চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘সংসার মানে তুমি’

চার মাস পার হয়ে গেলেও স্ত্রীকে এক মুহূর্ত ভুলতে পারেননি চট্টগ্রামের
আলোচিত এসপি বাবুল আক্তার। গত ৫ মে স্ত্রী মাহমুদা খাতুন ওরফে মিতু
আক্তারকে (৩২) গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

জীবনের এত অল্প সময়ে এসে না
ফেরার দেশে চলে যাওয়া কোনো মতে মেনে নিতে পারছেন না স্বামী বাবুল আক্তার।
স্ত্রীকে মনে-প্রাণে এখনো ভীষণ মিস করেন বাবুল। তার দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে
পাওয়া গেল সেই আভাস।

বাবুল আক্তার ফেসবুকে একটি পোস্টে লিখেন, ‘এক সুন্দর দিনে সাধারণ এক কিশোরী বউ হয়ে আমার জীবনে এসেছিল। ঘর-সংসার কী অত বুঝত সে তখন? তাকে বুঝে উঠার সবটুকু সাধ্য হয়নি কখনও। কারণ সদাহাস্য চেহারা যার, তার অন্যান্য অনুভূতি ধরতে পারাটা কঠিন। তারপর যুগের শুরু। এক কিশোরীর নারী হয়ে উঠার সাক্ষী আমি। ছোট ছোট আবদার আর কথাগুলো ক্রমেই দিক পাল্টালো। হাতের নখের আকার পাল্টে গেল আমার খাবারটুকু স্বাস্থ্যকর রাখার জন্য। ঘরের চারপাশে ছড়িয়ে মিশে গেল তার চব্বিশ ঘণ্টা, মাস, বছর এবং যুগ।

রাতের পর রাত কাজ থেকে ফিরে দেখতাম, মেয়েটি ক্রমেই রূপ হারাচ্ছে রাত জেগে আমার অপেক্ষায় থেকে থেকে। হয়ত ভালোবাসার চেয়ে স্নেহই ছিল বেশি। প্রথম সন্তানের জন্মের পর যেন সে স্নেহের ডালপালা ছড়ালো। নিজেকে এত যত্ন পাওয়ার যোগ্য আমার কখনই মনে হয়নি। পোশাক থেকে খাবার, কাজ থেকে ঘুম সব কিছুতেই মায়া। কাজের মাঝে বুদ হয়ে থাকা এই আমি সব পারিবারিক দায়িত্ব সে পালন করতে করতে সবার কাছে আমার নাম মানেই হয়ে উঠে তার অবয়ব। ততদিনে হয়ত সংসার বুঝে গিয়েছে সে। মেয়ে আসলো কোলজুড়ে। দেখতে অবিকল মায়ের মত। সবকিছু জেঁকে ধরে কিশোরীটিকে নারী বানালো। কিন্তু ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র বিষয়ে তার শিশুসুলভ উচ্ছ্বাসের সাক্ষী আমি। আমার সামান্যতম ক্ষতির আশংকায় তার কেঁদে অস্থির হওয়ার সাক্ষী আমি। মেয়েটি কী আসলেই সংসার বুঝেছিল ততদিনে? কারণ আমি জানি আমি সংসার তখনও বুঝিনি।

এরপর অনেকগুলো দিন কেটে গেল আমার, আমাদের জীবনে। নেহায়েত সাধারণ কিশোরীটি তখন নারী। ততদিনে সাধারণ মানুষটির ছোয়ায় আমার জীবন অসাধারণ। তখন সে সংসার বোঝে। কিন্তু আমি বুঝি না, এতেই কী এত ক্ষোভ ছিল তার? এত বেশি ক্ষোভ যে ছেড়েই চলে গেল?

নির্ঝঞ্ঝাট সংসার হয়ত কোন দেবদূতেরও থাকে না। সে জায়গায় আমি তো সংসারই বুঝতাম না। কিন্তু সে সব বুঝতো। আগলে ছিল আমাকে। সে চলে গেল, কিন্তু আমার যাওয়ার উপায় রাখল না। সন্তান দুটো আমার বেচেঁ থাকার বাধ্যবাধকতা। না হয় হয়ত পিছু নিয়ে জানতে চাইতাম, এভাবে যাওয়ার কারণটা। তারপর জীবনের শেষ মৃত্যুতে, না কী মৃত্যুতেই মুক্তি; এই বিশাল বাস্তবতা এসে চাপল আমার ঘাড়ে। শরীর থেকে মাথা কাটা পড়ার অনুভূতি কী এই জীবন মেনে নেওয়ার চেয়েও ভয়ংকর? যার সবটুকু শেষ হয়ে যায় তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার কিছু থাকে না। তবুও আমার কাছ থেকে আরও কী যেন চান স্রষ্টা ও সৃষ্টি! তারাই সব বলেন!

গোলকধাঁধার মারপ্যাঁচ বুঝার বয়স কী হয়েছে মায়ের মৃত্যুর সাক্ষী ছেলেটার? তার প্রশ্নগুলো সহজ, কিন্তু উত্তর দেওয়ার মত শব্দ দুষ্প্রাপ্য। যখন মা হারানো মেয়েটার অযথা গড়াগড়ি দিয়ে কান্নার শব্দ কেবল আমিই শুনি, তখন অনেকেই নতুন নতুন গল্প বানাতে ব্যস্ত। আমি তো বর্ম পরে নেই, কিন্তু কোলে আছে মা হারা দুই শিশু। আঘাত সইতেও পারি না, রুখতেও পারি না।

এরপর আর কোন ভোর আমার জীবনে সকাল নিয়ে আসেনি। সন্তান দুটো এবং আমি আর স্নেহের ছায়ায় ঘুমাইনি।এরপরই আমি বুঝেছি সংসার কী। সংসার মানে তুমি।