয়াডেতে এমন একটি ক্যাচই তালুবন্দী করেছিলেন তামিম।
ক্যারিবীয়রা সাবধানে ব্যাট চালানোয় ৪ ওভারে দরকার হয় ৩৫ রান। পরের ওভারে মোস্তাফিজ মাত্র ৩ রান দিলে শেষ ১৮ বলে দরকার হয় ৩২ রান, আর শেষ ২ ওভারে ২২। ক্রমেই কঠিন হতে থাকা সমীকরণ মিলিয়ে ফেলে উইন্ডিজ। ৪৯তম ওভারে ১৬ রান দিয়ে বসেন ফিজ। শেষ ৬ বলে ৬ রানের সহজ সমীকরণ যখন সামনে, বোলিংয়ে আসেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৪ বলেই ৬ রান তুলে মাঠ ছাড়ে উইন্ডিজ।
আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নড়বড়ে শুরুর পর বাংলাদেশ পায় দুর্দান্ত এক জুটি। তামিম-মুশফিকের ব্যাটে বাংলাদেশ পায় বড় সংগ্রহের ভিত। তারা পরপর সাজঘরে ফিরলে হাল ধরেন সাকিব আল হাসান। শেষদিকে নীচের সারির ব্যাটসম্যানরা প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে ব্যর্থ হলে ৩ উইকেট হাতে রেখেও ২৫৫-এর বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ ৫৩ বলে আসে ৫৫ রান।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন লিটন দাস। তিনে নামা ইমরুল কায়েস রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরলে চাপ বাড়ে স্বাগতিক ড্রেসিংরুমে। দলের রান তখন ১৪। ওশান টমাসের বলে উইকেটরক্ষক শাই হোপের গ্লাভসে ক্যাচ দেন এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
তামিমের সঙ্গে মুশফিক জুটি বেঁধে পার করেন দলীয় একশ। ৫০ রান করে দেবেন্দ্র বিশুর বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়েন এ বাঁহাতি ওপেনার। ভাঙে ১১৪ রানের জুটি। তামিমের ৬৩ বলের ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও একটি ছয়ের মার।
বড় ইনিংসের পথ তৈরি করে তামিমের পর সাজঘরে ফিরে যান মুশফিকও। টমাসের দ্বিতীয় শিকার হন হোপের হাতেই ক্যাচ দিয়ে। মি. ডিপেন্ডেবলের ৮০ বলে ৬৩ রানের ইনিংসে ছিল ৫টি চার।
১৩২ রানের তিন উইকেট হারানো বাংলাদেশের হাল ধরেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ। চতুর্থ উইকেট জুটির ৫১ রান দলীয় সংগ্রহ নিয়ে যায় দুইশর কাছে। ৫১ বলে ৩ চারে ৩০ রান করে অফস্পিনার রোভম্যান পাওয়েলকে উইকেট দেন এ ডানহাতি রিয়াদ।
সাকিব ফিফটি তুলে নেন ৫৪ বলে। ৪৬ রানে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন এ বাঁহাতি। তবে ওভার স্টেপিংয়ে বলটি নো হওয়ায় বেঁচে যান। সাকিব পরের বলে ছক্কা মেরে তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪০তম ফিফটি। ৬৫ রান করে বোল্ড হন কেমার রোচের বলে। ৬২ বলের ইনিংসে ছিল ৬টি চার, একটি ছক্কা।
৫ রান করে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে বাইরে চলে যাওয়া লিটন ব্যাটিংয়ে ফেরেন ইনিংসের শেষ দিকে। ৩ রান যোগ করে কিমো পলের বলে আউট হন। নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি সাতে নামা সৌম্য সরকার। ৬ রান করে এ বাঁহাতি টমাসের বলে পেরিস্কুপ খেলতে গিয়ে থার্ডম্যানে বিশুর হাতে ধরা পড়েন। মেহেদী হাসান মিরাজ ১০ ও মাশরাফী ৬ রানে অপরাজিত থাকেন।