রোববার দিনভর রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত ইস্যু ছিল: নির্বাচন-উত্তর সংলাপে বসার জন্য গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাক পাচ্ছে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে সংলাপে বসা ৭৫টি দল ও তার নেতারা। আবার পরদিন সোমবার সকালে ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিবের ‘নির্বাচন ইস্যুতে আলোচনা হতে হবে’ শর্ত জুড়ে দেওয়া।
ঘণ্টা কয়েক ব্যবধানে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলটির সাধারণ সম্পাদকের দাবি: সংলাপ নয়, শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ পাবেন নির্বাচনের আগে সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর নেতারা। যদিও সংলাপ আলোচনাও তার বক্তব্যের সূত্র ধরেই।
রোববার ‘সংলাপ’ বলা হলেও দিন শেষে রাত ঘুরতেই সোমবার সংলাপের পরিবর্তে বলা হলো ‘শুভেচ্ছা বিনিময়’। শুভেচ্ছা বিনিময় যখন আলোচনায়, তখন ক্ষমতাসীনদের সংলাপ ইস্যুতে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য আবার সৃষ্টি করেছে ধুম্রজাল।
আজ মঙ্গলবার সকালে নব-নিযুক্ত প্রধানন্ত্রীর পাঁচ উপদেষ্টা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে যান। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম বলেছেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও একটি সংলাপ করবেন।’
অন্যদিকে আধঘণ্টা ব্যবধানে ধানমন্ডিতেই ১৯ জানুয়ারির আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশ প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলটির সাধারণ সম্পাদক আবারও দাবি করলেন: তিনি শনিবার আওয়ামী লীগের যৌথসভায় সংলাপ শব্দটিই উচ্চারণ করেননি! অডিও-ভিডিও ক্লিপ আছে দাবি করে সংলাপের অবতারণার জন্য সাংবাদিকদের ‘মনগড়া খবর’কে দায়ী করেন তিনি।
এমন দাবি গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত ১৯ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশের প্রস্তুতি সভায়ও করেছিলেন তিনি। তবে তার দাবি সেখানে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
এরপর আজ আবারও ক্ষমতাসীনদের শীর্ষ নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে সংলাপ নিয়ে এলো আলাদা আলাদা বক্তব্য। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সংলাপ প্রশ্নে এইচটি ইমাম বলেন: ‘প্রধানমন্ত্রী তো সকলের। তাকে সকলে অবশ্যই মেনে নেবে এবং সহযোগিতা করবে – করতে হবে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তিনি আবার একটি সংলাপ করবেন। আগের সংলাপে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদেরকে তিনি আমন্ত্রণ করবেন। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা বলে যে কথাটি বলা হচ্ছে তা অত্যন্ত অবাস্তব এবং হাস্যকর।’
এরপরই তিনি যোগ করেন: ‘নতুন নির্বাচন বাস্তবে সম্ভব নয়। এখন বাস্তবতা মেনে নিয়ে আশাকরি সকলে সহায়তা করবে (ঐক্যফ্রন্ট)। আমাদের দিক থেকে আমরা পাঁচজন উপদেষ্টা, সরকারের মন্ত্রিপরিষদে যারা আছেন সকলেই সকলের সহায়তা চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বললে আমরা অন্যদের সঙ্গে (বিরোধী রাজনৈতিক দল) কথাও বলবো। আপনারা (ঐক্যফ্রন্ট) আসুন; বাংলাদেশ তো সকলের, দেশকে গড়ে তুলি।’
এদিকে কাদের প্রশ্ন তোলেন: ‘সংলাপ’ শব্দটি আসলো কোথা থেকে? সংলাপ নিয়ে আমরা তো কিছু বলিনি!’
আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংগঠনিক এ নেতা বলেন: ‘সংলাপ নিয়ে আমরা তো কিছু বলিনি। কেউ যদি মনগড়া খবর পরিবেশন করেন তাহলে তো কিছু করার নেই। আমি যে বক্তব্য রেখেছি তার অডিও ভিডিও ক্লিপ রয়েছে, সেখানে সংলাপের কোনো বিষয় নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ঐক্যফ্রন্ট, যুক্তফ্রন্ট, বিএনপি, বাম গণতান্ত্রিক জোট, ইসলামী জোট সব মিলিয়ে মোট ৭৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছিলেন সেই দলগুলোর নেতৃবৃন্দকে আমাদের নেত্রী আবারো গণভবনে আমন্ত্রণ জানাতে চান, শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য।’
সংলাপ হবে না দাবি করে তিনি বলেন: ‘নির্বাচন নিয়ে সংলাপের কোনো প্রয়োজন নেই। এখানে সংলাপ নিয়ে ধূম্রজাল কোথা থেকে এলো? আমি তো সংলাপ শব্দটি উচ্চারণ করি। বলা হয়েছে গণভবনে নেত্রী আমন্ত্রণ জানাবেন, শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন; একটু আপ্যায়নের ব্যবস্থাও থাকবে। এই ছিল আমাদের কথা। এখানে ধুম্রজাল কেন হবে, সংলাপ কেন হবে?’
নিজের অবস্থান পরিস্কার করতে গিয়ে তিনি যোগ করেন: ‘প্রধানমন্ত্রী একবারও সংলাপের কথা বলেননি। আমি বলেছি তিনি আমন্ত্রণ জানাবেন। আমি তো সংলাপের কথা বলিনি! কাজেই এ শব্দটি কোথা থেকে এলো আমি জানি না।’