করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় লকডাউনে গোটা দেশ। জরুরী প্রয়োজন বিবেচনায় রেখে কিছু কিছু জিনিস খোলা রাখা হলেও সরকারি ঘোষণা না আসায় বন্ধ রাখা হয়নি দেশের সিনেমা হল। তবে সিনেমা হল খোলা রাখলেও দর্শক না আসায় ‘অঘোষিতভাবে’ দেশের অধিকাংশ প্রেক্ষাগৃই বন্ধ রেখেছে হল কর্তৃপক্ষ।
রাজধানী ও আশাপাশের বেশকিছু সিনেমা হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করলে তারা চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, লক ডাউন ঘোষণার পর থেকে শো-গুলোতে দর্শকদের উপস্থিতি শুন্যের কোটায়। তাই সিনেমা হল বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন।
হল মালিকদের কথা, দর্শক না এলে সিনেমা খুলে কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং শুধু শুধু খরচ বাড়ছে। উপরি লোকসান গুনতে হচ্ছে। ক’দিন পরেই রমজান মাস। তখন এমনিতেই হল বন্ধ থাকে। তাই অনেক সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ ভাবছেন করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আসন্ন ঈদে একেবারে নতুন সিনেমা প্রদর্শনের মাধ্যমে হল খুলবেন।
দেশের ঐতিহ্যবাহী মধুমিতা সিনেমা দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ। হলের মালিক ইফতেখার নওশাদ বলেন, করোনার ভয়ে কেউ হলে আসতে চায় না। এরপরেও ভালো কোনো সিনেমা রিলিজ হচ্ছে না। ঈদে হল খোলার অপেক্ষায় আছি যদি করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়। সবারই জীবনের মায়া রয়েছে। এতে করে হলের স্টাফরাও ডিউটি করতে চাইছে না। তাই মধুমিতা বন্ধ রেখেছি।
লকডাউনের আগে পরপর দুই সপ্তাহ ‘স্ফুলিঙ্গ’ এবং ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’ দুটি সিনেমা চালিয়ে লাভ হয়নি বলে জানিয়েছেন আনন্দ ছন্দ সিনেমা হলের ম্যানেজার শামসুদ্দিন মোহাম্মদ। তার কথা, দুটি সিনেমা বাধ্য হয়ে চালিয়েছি। কোনো দর্শক দেখেনি। দৈনিক সিনেমা হলের খরচ ১৫ হাজার টাকা। এটাও ওঠেনি। লকডাউনের পর সিনেমা নেই বলে হল বাধ্য হয়ে বন্ধ করেছি।
তিনি বলেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে সিনেমা হল সংস্কৃতি জাদুঘরে জায়গা পাবে। বাস্তবে অস্তিত্ব থাকবে না।
নারায়ণগঞ্জের নিউ গুলশান সিনেমা হলের সিনিয়র শো অপারেটর আবদুর রহমান জানান, প্রদর্শক সমিতি থেকে সিনেমা হল বন্ধের কথা বলা হয়নি। তবে গত শুক্রবার সন্ধ্যার শোতেই বন্ধ করে দিতে হয় সিনেমা হল। জেলা তথ্য অফিস ও সিটি কর্পোরেশন থেকে বলা হয় লকডাউনে সিনেমা বন্ধ করতে বলা হয়েছে। স্থানীয় নিউ মেট্রো সিনেমা হলটিও বন্ধ রাখা হয়েছে।
সিনেমা হল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ৫০ টির বেশি সিনেমা হল খোলা ছিল। বেশিরভাগই বন্ধ। প্রত্যেক সিনেমা হলের মালিকরা নিজেদের সিদ্ধান্তে বন্ধ রেখেছেন। এছাড়া বিভিন্ন জেলার ডিসি মহোদয়ের নির্দেশে রংপুর, বরিশাল, নরসিংদী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার সিনেমা হল বন্ধ রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে শুধু সিঙ্গেল স্ক্রিন নয়, রাজধানীর সবচেয়ে আধুনিক মাল্টিপ্লেক্স স্টার সিনেপ্লেক্সও লকডাউনের শুরুর দিন থেকেই বন্ধু রেখেছে তাদের সবগুলো শাখা।
তবে হল মালিকদের মধ্যে অধিকাংশরা আশায় আছেন ঈদের ছবির জন্য। বেশির ভাগের মত, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আসন্ন ঈদে একেবারে নতুন সিনেমা প্রদর্শনের মাধ্যমে হল খুলবেন। কেননা আসছে ঈদে মুক্তির অপেক্ষায় আছে বেশকিছু বিগ বাজেটের সিনেমা।
তবে এটা নিয়েও আছে অনিশ্চয়তা। কারণ বর্তমানে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণে আসবে না। ফলে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা ছাড়া উপায় নেই। আর তার উপরই দেশের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোর মতো সিনেমা হল ও চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।