চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

সদা থাকো আনন্দে, সংসারে নির্ভয়ে

দেশের জনপ্রিয়নাট্য নির্মাতা অরুণ চৌধুরী। টানা কয়েক দশক ধরে আছেন নির্মাণের সঙ্গে, নাটক রচনাতেও ঝুরি নেই তার। বিভিন্ন বিষয়ে তার লেখা বইও বেশ সমাদৃত। তবে ‍শুধু নাটক নির্মাণ কিংবা রচনাতেই নয়, এখন পর্যন্ত তিনি নির্মাণ করেছেন দুটি চলচ্চিত্র (আলতাবানু ও মায়াবতী)। গুণী এই নির্মাতার জন্মদিন ছিলো সোমবার (১০ মে)। এদিন শোবিজ অঙ্গন থেকে সাধারণ ভক্ত অনুরাগীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন এই নির্মাতা। তবে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে এদিন বিশেষ একটি লেখা নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন তারই সহধর্মিনী ও নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। লেখাটি হুবুহু চ্যানেল আইয়ের ‘সেলিব্রিটি সোশ্যাল’ এর পাঠকদের জন্য তুলে দেয়া হলো:

শুভ জন্মদিন অরুণ চৌধুরী তোমার ৬৬ তম জন্মদিন। (যদিও বোঝার উপায় নাই)।

‘মন রে আজ কহ যে, ভালোমন্দ যাহাই আসুক, সত্যেরে লও সহজে’- আমি সত্যি জীবনের অনেক কিছুই সহজ ভাবেই দেখি। অনেক কিছু মানিয়ে চলি, কিন্ত মনে রাখি সব। ভুলিনা কোনকিছুই। তবে প্রিয় মানুষের ভালো সবকিছু মনে করে আমি ভালো থাকার চেষ্টা করি। প্রিয় পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে আমার বেড়ে ওঠা। সেই সময়টা অসাধারণ এক সময় আমার। স্কুলে ভালো রেজাল্ট, মায়ের হাত ধরে নাচ-গান-আবৃত্তির নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া আর পিঠাপিঠি একমাত্র ছোট বোনের সঙ্গে গল্পগুজব, পুতুলখেলা! সেই ছোট্ট বয়স থেকেই ভাবতাম, মানুষ আসে কোত্থেকে? বড় হয় কেন?

আজ পঞ্চাশ উত্তীর্ণ জীবনে দাঁড়িয়ে বুঝি, এসব প্রশ্নের উত্তর বড়দের কাছেও স্পষ্ট নয়। মানুষ বড় হলে তার সুবিধা একটাই, কারো অনুশাসনে থাকতে হয় না, নিজের মতো করে সব কিছু ভাবতে পারে সে। যেমন এখন আমি ভাবতে পারছি আমার স্বামীকে নিয়ে, সম্পর্ক নিয়ে,পরিবার নিয়ে।

৬৬ বছর অনেক সময়। মানুষটা এতটা সময় পেরিয়ে এসে জীবন নিয়ে, সম্পর্ক নিয়ে, তার সৃজনশীল পৃথিবী নিয়ে কী ভাবছে, সেই উত্তর তার কাছেই ভালো আছে। আমাদের বিয়ে হয়েছে যখন, তখন আমার বয়স ১৯ বছর ২ দিন ছুঁয়েছে। সদ্য গ্র্যাজুয়েট হয়েছি। সংসার বুঝি না। দাম্পত্য বুঝি না। আবেগের স্বর্গে কেবল ছোটাছুটি করতে জানি। বাইরে যতখানি স্থির, ভেতরে ততখানি চঞ্চলমতি।

সে সময় একেবারে অজানা একটা মানুষের সঙ্গে এক ছাদের নিচে বসবাস। খুব সহজ কথা নয়। আপাত গম্ভীর, কম কথা বলা, অনেক পড়াশোনা আর লেখালেখির মধ্যে ডুবে থাকা সেই মানুষটার সবটা রাতারাতি জানা হয়ে যাবে, সেটা আশা করা ঠিক নয়। হয়ওনি। আমাদের বয়সের দূরত্ব ১৫ বছর। সে দূরত্বটুকুও একটা বিষয় ছিল।

তাই নানা অস্থিরতা, নানা অস্থিরতার অগ্নিবলয়ে পুড়ে পুড়ে দুজনেই কাছাকাছি হয়েছি। সময় হয়ে গেছে সময়ের প্রতিঘাতে। কাছাকাছি হতে হতে বুঝেছি, জীবন অনেক সুন্দর। দাম্পত্য অনেক রঙিন। যদি তা ধরে রাখার যন্ত্রটা শেষ পর্যন্ত আয়ত্ত করা যায়।

বিয়ের পর প্রথম জন্মদিনে ঘুম থেকে উঠে দেখি বিছানার পাশের ছোট্ট টেবিলে একটা গীতবিতান। গীতবিতানের প্রথম পাতা ওল্টাতেই লেখা: ‘শুভ জন্মদিন। যত দিন পৃথিবীতে বাঁচব তত দিন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যেন এ তারিখটির কথা ভুলে না যাই।’

বছর পেরোতে পেরোতে দেখেছি, অনেক কিছু সে ভোলে না। আমার সন্তান দুটিকে প্রপারলি নার্সিং করা, রাতের পর রাত জেগে গল্প-উপন্যাস লেখা, সুযোগ পেলে সবাইকে নিয়ে ঘুরতে বেরোনো- এসবই তার প্রিয় বিষয়। এসব কাজে তার কখনই ভুল হয় না। এড়িয়ে যায় শুধু মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষ, ঝগড়াঝাঁটি। আত্মীয়-বন্ধুরা হসপিটালাইজড হলে পালিয়ে থাকার চেষ্টা ওর স্বভাবপ্রিয়। যাকে অনেকেই আপাত দৃষ্টিতে পলায়নবাদী মনে করতেই পারেন। বিনা কারণে আড্ডা বাইরে তাও তার অপছন্দ। আত্মীয়দের প্রতি ভালোবাসা আছে, দায়িত্ব এড়ানোরও চেষ্টা আছে। এসব ওর সীমাবদ্ধতা। বেশিটা সময়ই নিরুপদ্রব, শান্ত। একবার রেগে গেলে অনিয়ন্ত্রিত। অনেক বেশি ইন্ট্রোভার্ট। তাই কখনো মনঃক্ষুণ্ণ হলে বহু সময় ধরে তার কারণ জানাটা কঠিন হয়ে পড়ে।

জীবনে চলার পথে অনেক খারাপ সময় আসে। কিন্ত সেই সময় গুলোকে পার করেই সামনে যেতে হয়। এত ভালো ভালো নাটক লেখা আর নির্দেশনা, গল্প উপন্যাস প্রবন্ধ লেখা, সফল সাংবাদিকতার পরও সে স্বপ্ন দেখেছিল একটা ভালো ছবি নির্মাণের। ‘আলতা বানু’ এবং ‘মায়াবতী’ ভালো গল্পের ভালো সিনেমা। সামনে তৈরী হচ্ছে তার নতুন ছবি নিয়ে। শুভ কামনা পুরো টিমের প্রতি।

নতুন জন্মদিনে তার সেই স্বপ্নপূরণের জন্য শুভকামনা। শুভকামনা, তত বছর তার সুস্থতা, যত বছর পেরোলে প্রিয় সন্তানদের বিয়ে আর নতুন প্রজন্মের মুখ দেখা তার পক্ষে সম্ভব হয়! শুভ জন্মদিন অরুণ চৌধুরী! শুভ জন্মদিন অচৌ। সদা থাকো আনন্দে, সংসারে নির্ভয়ে। অনেক সাপোর্ট দিয়েছো আমাকে। পরিবার থেকে অনেক স্বাধীনতা আমি পেয়েছি। কাজ করার স্বাধীনতা। যা অনেকেই পায়না। অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালো থেকো।