চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

সতর্কতা আর সচেতন থাকাই কি শেষ কথা?

‘সতর্কতা’ আর ‘সচেতনতা’ শব্দ দু’টা এই দুর্যোগের সময়টাতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশের মানুষের এই মুহূর্তের ভাবনা- করোনা থেকে নিজেকে আর নিজের পরিবারের সদস্যদের দূরে রাখা। সরকার সব ধরনের সভা সমাবেশ থেকে শুরু করে সরকারি বেসরকারি অনেক বৈঠক বাদ দিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অনেক অফিস তাদের কর্মচারিদের সুরক্ষায় বাসায় বসে অফিসের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে। করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করা হয়েছে। তাই এত সতর্কতা।

কিন্তু আমরা কি এখনো এই করোনা ভাইরাস সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত আছি? আমাদের সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল কি অনুধাবন করতে পারছেন লকডাউন কতটা জরুরি এই মুহূর্তে। ঢাকার বাতাসে করোনা ভাইরাস ঘুরছে- এ কথা বললে কি উম্মাদের প্রলাপ বলবেন কেউ?

রাজধানীর মিরপুরে টোলারবাগে একজন মুত্যুবরণ করেছেন। তার বাসার সদস্যরা যে করোনাক্রান্ত নন, এটা কি নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারবেন? সেই সদস্যদের চলাফেরার মাধ্যমে অন্যরা আক্রান্ত হতেই পারেন। তা হলে কেন ওই এলাকা এখনো লকডাউন করা হচ্ছে না? শুধু মিরপুর না, সারা দেশেই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার মতো পরিবেশ যে তৈরি হয়নি তা কি হলফ করে কেউ বলতে পারবেন?

এমনিতেই আমাদের বড় দেরি হয়ে গেছে সচেতন হতে? আমরা পারেনি জানুয়ারির শুরু থেকে সমস্ত এয়ারপোর্ট কড়াকড়ি নজরদারিতে আনতে। দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে যারা ঢুকেছে তাদেরও অবাধে ঢুকতে দিয়েছি। যার খেসারাত দিতে হচ্ছে এখন। তারপরেও যখন নজরদারিতে আনা শুরু হলো তখন কোয়েরান্টাইন নিয়ে বিদেশফেরতদের ভেতর দেখা গেল অস্থিরতা। তাদের অনেকেই ব্যাপক প্রতিবাদী হয়ে উঠলেন।

শিক্ষার অভাবে একজন বিদেশফেরত ব্যক্তি প্রিয়জনদের সাথে দেখা করার জন্য অসৌজন্যমূলক আচরণ করতেই পারেন, কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের উচিত ছিল ধৈর্য নিয়ে তাদেরকে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে বোঝানো। ওই ব্যক্তির ভেতরে যদি করোনা ভাইরাস থেকে থাকে তা হলে প্রথমে তার পরিবার পরে তার এলাকা, একসময় পুরো দেশ আক্রান্ত হতে পারে- এই বোধ তাদের ভেতরে ঢোকানোর চেষ্টায় বোধহয় আমাদের খানিকটা ক্রটিই ছিল।

এখনো যে বিভিন্নভাবে বিদেশফেরত কেউ কোয়ারেন্টাইন থেকে পালিয়ে যাচ্ছে না নানা কৌশলে এটাও বলা যাবে না। দেশে এই মুহূর্তে যতটা সম্ভব বিভিন্ন এলাকা লকডাউন করে দেয়া দরকার। যদি মনে করা হয় লকডাউন মানে দেশ অচল হয়ে যাওয়া, তা হলে তো ধারণাটা ভুল হবে।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যেখানে এত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে ফেলছে তাদের অনেক কিছু থাকার পরেও আর আমাদের এখনও ভাবতে হচ্ছে স্বাস্থ্য উপকরণ কিট নিয়ে, সেই আমাদের কালক্ষেপণ না করেই যেসব এলাকা করোনা ভাইরাসপ্রবন সেখানে লকডাউন করে দেয়া দরকার। যাতে করে বাতাসে ভেসে বেড়ানো আর মানুষবাহিত এই করোনা ভাইরাস সারা দেশের মানুষের জন্যে হুমকি হয়ে না দাঁড়ায়।

শুরুতেই বলেছিলাম ‘সতর্কতা’ আর ‘সচেতনতা’ শব্দ দুটা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে এই মুহুর্তে। কিন্তু সতর্কতা আর সচেতনতা কতটুকু কার্যকর হবে যদি করোনাক্রান্তদের শনাক্তই না করতে পারি?

আমি জানি না আমার এলাকায় কোয়ারেন্টাইন থেকে পালিয়ে আসা কোনো বিদেশফেরত লুকিয়ে আছে কিনা। আমি জানি না আমার এলাকার বাতাসে কোনো বিদেশফেরত করোনাক্রান্ত রোগীর শ্বাস প্রশ্বাস ছড়িয়ে আছে কিনা।

এই নিশ্চয়তা আমাকে কে দেবে? অবশ্যই রাষ্ট্রের দায়িত্ব সেটা নিশ্চিত করা। খুব তো বেশি দিনও না। মাত্র ১৪/১৫ দিন করে এলাকাভেদে লকডাউনের ব্যবস্থা আজ থেকেই করা প্রয়োজন।

কারণ আমরা প্রত্যেকেই প্রিয়জনদের ভালোবাসি। ভালোবাসি দেশের মানুষকে। ভালোবাসি দেশকেও। যত দ্রুত দেশ করোনা ভাইরাসমুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষিত হবে ততই আমাদের মঙ্গল। আরেকটি কথা-সতর্কতা আর সচেতনতাকে আবার কেউ আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়া ভাববেন না। আমাদের ভাবনার জগতে আবার অনেক রাজনীতিও খেলা করে কি না!

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)