গত শুক্রবারের ঘটনা বলবো আজ। পথে বেরোলেই চোখজোড়া আর আমার থাকে না। চঞ্চল হয়ে খুঁজে বেড়ায় নতুন কিছু। ‘বেঙ্গল বই’ এ যাওয়ার পথেই নজরে এলো নতুন কিছু। একটা ছোট কনফেকশনারির পাশে রাখা ফ্রিজে লেখা “সততা ফ্রিজ”।
চলতি পথে ওটুকু দেখেই শেষ। মন পড়ে রইলো বাকিটা জানার আশায়। ফেরার পথে থামলাম। দোকানের মালিককে পেলাম। নাম দেলোয়ার। ফ্রিজের কথা জিজ্ঞেস করতে অজানা এক দ্বিধা বা আশঙ্কায় দেখলাম মুখটা ওর কালো হয়ে গেল! বললো, “কোনো সমস্যা হইসে নাকি?”
বরফ ভাঙ্গলাম; মানে ইংরেজিতে যাকে আপনারা বলেন আইস ব্রেকিং।
বললাম, “সমস্যা হয়নি। নতুন সম্ভাবনা দেখছি। সততা ফ্রিজের টানেই এসেছি।” ভরসা পেয়ে দেলোয়ারের মুখে হাসি তো ফুটলোই, সেই সাথে ফুটলো যেন খই। একনাগাড়ে বলে গেলো সততা ফ্রিজের গল্প।
যার শুরুটা কয়েক মাস আগে। ফ্রিজটা দোকানের বাইরে হওয়ায় বারবার বাইরে এসে ফ্রিজ থেকে কোক, পেপসি কিংবা জুস বের করে দিতে হতো। আবার দোকানের ভেতরে যেখানে দেলোয়ার বসে, সেখান থেকে দেখাও যায় না ফ্রিজটা। এ দুটো মিলে নতুন ভাবনা পেয়ে বসে তাকে।
“কয় টাকার আর জিনিস, মানুষরে এতটুকু ভরসাও কি করতে পারমু না?” শুরু হয়ে যায় অজানা মানুষকে ভরসা করার ছোট্ট এক স্বপ্ন- “সততা ফ্রিজ”।
ফ্রিজে রাখা ড্রিংকস যে কেউ নিতে পারবে। চলে যাওয়ার সময় শুধু দেলোয়ারকে দামটা মিটিয়ে দিয়ে যাবে স্বেচ্ছায়।
সব গল্পের পুরোটাই সুখপাঠ্য হয় না। তেমনি কিছু মানুষের কাছে ঠকতে হয়েছে দেলোয়ারকে। ওসব নিয়ে ভাবে না সে। ছোট কারণে বড় স্বপ্ন ভাঙ্গার কোনো কারণই নেই।
শেষে একটা জুস কিনে অংশ হই দারুণ এ উদ্যোগের। সেই সাথে দেলোয়ারকে জানাই, আমিও একদিন যশোরের অভয়নগরের ভূমি অফিসে গড়েছিলাম, দেশের প্রথম ভূমিঅফিস ভিত্তিক “সততা পয়েন্ট”, যেখানে কোনো মনিটরিং ছাড়াই কেনা যেত কোর্ট ফি।
আমার কথার মাঝেই বলে, এ গল্পটা তার জানা! আপ্লুত হয়েছি। চলে এলাম। সাথে করে নিয়ে এলাম, সততা ফ্রিজ থেকে কেনা জুসের বোতল, একজন দেলোয়ারের ভালোবাসা আর শুদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার ক্ষুদে এক স্বপ্ন।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)