মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের পক্ষে সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জঙ্গিবাদের উত্থান থেকে শুরু করে শাহবাগ নিয়ে পরবর্তী সময়ে সৃষ্ট বিতর্কসহ সব প্রশ্নের উত্তরে চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার।
এর আগে ইমরান তার ফেসবুক পেজে চলমান আন্দোলন সম্পর্কে মতামত জানতে চেয়ে একটি পোস্ট দেন। তাতে সেখানে সরাসরিসহ ইমেইল অ্যাড্রেস দিয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়। এরপরই প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে থাকেন ইমরান।
মাহমুদুল হক নামে একজন প্রশ্ন করেছিলেন, আপনিতো যুদ্ধাপরাধীর বিচার চান। কিন্তু কখনও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশারফ হোসেনের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে কিছু বলেন না। উত্তরে ইমরান বলেন, আমরা যারা শাহবাগে আন্দোলন করেছি, সব সময় সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার চেয়ে এসেছি। কিন্তু যুদ্ধাপরাধী চিহ্নিত করার ভার আমরা নেইনি। তার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রয়েছে।
ব্লগার হত্যার বিচার চেয়ে বরাবরই সোচ্চার ইমরান এইচ সরকারকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম থেকে শুরু করে বিভিন্ন নামে-বেনামে জঙ্গি সংগঠনের পক্ষ থেকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়ে থাকে। এমনকি তার এই পোস্টেও কেউ কেউ তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনারা জানেন বিভিন্ন সময়ে আমাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমি কিছুদিন আগে থানায় জিডিও করেছি। হুমকিদাতাদের প্রকৃত পরিচয় খুঁজে বের করতে ইতিমধ্যে গোয়েন্দারা আমার সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন। তবে যতো হুমকিই আসুক না কেনো আমি সব সময় মানুষের পাশে আছি। বঞ্চিত মানুষের পক্ষে কথা বলে যাবো।
সম্প্রতি সরকার বাসভাড়া বাড়ালে রাস্তায় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই ইস্যুতে ইমরান নিশ্চুপ কেনো? এমন প্রশ্নের জবাবে ইমরান বলেন, আসলে আমার এই ইস্যুতে কথা বলা উচিত ছিলো। তাছাড়া, আমি কোনো বিষয়ে কথা বললেই কিছু হবে তা ঠিক না। কেননা, আমিও অন্য সকলের মতো সাধারণ মানুষ, এমপিও না-মন্ত্রীও না।
‘তবে বিষয়টা আমি বেশ কিছুদিন থেকেই লক্ষ্য করছি। বিশ্ববাজারে যখন তেলের দাম কমছে তখন এই ভাড়া বাড়ানো কেনো? এর পুরো চাপটা পড়বে নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তের ওপর। আমি, নিজে কিছু তথ্য সংগ্রহের কাজ করছি। কিন্তু আপনি দেখেন প্রতি কিলোমিটারে কতো টাকা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। আপনি বাসে উঠলে দেখবেন দুই কিলোমিটারেই বাড়তি পাঁচ টাকা আদায় করা হচ্ছে। প্রথম দিকে সরকারের পক্ষ থেকে এটা নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও আদতে কোন ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি।’
শাহবাগ নিয়ে বিভিন্ন সময়ের বিতর্কও চলে এসেছে ফলোয়ারদের কমেন্টে। ফ্রি বিরিয়ানি থেকে শুরু করে তথাকথিত যৌন কেলেঙ্কারি ও মাদকসহ বিব্রতকর সব প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন ইমরান।
চ্যানেল আই অনলাইনকে ইমরান বলেন, শাহবাগের আন্দোলন ছিলো দেশের ইতিহাসে সবথেকে বড় গণতান্ত্রিক আন্দোলন। টানা সতেরোদিন আমরা শাহবাগে অবস্থান করেছি। ২২টি টিভি চ্যানেল সব সময় লাইভ করেছে। তখন তো কেউ অভিযোগ তোলেনি। এসব আসলে স্বাধীনতাবিরোধীদের একটা অপপ্রচার। সবাই সব সময় সব কিছু দেখেছে। কিছু ঘটলে তখন সবাই জানতে পারতো। পরবর্তী সময়ে কেনো অভিযোগ গুলো আসলো?
ইমরান এইচ সরকারের ধর্ম বিশ্বাস নিয়েও ছিলো প্রশ্ন। ইমরান বলেন, আমি আসলে কখনও ধর্ম নিয়ে কিছু লিখিনি। তবে ব্লগার হত্যার বিরোধিতা করেছি বলেই জঙ্গি গোষ্ঠীর টার্গেটে পরিণত হয়েছি। সে ব্লগারই হোক আর যে কোনো সাধারণ মানুষ হোক, কোনো কিলিং, কোনো বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আমি কখনও সমর্থন করি না। আমি চাই, দেশের সকল মানুষ স্বাধীনভাবে যার যার ধর্ম পালন করুক। তবে, আমার দৃষ্টিতে ধর্মীয় বিদ্বেষটা অপরাধ।
সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব দেশেই চাকুরিজীবীদের বেতন বাড়ে। এটা স্বাভাবিক। তবে আমাদের এখানে যেটা হয়েছে সেটা ঠিক হয়নি। এই বেতন কাঠামোতে যে ধনী ছিলো সে আরও ধনী হয়েছে। আর গরীব আরও গরীব হয়েছে। এতোটা বেতন বৈষম্য করা ঠিক হয়নি।
‘আবার আমাদের দেশের যুব সমাজের বেশির ভাগই বেকার। সে ক্ষেত্রে বেতন কম বাড়িয়ে বাড়তি কিছু কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যেতো। অন্যদিকে সরকারি চাকুরিতে যেমন বেতন বেড়েছে বেসরকারিতে বাড়েনি। এর একটা প্রভাব বাজারে পড়বে। বাজারে নৈরাজ্য দেখা দেবে।’
ভারতীয় টিভি চ্যানেল বাংলাদেশে বন্ধ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি বলবো না একেবারে ভারতীয় সব চ্যানেল আমাদের এখানে বন্ধ করে দেয়া হোক। তবে আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন, হিন্দি সিনেমা কলকাতায় প্রদর্শন করতে হলে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ কর দিতে হয়। কিন্তু তারা আমাদের এখানে অবাধে ব্যবসা করছে। এটা আমাদের মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রির জন্য ক্ষতিকর। তাই এখনই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসা দরকার।
নানা প্রশ্নের উত্তরে ইমরান বলেছেন, যতো প্রতিকূলতা থাকুক না কেনো, ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য তিনি কথা বলেই যাবেন। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে রাস্তায় গিয়েছি। অন্যায় অপরাধের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আমাদের দেশর তরুণদের মধ্যেও এ শক্তিটা জাগিয়ে তুলতে চাই।
তবে আপাতত: কোনো কর্মসূচি নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। ইমরান বলেন, সাকা-মুজাহিদের পর্যালোচনা রায়ের জন্য অপেক্ষা করছি, সরকার যদি কালক্ষেপণের চেষ্টা করে তাহলে রাস্তায় নামার জন্য আমাদের সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে।