চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সন্তানের সাথে বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন গড়তে বললেন হাইকোর্ট

সম্পর্ক জটিল না করে সন্তানের সাথে বাবা-মাকে বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন গড়তে বললেন হাইকোর্ট।

বাংলাদেশি বাবা-মায়ের কানাডায় জন্ম নেয়া এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে সৃষ্ট উদ্ভুত পরিস্থিতিতে করা রিটের শুনানিতে রোববার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই অভিমত ব্যক্ত করেন।

এসময় বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, ‘আমারও একটি মেয়ে আছে, আমিও মা। আমিও বুঝি…। সন্তান যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হয় তখন তাকে কোন কিছুতে জোর করে বাধ্য করা যাবে না। তাতে আরও বেশি অবাধ্য হবার ঝুকি থাকে। বাবা-মাকে সন্তানের সাথে বন্ধুর মত আচরণ করতে হবে। সম্পর্ক জটিল করা যাবে না। সন্তানের সাথে বাবা-মায়ের বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন গড়তে হবে।’

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আরও বলেন, ‘এখনকার সন্তানদের চিন্তাধারা অন্য রকম। যেটা আমাদের সময়ের মত না। এখন বাচ্চারা আমাদের অনেক কিছু শেখায়। প্রযুক্তিতে তারা এগিয়ে। বাবা-মাকে বিভিন্ন বিষয়ে তারা গাইড করে। এই যে গাইড করা, এটার মধ্যেও কিন্তু এক ধরনের মজা আছে। এটাকে আমাদের অভিভাবকদের সম্মান করতে হবে।’

বাংলাদেশ থেকে কানাডায় চলে যেতে চাওয়া মেয়ের বাবা-মাকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, ‘ওর জন্ম ওখানে (কানাডায়)। ওখানকার ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সে। এখানে তার কোন বন্ধু নাই। এখানে সে তার মত পরিবেশ পায় না। এখানে যদি তার জন্ম হতো তাহলে এখানকার পরিবেশ সে মানিয়ে নিতে পারতো। তাই আমরা বলবো, আপনারা (বাবা-মা) ওর ইচ্ছাটাকে সম্মান দিন। প্রয়োজনে আপনারা গিয়ে ওরসাথে থাকুন। ওর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন। শেষ বয়সে ও-ই আপনাদের লাঠি হবে। ওকে কানাডায় যেতে বাধা দিবেন না। মনে রাখবেন কোনো কিছু বাধ্য করলে তার ফল ভালো হয় না।’

প্রাপ্তবয়স্ক এক তরুণীকে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ না দিয়ে মা-বাবা কর্তৃক বেআইনিভাবে আটকে রাখা ও নাগরিকত্ব থাকার পরেও কানাডায় যেতে না দেয়ার অভিযোগে হাইকোর্টে রিট হয়। মানবাধিকার সংগঠন ‘ব্লাস্ট’ এবং ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্রের’ পক্ষ থেকে করা ওই রিটে বলা হয়, ‘বাংলাদেশি বাবা-মায়ের সন্তান এই তরুণীর জন্ম কানাডায়। প্রাপ্তবয়স্ক এই তরুণী কানাডার একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। প্রায় ১ বছর আগে তরুণীটি তার মা-বাবার সাথে বাংলাদেশে আসেন। এরপর ওই তরুণী কানাডায় ফিরে যেতে চাইলেও তাকে যেতে দেওয়া হয়নি। এছাড়া ওই তরুণীর কাছ থেকে তার মোবাইল নিয়ে নেয়া হয়। একপর্যায়ে ওই তরুণী ল্যান্ড ফোনে ও ইমেইলের মাধ্যে কানাডা সরকার ও হাইকমিশনকে জানান যে সে কানাডায় ফিরতে চান।

এমন প্রেক্ষাপটে গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মুগদা থানায় কানাডিয়ান হাইকমিশনের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পরে হাইকমিশন তরুণীটিকে উদ্ধারে মানবাধিকার ও আইনি সহায়তাকারী সংস্থা ব্লাস্ট এবং আইন ও সালিস কেন্দ্রে যোগাযোগ করলে সংস্থা দুটির পক্ষ থেকে হাইকোর্টে ওই তরূণীকে হাজিরের নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়। সে রিটের শুনানি নিয়ে গত ৬ এপ্রিল হাইকোর্ট মুগদা থানার ওসিকে ১০ এপ্রিল ওই তরুণী ও তার মা-বাবাকে আদালতে নিয়ে আসতে বলেন। সে অনুযায়ী রোববার এদের সবাইকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। প্রথমে আদালত ওই তরুণীর একান্ত উপস্থিতিতে তার বক্তব্য শুনেন। এরপর হাইকোর্ট তার বাবা-মা ও উভয় পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনেন। একপর্যায়ে আদালত তার আদেশে ওই তরুণীকে তার মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগসহ ল্যাপটপ দিতে বলেন। ওই তরুণী কানাডায় যেতে চাইলে তাকে বাধা না দিতে এবং কানাডায় যাওয়ার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে যে সময় সে পর্যন্ত ওই তরুণী তার মা-বাবার সাথেই থাকবে বলে নির্দেশ দেয়া হয়। আর এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামি মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।

সবশেষে হাইকোর্ট উপস্থিত সাংবাদিকদের ওই তরুণী এবং তারা বাবা-মায়ের ছবি ও নাম পরিচয় সংবাদে প্রকাশ না করতে নির্দেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সারা হোসেন ও জেড আই খান পান্না। সাথে ছিলেন আইনজীবী শাহীনুজ্জামান, আয়েশা আক্তার ও রোহানী সিদ্দিকা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। এছাড়া শুনানির সময় আদালতে কানাডিয়ান হাইকমিশনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।