চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সবার এতো সমর্থন বিফলে যায়নি: পরীমনি

শারিরীক নির্যাতন, ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছেন পরীমনি, এমন অভিযোগই তার। পাঁচদিন আগে তিনি এসবের কারণে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন বলেও দাবী করেছেন এই চিত্রনায়িকা। এখনও সেই ট্রমা পুরোপুরি কাটেনি। তাই তার বনানীর বাসায় ২৪ ঘণ্টা পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। সোমবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে গিয়ে দেখা গেল, গেটের সামনে কয়েকজন পুলিশ পাহারা দিচ্ছেন। বাসার ভেতরে ঢুকে পাওয়া গেল আলোচিত পরীকে। সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে কথা বললেন চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে…

আপনার অভিযোগের প্রেক্ষিতে দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কেমন লাগছে?
গতকাল পর্যন্ত আমি মরা মানুষের মতো ছিলাম। যখন টিভিতে দেখলাম দোষীরা গ্রেপ্তার হয়েছে তখনই নিজে থেকে দাঁড়ানোর শক্তি পেয়েছি। আজ নিজেকে অনেক সাহসী মনে হচ্ছে। সবার এতো সমর্থন বিফলে যায়নি। গতকাল আমাকে কাঁদতে দেখেছেন, কিন্তু আজ আমি একটু একটু হাসছি।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে এতো দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে, এমনটা ভেবেছিলেন?
না আমি কখনো এটা প্রত্যাশা করিনি। শিল্পী সমিতিতে গিয়েছিলাম, কিন্তু কোনো উপকার পাইনি। তখন আমি অভিভাবক হিসেবে খুঁজেও কাউকে পাইনি। চারদিনে আমার জীবনে যা ঘটেছে আগে কখনো ঘটেনি। ঘটনাটির পর শুরু থেকে যাদের কাছে গিয়েছি তারা প্রত্যেকে আমাকে থামিয়ে দিয়েছেন। এরপর খুব ইনসিকিউরড অনুভব করি। সেইসময় মনে হয়, আমি যদি মরে যাই তবে দোষীদের নিয়ে মরি। একা কেন মরবো? যখনই বিষয়টি পাবলিক করি (ফেসবুক পোস্ট) তারপরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে এটা আমার প্রত্যাশার বাইরে ছিল।

শিল্পী সমিতি বিবৃতি বলেছে, সংগঠনটি আপনার পাশে ছিল…
মিডিয়ার আগে শিল্পী সমিতিকে আমি জানিয়েছি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান প্রথমে আশ্বাস দিয়েছিল। ভরসা পেয়েছিলাম। দু’দিন চলে যাওয়ায় আমাকে একবার ফোন করে খোঁজ নেয়নি। এতে আমি খুবই দুঃখ পেয়েছি। হতাশ হয়েছি। উপায় না পেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেই। এখন যদি সমিতি থেকে বলে আমার পাশে আছে, তাহলে থাকুক। তবে আমি যাদের আপন ভাবতাম, কিছু হলেই যাদের বাসা পর্যন্ত যেতাম তাদের কাউকে পাশে পাইনি।

এই যে এখন আপনি সাহস পাচ্ছেন, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হলো। এ বিষয়টা কীভাবে দেখছেন?
এই ক্রেডিটটা মিডিয়া কর্মীদের। আমার সাংবাদিক ভাইদের। তাদের বিকল্প ছিল না। এছাড়া প্রশাসন দেখিয়ে দিয়েছে যে, আমাদের আইন কতোটা শক্তিশালী। তারা চাইলেই সবকিছু পারে।

কিন্তু অভিযোগ আছে আপনি নিজেই একটা সময় সাংবাদিকদের সাথে দুর্বব্যবহার করেছিলেন…
তারা কখনোই প্রকৃত সাংবাদিক ছিল না। নামে মাত্র ছিল। যদি কারও সাথে দুর্বব্যবহার করে থাকি তাহলে তার সাংবাদিকতার জন্য নয়, সেই ব্যক্তির আচরণের জন্য করেছি। যারা সত্যিকারের সাংবাদিক তারা শুরু থেকে আমাকে সাপোর্ট করেছেন। আমিও তাদের সম্মান দিয়েছি।

পারিবারিক অভিভাবক বলতে আপনার নানা ছাড়া কেউ নেই। তিনি কি বিষয়টি জেনেছেন?
আমার নানার বয়স ১১৩ বছর। আমার সাথে থাকেন। তিনি আমাকে সবচেয়ে বেশি বোঝেন। এই বিষয়টি তাকে জানাতে চাইনি। কিন্তু বাসায় এতো মানুষজন এসেছেন তিনি যেকোনো ভাবে বিষয়টি জেনে গেছেন। অথবা তাকে কেউ ফোনে জানিয়েছে। গতরাতে সবাই চলে যাওয়ার পর তিনি আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন, ‘কী হয়েছে?’ আমি সবকিছু খুলে বলতে পারিনি। তখন শুধু তিনি আমাকে একটি কথাই বলেছেন ‘বি স্ট্রং’। তারপর থেকেই একটু একটু শক্তি পাচ্ছিলাম।

এই ঘটনা নিয়ে ভবিষ্যতে পুনরায় কোনো ঝামেলার আশঙ্কা করছেন?
এই ঘটনার রেশ আজীবন থেকে যাবে। যতদিন না দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হয় আমি শান্তি পাব না। যে অপরাধটা আমার সাথে করেছে এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তির বাস্তবায়ন চাই। সবাই এখন যেমন বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছেন, এটির যদি সর্বোচ্চ শাস্তি হয়। তাহলে ভবিষ্যতে হয়তো আর অন্যদের সাথে এমনটি হবে না।

নানার সাথে পরীমনি

বিষয়টি এখন আইনী প্রক্রিয়াধীন। লড়ার জন্য আপনার কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে?
যা যা প্রমাণ ছিল, যথেষ্ট ছিল। আমি সবকিছু জমা দিয়েছি। ওইদিনে সেখানকার সিসি টিভির ফুটেজগুলো আমি খুব চাই। যাতে দ্রুত সংগ্রহ করা হয়। আমাকে গালি দিতে দিতে তারা বের হয়ে গেছে সবগুলোই রেকর্ড আছে। তবে সেখানকার ওয়েটাররা আমাকে খুব সাহায্য করেছে তাদের কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। বারবার লাইট বন্ধ করতে বলা হলেও তারা লাইট বন্ধ না করে সুইচ ধরে দাঁড়িয়েছিল। তারা সাহায্য না করলে হয়তো ওইদিন আমাকে মেরে ফেলতো সেখানে।

আপনি কি মনে করেন সাধারণ মেয়েরা আপনার মতো পরিস্থিতির শিকার হলে লড়াইয়ের সাহস পাবে?
ভুক্তভোগী কেন সুইসাইড করে আমি কয়েকদিনে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। নায়িকা পরীমনি না হলে আমাকে সুইসাইড করতে বাধ্য করা হতো। যাদের কাছে জানাতে গিয়েছি তারা আমার মান ইজ্জত নিয়ে ভাবতে বলেছেন। কিন্তু আমি না জানালে মান ইজ্জত তাহলে কোনটা? সাধারণ মেয়েদের উদ্দেশে বলবো, অপরিচিত কাউকে বিশ্বাস করা উচিত না। যদি ভিতুদের মত কথা হয়, তাহলে তাই। কারণ আমি নিজেই প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলাম। এমন যদি কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে সত্যটা বলেই মরো। যদি শিকার হয়ে যদি কেউ মরে যায় তাহলে সেই মরে যাওয়াটা কোনো সমাধান নয়। মরে গেলে কোন সমস্যা বা রহস্যের জট খুলে না।