জীবনের সকল ধরনের স্বার্থপরতা ত্যাগ করে সিনেমা নির্মাণের মতো যুদ্ধে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন তারেক মাসুদ। নির্মাণ করেছিলেন মাটির ময়না, অন্তর্যাত্রা ও রানওয়ের মতো সিনেমা। হয়ে উঠছিলেন নির্মাতাদেরও নির্মাতা! কিন্তু ২০১১ সালে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা সব উলটপালট করে দেয়। মৃত্যু দেশের প্রভাববিস্তারকারি এই নির্মাতার।
তাঁর মৃত্যুর নয় বছর পূর্ণ হল বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট)। বাংলা চলচ্চিত্রের এই শোকাবহ দিনটিকে স্মরণ করতে দুই দিনব্যাপী যৌথভাবে স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি এবং তারেক মাসুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট।
ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির ফেসবুকে বুধবার রাতে স্মৃতিতর্পণে অংশগ্রহণ করেন তারেক মাসুদের স্ত্রী ও চলচ্চিত্রকার ক্যাথরিন মাসুদ, চলচ্চিত্র গবেষক অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, মানবাধিকার কর্মী আসিফ মুনীর, চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রসূন রহমান এবং ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি বেলায়াত হোসেন মামুন।
লাইভ অনুষ্ঠানে তারেক মাসুদ ও চলচ্চিত্র নিয়ে স্বপ্নের কথা বলেন ক্যাথরিন। জানালেন, বরাবরই তারেক সাধারণ দর্শকের কথা ভাবতেন। সৃজনশীল কর্মের মধ্য দিয়েই তিনি জনমানুষের কাছে পৌঁছাতে চেয়েছেন। তাই নতুন সিনেমা নির্মাণ করেই দেশব্যাপী ছুটে বেড়িয়েছেন।
ক্যাথরিন তার বক্তব্যে বলেন, ‘আর্টফিল্ম’ নিয়ে একটা প্রচলিত ধারণা আছে যে, সাধারণ মানুষ সেটা বুঝতে পারবে না। এই ধারার কাজ সাধারণের জন্য না। কিন্তু তারেক মাসুদ সেই ধারা ভাঙতে চেয়েছিলেন। তিনি মনে করতেন, আর্টিস্টিক একটি বিষয় তো সিনেমাতেই থাকবেই, সৃজনশীল বিষয় তো থাকবেই। সেই সাথে সিনেমাটি মানুষের কাছে জনপ্রিয়তাও পাবে। এটাই ছিলো তিার সিনেমা ভাবনা। এটা তার স্বপ্ন ছিলো, এবং এই ক্ষেত্রে তার অবদানও ছিলো।
তার সিনেমা নিয়ে গবেষণা হবে, সিনেমার ছাত্রছাত্রীরা তাকে পাঠ করবে- এটা তারেকের ভাবনা ছিলো না বলেও এসময় মন্তব্য করেন ক্যাথরিন। বলেন, বরং তিনি সিনেমাগুলো নির্মাণ করে সাধারণ দর্শকের কাছে ছুটে যাওয়ারই স্বপ্ন দেখতেন। এজন্য তাকে সিনেমার ফেরীওয়ালাও বলা হতো। শেষ দিকে তাই তারেক আরেকটি আন্দোলন চালিয়েছেন, সিনেমা হল বাঁচাও আন্দোলন। তিনি মনে করতেন, শুধু সিনেমা তৈরী করেই কী লাভ, যদি দেখানোর সুযোগ না থাকে! তাই তিনি সিনেমা হল বাঁচানোর আন্দোলন করে গেছেন। তিনি চাইতেন, সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে সিনেমা পৌঁছে দিতে। আর এজন্য সিনেমা হলের বিকল্প নেই।
মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মৃত্যু হয় তারেক মাসুদের। একই দিনে দুর্ঘটনায় তার সঙ্গে ছিলেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীর। তাদের দুইজন ছাড়াও আরো ৩ জনের মৃত্যু হয়। মৃত্যুদিনে তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ।