চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সব সন্দেহ মুছে ফাঁসির পর সাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আহ্বান

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব, অর্থ-বিত্ত আর সঙ্গে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংযোগের কারণে অনেকেরই আশংকা ছিলো মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড হলেও শেষ পর্যন্ত পার পেয়ে যেতে পারেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় তার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।

তার ফাঁসি কার্যকর হওয়া নিয়ে তাই অনেকে সন্দিহান ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এখন তারা বলছেন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে এই যুদ্ধাপরাধী যতো বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছিলেন রাষ্ট্রের উচিত সেগুলো বাজেয়াপ্ত করা, ওই সম্পদ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যাদের প্রয়োজন তাদের জন্য বরাদ্দ করা।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, সন্দেহ ছিলো অনেকের মনে, আবার অনেকে দৃঢ়চিত্তও ছিলো যে আজ হোক বা কাল; তাদের এই অপরাধের বিচার হবেই। বাংলাদেশের সেই স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে।

‘কিন্তু ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধীরা অনেক মানুষকে মেরে ফেলেছে, যারা তাদের পরিবারের একমাত্র অবলম্বন ছিলো। ৭১ পরবর্তী সেই শহীদ পরিবারের কষ্ট আমরা অনেকে দেখেছি। তাদের প্রতিদিনকার রক্তক্ষরণ কতোটা কষ্টদায়ক সেটা তারাই হয়তো টের পাবেন। এমন অনেক শহীদ পরিবার ছিলো যারা টাকার অভাবে খাবার পায়নি ঠিকমতো, সন্তানদের পড়াশোনা করাতে পারেনি। সেই কষ্ট এই রায়ের পর হয়তো খানিকটা হ্রাস হবে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় সাকার অবৈধ সম্পদ যদি যাদের প্রয়োজন তাদেরকে দেওয়া হয়।’

একইরকম কথা বললেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার।

তার মতে, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রাজনৈতিক প্রভাব ও বিদেশী যোগাযোগের ভিত্তির কারণে প্রাপ্য শাস্তি দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করেননি অনেকে। এমনকি এই রায় কার্যকরে অনেক চাপ সইতে হয়েছে সরকারকে। সেসবের কারণে হয়তো খানিকটা দীর্ঘসূত্রিতা হয়েছে।

‘কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে তার প্রাপ্য শাস্তি তাদের আমরা বুঝিয়ে দিতে পেরেছি সেটা অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার।’

সাংবাদিক প্রভাষ আমিন বলেন, অপরাধ যে কাউকেই ছাড়ে না, তা আরও একবার প্রমাণিত হলো। প্রতিবছর এই দেশে ১৬ ডিসেম্বর আসে উৎসব হয়ে। আর তার ঠিক দুই দিন আগে ১৪ ডিসেম্বরে চোখের জল ফেলে দেশের মানুষ। এবার ১৬ ডিসেম্বরের প্রাক্কালে সেই অপরাধের বিচার অবশ্যই সবাইকে স্বস্তি দেবে। 

৭৫’র পরে বাংলাদেশের যে উল্টোযাত্রা সেখানে এই বিচার নতুন মোড় হিসেবে কাজ করবে বলেও মনে করছেন অনেকে। তাদের মতে, এই বিচার এখন শুধু দেশেই নয়; দেশের বাইরেও অনেক বিচারের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় হয়ে থাকা উচিত।

শাহরিয়ার কবির বলেন, শুধু জাতীয় পর্যায়ে নয়; এসব যুদ্ধাপরাধীর অনেক উত্তরসূরী জেলা পর্যায়ে অনেক অপরাধ করেছে। সেসবের শাস্তিও হওয়া উচিত দ্রুত। এসব অপরাধী একসময় ক্ষমতায় ছিলো। তখন অন্যায় অবিচার এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা আত্নসাৎ করে বিত্ত-বৈভবের পাহাড় গড়ে তুলেছে। এসব যুদ্ধাপরাধীর শাস্তি হওয়াতে হয়তো শহীদ পরিবারের মনে খানিকটা শান্তি আসবে কিন্তু জীবনযাত্রায়তো আর পরিবর্তন আসবে না। তাই এই যুদ্ধাপরাধী বা এই সব প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে শহীদ পরিবারের ভাতার ব্যবস্থা করা উচিত।

ইমরান এইচ সরকার বলেন, এখন আমাদের সামনের দিকেই চোখ রাখতে হবে। রায় কার্যকরের ক্ষেত্রে এবারের শক্তি ভবিষ্যতের আরো অনেক বিচারকে ত্বরান্বিত করবে। সব মিলিয়ে একটি মানবিক ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় রাখতে হবে আমাদের। সবার মনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আরো বেশি ছড়িয়ে দিতে হবে।  

প্রভাষ আমিন বলেন, অনেকে বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুললেও আমরা বলতে পারি এই প্রথম একটি দেশে যুদ্ধাপরাধীর বিচার সমস্ত নিয়ম মেনে হয়েছে। যেখানে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনেরও সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এই বিচার দেশে এবং দেশের বাইরে অবশ্যই অনুসরণীয় হতে পারে।

তবে এই বিচারের ধারাবাহিকতা রক্ষার পাশাপাশি এমন সুষ্ঠু বিচারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলেও চাওয়া সবার।