চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সন্তানসম্ভবা পরীকে তসলিমার কটাক্ষ!

মা হতে যাচ্ছেন- সোমবার এমন ঘোষণা দিয়ে আবারও আলোচনায় চিত্রনায়িকা পরীমনি। তার সন্তানের বাবা হচ্ছেন অভিনেতা শরিফুল রাজ। রাজ-পরীর এমন ঘোষণার পর ভক্ত অনুরাগীদের মধ্যে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া।

অনেকেই তাদের এমন আনন্দের খবরে অভিনন্দন জানিয়েছেন, আবার অনেকে হয়েছেন নাখোশ। পরীর সন্তান হওয়ার খবরটি যেন সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিনকেও ব্যথিত করেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেয়া তসলিমার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি অন্তত সেই ইঙ্গিত-ই দিলো।

এরআগে পরীমনির আলোচিত ইস্যুগুলোতে নায়িকার সমর্থনে লিখতে দেখা গেছে তসলিমাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব ভূমিকায় ছিলেন ‘আমার মেয়েবেলা’র এই লেখক।

পরীমনি সন্তানসম্ভবা হওয়ার খবরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেয়া তসলিমার স্ট্যাটাসটিতে ব্যাপক আলোচনা তৈরী করে। তবে মজার ব্যাপার হলো, পরীমনিকে কটাক্ষ করে তসলিমা এমন স্ট্যাটাস দিলেও পুরো স্ট্যাটাসের কোথাও তিনি পরীমনির নাম উল্লেখ করেননি।

স্ট্যাটাসে কী লিখেছেন তসলিমা, তা হুবুহু তুলে ধরা হলো:

সন্তান জন্ম দেওয়ার এত দরকার কেন? মেয়েরা, এমনকী প্রতিষ্ঠিত, সমাজের নানা নিয়ম ভেঙে ফেলা সাহসী মেয়েরাও, তিরিশ পার হলেই সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এই ব্যাকুলতা কতটা নিজের জন্য, কতটা পুরুষতান্ত্রিক রীতিনীতি মানার জন্য? আমি কিন্তু মনে করি নিজের জন্য নয়, মেয়েরা সন্তান জন্ম দিতে চায় সমাজের দশটা লোকের জন্য। বাল্যকাল থেকে শুনে আসা শিখে আসা ‘মাতৃত্বেই নারীজন্মের সার্থকতা’ জাতীয় বাকোয়াজ মস্তিস্কে কিলবিল করে বলেই মনে করে ইচ্ছেটা বুঝি নিজের।

সন্তান জন্ম দেওয়ার ইচ্ছে মানুষের ভেতর আপনাতেই জন্ম নেয় না, জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়াটি প্রাকৃতিকভাবে সম্পন্ন হয়ে যায় না। মানুষ ইচ্ছে করলেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, লাগাম টেনে ধরতে পারে গর্ভধারণের যাবতীয় বিষয়াদির। এখানেই পশুর সঙ্গে মানুষের পার্থক্য। মানুষ ভাবতে পারে, সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সন্তান জন্ম দেওয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে।

যারা মূল্যবান কাজ করছে জীবনে, আমার মনে হয় না তাদের উচিত অহেতুক শিশু জন্ম দিয়ে কাজের সময় নষ্ট করা। লালন-পালনেই তো ব্যয় হয়ে যায় জীবনের অনেকটা সময়। নিজেকে যারা ভালোবাসে না, তারাই হয়তো জীবনকে মূল্যহীন করতে দ্বিধা করে না। আর যারা মনে করে বৃদ্ধ বয়সে তাদের দেখভাল করবে সন্তানেরা, তাই সন্তান জন্ম দেওয়া জরুরি, তারা নিতান্তই দুষ্টুবুদ্ধির লোক, সন্তানের ঘাড়ে চড়ার বদ উদ্দেশ্য নিয়ে সন্তান জন্ম দেওয়ার পরিকল্পনা করে।

আর এমন তো নয় যে এই গ্রহে মানুষ নামক প্রাণীর এত অভাব যে অচিরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে এই প্রজাতি; বিলুপ্ত হওয়া থেকে প্রজাতিটিকে যে করেই হোক বাঁচাতে হবে! বাঁচানোর দায়ই বা কেন আমাদের নিতে হবে!

পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা প্রায় আটশ’ কোটি। এত ভিড়ের পৃথিবীতে আপাতত কোনও নতুন জন্ম কাংক্ষিত হওয়ার কথা নয়। কিন্তু মেয়েরা যদি ভেবে নেয় জন্ম না দিলে তাদের জীবনের কোনও অর্থ নেই, তাহলে তারা যে ভুল তা তাদের বোঝাবে কে! সন্তানের জন্ম তারা দিতেই পারে যদি এমনই তীব্র তাদের আকাংক্ষা, তারপরও এ কথা ঠিক নয় জন্ম না দিলে তাদের জীবনের কোনও অর্থ নেই। কোনও কোনও মানুষ তাদের জীবনকে শখ করে অর্থহীন করে। তাছাড়া কারও জীবনই অর্থহীন নয়। বরং যে ভ্রুণ আজও জন্মায়নি, সে ভ্রুণ অর্থহীন।

পৃথিবীর প্রচুর শিক্ষিত, স্বনির্ভর, সচেতন মেয়ে বিয়ে করেনি, সন্তান জন্মও দেয়নি।