চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘সংবাদ ও নিজেকে কখনো বাণিজ্যিক করেননি সাংবাদিক প্রণব সাহা’

‘নির্লোভ-নিভৃতচারী সাংবাদিক ছিলেন প্রণব সাহা, সংবাদ বিষয়টিকে তিনি কখনো বাণিজ্যিক করেননি এবং সংবাদকর্মী হিসেবেও নিজেকে বাণিজ্যিক করেননি তিনি।’

সোমবার বিকেলে চ্যানেল আইয়ের প্রয়াত জয়েন্ট নিউজ এডিটর প্রণব সাহা’র স্মরণসভায় এভাবেই তাকে তুলে ধরেন টেলিভিশন চ্যানেলটির পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ।

প্রণব সাহার প্রিয় এই প্রাঙ্গনের ছাদ বারান্দায় আয়োজিত স্মরণসভায় শোক, শ্রদ্ধা আর স্মৃতিচারণায় তাকে স্মরণ করেন স্বজন, সহকর্মী ও বন্ধুরা। সবার স্মৃতিতে-বর্ণনায় উঠে আসে তিনি ছিলেন এক অস্থির সময়ের সাহসী সাংবাদিক, পরিণত মানুষ।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা ৭৫’ এর পর বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে যাদের পাশে পেয়েছিলাম এবং যাদের সঙ্গে সেসময়ের দমন-পীড়ন মোকাবেলা করেছিলাম তাদের মধ্যে প্রণব সাহা ছিলেন অন্যতম।’

সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন: প্রণব’দাকে কোনো সমস্যার কথা বললে তিনি বলতেন, ‘‘কোন সমস্যাই সমস্যা না।’’ তার কাছে জীবন এরকম সহজ ছিলো। আমি জীবনকে সহজ করে দেখতে শিখেছি ওনার কাছ থেকেই। আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল তার এক সময়ের সহকর্মী প্রণব সাহার পেশার প্রতি আন্তরিকতার দিক তুলে ধরে বলেন: সাংবাদিকতায় কখনো প্রণবের অনীহা দেখিনি। যেকোনো দায়িত্ব দিলে সে হাসিমুখে কাজটি করে দিতো। তার কোনো চাহিদাও ছিলো না কারও কাছে।

চ্যানেল আইয়ের প্রতি প্রণব সাহার এই পেশাদারীত্ব ছিলো তার একেবারে শেষ দিনগুলিতেও। এ সম্পর্কে তার সাবেক সহকর্মী ও বন্ধু সুভাষ চন্দ্র বাদল বলেন: চ্যানেল আইকে সে একদম নিজের মনে করতো। ডাক্তাররা যখন ওর আশা ছেড়ে দিয়েছেন, সেই অবস্থাতেও চ্যানেল আইয়ের নিউজে, স্ক্রলে ছোট কোনো ভুলত্রুটিও ওকে ভাবাতো। চ্যানেল আইয়ের প্রধান বার্তা সম্পাদক ও চ্যানেল আই অনলাইনের সম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খান বলেন: বাইরে থেকে অফিসে যতো ফোন আসতো, সেসব ফোনে সবাই বলতো ‘দাদা’। অর্থাৎ চ্যানেল আই নিউজ মানেই ছিলেন দাদা। দাদা এবং চ্যানেল আই নিউজ একে অন্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।

প্রয়াত প্রণব সাহার পরিবারের সদস্যদের কথায় উঠে আসে তার একমাত্র ছেলের সুন্দর ভবিষ্যৎ দেখে যাওয়ার শেষ ইচ্ছার কথা।

জীবন সঙ্গীর এই ইচ্ছার কথা স্মরণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত লিলি সাহা বলেন: তার কতো স্বপ্ন ছিলো ছেলেটা দেশের বাইরে থেকে পাস করে আসবে, কিন্তু বড় অসময়ে চলে গেলো। অসুস্থ বাবাকে রেখে ছেলেও বিদেশে যেতে চায়নি। ওর বাবাই ওকে বুঝিয়ে পাঠিয়েছিলো। দেশে এসে আর বাবাকে দেখতে পাবে না ও। চ্যানেল আইয়ের সিনিয়র বার্তা সম্পাদক আদিত্য শাহীনের সঞ্চালনায় এ স্মরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন  কবি হালিম আজাদ, প্রণব সাহার বন্ধু সায়েদুল আরেফীন, মো. হাফিজুর রহমান মুন্সি, চ্যানেল আই এবং চ্যানেল আই অনলাইনের বার্তাকক্ষের প্রবীণ-নবীন সংবাদকর্মীরা।

একজন আদর্শবান সাংবাদিক প্রণব সাহা’র জীবন থেকে শিক্ষা নিতে নতুন সংবাদকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা।

১৯৫৪ সালের ১৫ জানুয়ারি মানিকগঞ্জের গড়পাড়া গ্রামে জন্ম হয় প্রণব সাহার। জন্ম মানিকগঞ্জে হলেও মামাবাড়ি টাঙ্গাইল হওয়ায় সেখানকার সুপরিচিত করটিয়া কলেজে লেখাপড়া করেন তিনি।

বিভিন্ন ম্যাগাজিনে লেখার মধ্যে দিয়ে লেখালেখিতে হাতেখড়ি তার। ১৯৮৪ সালে কর্মজীবন হিসেবে প্রণব সাহা সাংবাদিকতা জগতে প্রবেশ করেন। দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি।

প্রণব সাহা বাংলার বাণীতে কর্মরত অবস্থায়ই ‘ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব জার্নালিজম’ (আইওজে)-এর আমন্ত্রণে পেশাগত প্রশিক্ষণের জন্য রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) সফর করেন।

দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত শেষদিনেও পত্রিকাটির সঙ্গে ছিলেন প্রণব সাহা।

বাংলার বাণী বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ২০০১ সালে চ্যানেল আইয়ে যোগ দেন তিনি। ২০০১ সালেই জন্ম নিয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল চ্যানেল আইয়ের বার্তা বিভাগ। চ্যানেল আই নিউজের সেই জন্মলগ্ন থেকেই সাথে ছিলেন প্রণব সাহা।

অসীম কুমার ‍উকিল

প্রথমে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক ইনচার্জ হিসেবে যোগ দিলেও সময়ের সাথে সাথে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে চ্যানেল আইয়ের উচ্চতর পদে নিজেকে আসীন করেন। পরিচিতি পান সবার ‘দাদা’ হিসেবে।

চ্যানেল আইয়ের পক্ষ থেকেও প্রণব সাহা পেশাগত প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন।

প্রণব সাহা জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য ছিলেন। এছাড়াও ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি পেশাদার সাংবাদিক সংগঠনের সদস্য ছিলেন তিনি।

চ্যানেল আইয়ে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে লেখালেখি করতেন। সর্বশেষ চ্যানেল আই নিউজের জয়েন্ট এডিটর ছিলেন প্রণব সাহা।

সেই পদে দায়িত্বরত অবস্থায় ৭ জুন ভোর ৬টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সেদিন তার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন তাকে।