সংগীত রচনা ও পরিবেশন ভঙ্গিতে তারুণ্যের দুর্দমনীয় বাঁধভাঙা স্পন্দন বইয়ে দিয়েছিলেন তিনি। নিজ অঙ্গনে তিনি এতটাই অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন যে পপ সংগীতের সকলে মিলে তাকে বসিয়েছিলো গুরুর আসনে। ডাকা হতো ‘পপগুরু’ নামে। হ্যাঁ এতক্ষণ যার কথা বলা হচ্ছে তিনি আর কেউ নন বাংলা পপ গানের সম্রাট আজম খান।
২০১১ সালের আজকের এই দিনে মর্ত্যলোকের মায়া ত্যাগ করে পাড়ি জমিয়েছিলেন না ফেরার দেশে। বাঙালি সংস্কৃতি অঙ্গনে আলোড়ন তোলা অমর এ সুর শিল্পীর আজ চতুর্থ মৃত্যু বার্ষিকী। দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য ভক্ত ও গুনানুরাগীদের কাঁদিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন না ফেরার দেশে।
১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুর কলোনির ১০নং সরকারি কোয়ার্টারে মা জোবেদা খাতুনের কোল আলো করে পৃথিবীতে এসেছিলেন মাহাবুবুল হক খান। যিনি পরবর্তী সময় পরিচিত হোন আজম খান নামে পরিচিত হন।
১৯৭০ সালে ঢাকার টিএন্ডটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশের পর দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে অংশ নেন দেশ স্বাধীনতা সংগ্রামে। ৭১’এর পর দেশ স্বাধীন হলেও আর লেখা পড়া চালিয়ে যাওয় সম্ভব হয়নি তার পক্ষে।
১৯৮১ সালে ৩১ বছর বয়সে সাহেদা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সাংসারিক জীবনে তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক। সহধর্মিণীর মৃত্যু পর আর বিয়ে করেননি। একাই কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের বাকিটা পথ।
৬৯’এর গণঅভ্যুর্থান থেকে শুরু করে স্বাধীনতা যুদ্ধ দেশের প্রতিটি দাবি আদায়ের সংগ্রমে ছিলো তার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ। গান গেয়ে সহযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার পাশাপাশি কুমিল্লার সালদা থেকে সরাসরি যুদ্ধ করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর তার ব্যান্ড উচ্চারন দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। তার জনপ্রিয় গান গুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘রেল লাইনের এই বস্তিতে’;‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’; ‘আলাল ও দুলাল’;‘অনামিকা’;‘আসি আসি বলে’;‘হাইকোর্টের মাজারে’ অন্যতম।
গানের পাশাপাশি অভিনয়েও সমান দক্ষতা দেখিয়েছেন জাত এ শিল্পী। ১৯৮৬ সালে ‘কালা বাউল’ নামক নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি ২০০৩ সালে শাহীন-সুমন পরিচালিত ‘গডফাদার’ চলচিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন।
এছাড়াও ক্রাউন এনার্জি ড্রিংকস,বাংলালিংক ও কোবরা ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনে মডেল হিসাবে কাজ করেছেন।
ক্রিকেটার হিসাবেও সুনাম আছে তার। ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত গোপীবাগ ফ্রেন্ডস ক্লাবের হয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেটও খেলেছেন তিনি।
তিনি আজ আর আমাদের মাঝে নেই। তবে রয়ে গেছে তার সকল অমর সুরসৃষ্টি ও শিল্পকর্ম।