চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সংসারে মা ও শাশুড়ির সম্পর্ক

বলা হয় সংসারে নারীই নারীর শত্রু। যার প্রথম উদাহরণ হলো বউ শাশুড়ির সম্পর্ক। পরের মেয়েকে আপন করে নেয়ার চেয়ে, ছেলের প্রতি অধিকার হরণকারী ভাবনাটা থাকে বেশিরভাগ শাশুড়ির। পক্ষান্তরে বউয়ের মনে হয় শাশুড়ি নিজের অধিকার খাটিয়ে স্বামীকে দূরে রাখছে। এ চিত্র সমাজের প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে। বিশেষ করে নববিবাহিত নারীর সংসারের শুরুতেই নীরব লড়াই চলে বউ শাশুড়িতে। অনেকক্ষেত্রে দ্বন্দ্বের কারণে আলাদা হয়ে যায় সংসার। এ সমস্যাকে দুজন নারীর চিরকালের সমস্যা বলে অগ্রাহ্য করে বলেই ছেলের বউ আর মা বাবার মাঝে থাকে বৈরী পরিবেশ। যার প্রভাবে যৌথ পরিবারের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয় পরবর্তী প্রজন্ম। শাশুড়ি ও আপন মা হতে পারে এটা মিথ্যা কোন প্রবাদ নয়। তার জন্য মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে বউ শাশুড়িকে।

শাশুড়ি মাকে নিয়ে প্রশংসা করলে অনেকেই বেশ বিস্ময় প্রকাশ করে। কিংবা রাগত চোখে বলে “বুঝবে যখন নিজের ছেলে বিয়ে করবে।” কিন্তু যুগ বদলেছে। আর চিন্তাটা বদলে গেলে বুঝার কিছু থাকবে না বরং ঘরের নতুন মেয়েটাই হবে মায়ের আরেক সন্তান।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, শাশুড়ি যে আপন আরেক মা হতে পারে -এ চিন্তার পরিবর্তন করা কি সহজ। মা আর শাশুড়ি মা দুইজনই তো মা। তার ওপর নারী। আর সে কারণে অজানা একটা টানাপোড়েন মা আর শাশুড়ি মা এক হয় না। পর আর আপনের সংঘাত চলে মনে।

এ ক্ষেত্রে বউ শাশুড়ির মাঝে বিশেষ ভুমিকা পালন করতে হয় ছেলেকে। একজন ছেলে যদি মায়ের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ব আর স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্বকে এক করে ফেলে- তাহলে কষ্টটা পায় মা এবং স্ত্রী দুজন। বিয়ের পর জীবনের যে পরিবর্তন তা প্রকাশ করতে গিয়ে ছেলেকে বুঝতে হবে মা ও স্ত্রীর কাছে সমান প্রত্যাশা থাকা চলবে না। ঘরে আসা নতুন মেয়েটি রাতারাতি নিজেকে বদলে নিতে পারে না। সুতরাং এ ক্ষেত্রে সাবলীল ভাবেই মানতে হবে “মা ও স্ত্রী”র প্রতি ভালোবাসা এক নয় এবং তার প্রকাশও এক হবে না। আবার মায়ের মত স্ত্রী তার সব দেখ ভাল করার কাজ একদিনে জানবে না, বুঝবে না। যুক্তি দিয়ে হিসাবটা সহজ হলেও আবেগী মন মানতে চায় না সব কিছু তাৎক্ষনিক ভাবে।

তবে এ ক্ষেত্রে ছেলের বিয়ের পর মাকে কিছু বিষয়ের পরিবর্তনকে মানতে হবে। একজন মা জৈবিক বিষয়গুলো অস্বীকার করে সন্তানকে নিজের আঁচলের নীচে রাখতে চাওয়াটা অসুস্থতা। সকল জীবেরই জৈবিক চাহিদা আছে। তাই সন্তান তাদের সঙ্গীর দিকে যেই আবেগ-অনুভূতি-ভালোবাসা নিয়ে তাকাবে বা ভাব প্রকাশ করব- তা মা’কে করবে না। এই জৈবিক কারণটি খুব জটিল কিছু নয়। এটা মাকে বুঝতে হবে সন্তান বড় হবার সাথে সাথে।

ছেলে বউ তাদের ব্যক্তিগত মতামতে মিলিতভাবে জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে এটাই স্বাভাবিক। আর সেটা পরে জানার পর যদি মা হিসাবে মনে হয়, ‘কেন ছেলে বউয়ের সাথে আলাপ করে সব সিদ্ধান্ত নেবে বা এর জন্য ছেলেকে কটাক্ষ করা হয়, তবে তা হিতকর হয় না কারো জন্য।

আমাদের সমাজের অধিকাংশ মায়েরা এসব ক্ষেত্রে ছেলেকে মুখের উপর বলে দেন “বউই তোর সব। আমি তোর কেউ না। ওর কথাই এখন উঠ-বস করিস। ‘ এ ধরনের অসংগতিমূলক কথায় ছেলে আর মায়ের কাছে স্বাভাবিক হবে না। আবার ছেলের বউ নিজেকে প্রতিপক্ষ মনে করে দূরে সরে যাবে। তাই মায়ের উচিত হবে তাদের সিদ্ধান্ত সঠিক হলে তার জন্য উৎসাহিত করা। কোন ভুল থাকলে দুজনকে বুঝিয়ে তা সংশোধন করতে হবে। বউমাকে নিজের মত গড়ে তুলতে সময় দিতে হবে। তাকে বুঝাতে হবে সংসারটা তার নিজের। স্বামী সন্তানের পাশাপাশি অন্যদের প্রতিও দায়িত্ব রয়েছে। নিজের মাকে ছেড়ে এলেও শাশুড়ি আরেক আপন মা। মেয়েরা সাধারণত বাপের ঘরে সংসার করতে শিখে না। শ্বশুর বাড়িতে শাশুড়ি মায়ের হাত ধরেই শিখে সংসারের প্রতিটি বিষয়। আর এ শেখাটা আনন্দময় হয় পরের মেয়েকে আপন করে নিলে।

ছেলে আর ছেলের বউয়ের দাম্পত্য জীবনের চলা ফেরা, কেনা কাটা, ঘোরাফেরাকে স্বাভাবিক জীবনের অংশ মনে করতে হবে। তাদের এ উচ্ছলতা দেখে’ মাকে পাত্তা দেয় না বউ কে পেয়ে বা বউ আদব কায়দা জানে না। ‘ এমন ভাবাটা বোকামি। আবার এ নিয়ে অন্যদের সাথে আলোচনা সমালোচনা করলে শাশুড়িকে মা মনে করা বউয়ের পক্ষে দুস্কর হয়ে যায়। নিজে ও একদিন সংসারে বউ ছিলেন-এ কথাটা মনে থাকলে পরের মেয়ের দোষ কম খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

সন্তানের কাছে মায়ের স্থান ও বউয়ের স্থান একই হবে এমন চিন্তা থাকলে জীবনেও শান্তি পাবেন না কেউ। শাশুড়ি থেকে মা হয়ে উঠা হবে কল্পনাতীত। ছেলের বউ ভালো না, ভালো না করে বরং নিজেকে ভাবতে হবে, আমিও পরের মেয়ে হয়ে এ সংসারে বউ হয়ে এসেছি। সেও বউ, আমি ও বউ। আমাকেও জানতে হয়েছে বুঝতে হয়েছিল সংসার জীবনটা। আবার অনেক সময় দেখা যায় নিজের শাশুড়ির যে ভাবে কষ্ট দিয়েছে একই ভাবে ব্যবহার করে ছেলের বউয়ের সাথে। এ ধরনের বিকৃত মানসিক আচরণ থেকে দূরে থাকতে হবে। বরং নিজের উপলদ্ধি দিয়ে বউকে নিজের ছেলের মত ভালোবাসলে সুখ আসবে জীবনে।

মা বউয়ের অশান্তি থেকে পরিত্রাণ পেতে অনেক সময় ছেলে তার স্ত্রীকে এড়িয়ে যায়। মায়ের বাধ্যগত হয়। এতে মা খুশি হয় সাময়িকভাবে। কিন্তু মায়ের কারণে ছেলের সংসারে অশান্তি বা ভাঙ্গন কোনো মাকে সত্যিকারভাবে শান্তি দিতে পারে না।

সব নারীই চায় স্বামীর বাড়ির সবাইকে নিয়েই সুখে শান্তিতে থাকতে। বিয়ের পর বিশেষ করে স্বামীর সাথে সাথে আপন করতে আগ্রহী হয় শ্বশুর শাশুড়ি, দেবর ননদ ভাশুরকে। আর এ কাজে শাশুড়ি মা’ই হয় অন্যতম সহায়ক শক্তি। শাশুড়ি আর স্বামীর পরিবারের মানুষগুলো আন্তরিক হলেই পরের ঘরের আসা মেয়েটি হয়ে যায় তাদের একজন।

বিয়ের সময় বা বিয়ের আগে থেকেই যদি মনে হয় ছেলের বউ ভালো হবে না তাহলে সমস্যা বাড়বে। অন্য এক পরিবার, আলাদা সংস্কৃতি থেকে আসা মেয়েটিকে সময় দিয়ে মা হিসেবে একটু সহযোগিতা-সহমর্মীতা ও ভালোবাসা পরশ দিলে সে  আপনা থেকেই আপন হয়ে যাবে। আর শাশুড়ি মা শব্দটি ভুলে গিয়ে অন্তর থেকে ডাকবেই ‘মা’ বলে।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)