সাঁতরে নদী পাড় হয়ে আর টানা দৌড়ে ২৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েও সঙ্গিনীকে খুঁজে না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনজনকে হত্যা করেছিলো হাতিটি। তাই বান্ধবী হাতিটিকে বাগেরহাটের মোল্লারহাটে তার কাছে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
হাতিজোড়ার মালিক মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের মতিয়ার। সাধারণত: একসঙ্গেই থাকে তারা। তবে মতিয়ার হাতিগুলো ভাড়া দেন সার্কাসের জন্য। সেই সার্কাসই তাদের সাময়িক বিচ্ছেদের কারণ হয়েছিলো। একটি সার্কাস দল মেয়ে হাতিটিকে ভাড়া করে নিয়ে এসেছিলো বাগেরহাটে।
সাময়িক বিচ্ছেদের মধ্যেও অবশ্য তাদের প্রেমের সুযোগ করে দেয়া হয়েছিলো। ভাবা হয়েছিলো, এরপর হয়তো কয়েকদিন তারা বিরহ-বেদনা সহ্য করতে পারবে। কিন্তু পুরুষ হাতিটি সহ্য করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত তা তিনজন মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ালো।
পুরুষ হাতির মাউত ফারুক জানান, এখন হাতির প্রজনন মৌসুম চলছে। এজন্য গত সপ্তাহে পুরুষ হাতিটিকেও বাগেরহাটের ফকিরহাটে সার্কাস দলের কাছে নিয়ে আসা হয় তার সঙ্গিনীর কাছে। পরে পুরুষ হাতিটিকে বাগেরহাট থেকে ফিরিয়ে আনার পথে গোপালগঞ্জের গুনাপাড়ায় শিকল দিয়ে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছিলো। আর মেয়ে হাতিটিকে বাগেরহাটের সার্কাস থেকে আরেকটি সার্কাসের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকায়।
কিন্তু পুরুষ হাতিটি ভেবে নিয়েছিলো বাগেরহাটেই আছে তার বান্ধবী। তাই মাউতের অগোচরে রাতভর চেষ্টা করে ভোরের দিকে শিকল ছিঁড়ে বান্ধবীর খোঁজে ছুট লাগায় আবার বাগেরহাটের দিকে। দীর্ঘপথ একরকম দৌড়ে, আর সাঁতরে মধুমতি নদী পার হয়ে এগোতে থাকে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের দিকে। ভোর পাঁচটার দিকে দিকভ্রান্ত হয়ে সে পৌঁছে যায় মোল্লারহাটের উদয়পুর ইউনিয়নের গারফা গ্রামে।
গোপালগঞ্জ থেকে মোল্লারহাটের সড়কপথে দূরত্ব ২৮ কিলোমিটার। কিন্তু এতোদূর ছুটে আসার পরও সঙ্গিনীর খোঁজ বা ঘ্রাণ না পাওয়ায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়িঘরে ভাংচুর শুরু করে। সেখানে বিকট চিৎকারের সঙ্গে উন্মত্ত হাতি লণ্ডভণ্ড করে দেয় সাতটি বাড়ি। হাতির হামলায় গুরুতর আহত হন মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসা মনোয়ারা বেগম।
এরপর আরো ছুটতে ছুটতে পুরুষ হাতিটি সামনের দিকে এগোতে থাকে। কাহালপুর গ্রামের পথচারী কুসুম রাণী বিশ্বাসকে পায়ের নীচে ফেলে হত্যার পর পৌঁছায় বাসাবড়ি গ্রামে। সেখানে টিউবওয়েলে পানি নেয়া অবস্থায় শুঁড় দিয়ে তুলে আছড়ে ফেলে মিজানুর রহমানকে। এরপর পা দিয়ে পিষে ফেলে তার পেট। তাদের দু’জনই ঘটনাস্থলে মারা যান। আর মনোয়ারার মুত্যু হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
পুরুষ হাতিটি এখন আছে মোল্লারহাটে।
সেখানকার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খায়রুল আনাম রোববার দুপুরে চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এলাকাবাসীর সহায়তায় হাতিটিকে বাসাবাড়ি গ্রামের একটি বাঁশঝাড়ে আটকের পর থেকে সেখানেই রাখা হয়েছে। পুরোপুরি শান্ত হলে তাকে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হবে।
মোল্লারহাট থানার ওসি জানান, মেয়ে হাতিটিকে তার কাছে ফিরিয়ে আনতে পারলে পুরুষ হাতিটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে। আমরা এখনো সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এজন্য শ্রীমঙ্গলে হাতির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে ।
পুলিশ জানিয়েছে, হাতির আঘাতে তিনজনের নিহত হওয়ার ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। তবে কোনো হত্যা মামলা হয়নি। নিহতদের পরিবারও আসেনি মামলা করার অভিযোগ নিয়ে।