উচ্চশিক্ষার খরচ জোগানোর জন্য তাকে প্রতিদিন ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ প্রিমিয়ার ইন্সিউরেন্স কোম্পানিতে কাজ করতে যেতে হতো। কাজ শেষে ঢাকায় ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের ক্লাশে যেতেন। পরে এই পরিশ্রম কিছুটা লাঘব করার জন্য যোগ দিলেন পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায়। রিডিং সেকশনে চাকুরি নিলেন। পাকিস্তান অবজারভার তাকে সাব এডিটর পদে পদোন্নতি দিলেন। কিন্তু তিনি এই পদোন্নতি না নিয়ে জানালেন, আমার আইন পাঠ শেষ হয়েছে। আমি আইনজীবী হবো।
বিচারপতি কাজী এবাদুল হকের কথা বলছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণের পর ১৯৫৯ সালে তিনি চলে যান নিজ মহকুমা ফেনীতে। যোগ দেন ফেনী বারে। সেখানে আইন পেশা শুরু। একই সাথে তিনি পাকিস্তান অবজারভারের ফেনী সংবাদদাতা। তিরিশ বছরেরও বেশী তিনি আইন পেশায় ছিলেন। ছাত্র জীবনে তাকে কেন এমন কষ্ট করতে হয়েছিল জানতে চাইলে বললেন, পিতা রেলওয়েতে চাকুরি করতেন। ম্যাট্রিকিএবং আইএ-তে প্রথম শ্রেণি থাকায় বৃত্তি পান। তারপরও উচ্চশিক্ষার খরচ জোগানোর সামর্থ তার ছিল না।
১৯৩৬ সালে ফেনীতে জন্ম কাজী এবাদুল হকের। গ্রামে কেটেছে বাল্যজীবন। তারপর পিতার কর্মস্থলে রেলওয়ে কলোনিতে। আইএ পাস করার পর ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এন্টারটেইনমেন্ট সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। কিন্তু ঢাকায় থেকে পড়ার খরচ বহনের সামর্থ্য না থাকায় ফিরে যেতে হয় ফেনী কলেজে।
১৯৫২ সালে তিনি ফেনীতে ভাষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪-৫৫ সালে তিনি ফেনী ভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৬ সালে একুশে পদক লাভ করেছেন তিনি।
১৯৫৫ সালে ফেনী কলেজ থেকে তিনি বিএ পাস করেন। তারপর আবার ঢাকা আসতে হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে ভর্তি হন। আবাসন তৎকালীন ইকবাল হল। ১৯৫৯ সালে আইন পাস করার পর আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি।
ফেনী বারে সাফল্যের পর ১৯৬৫ সালে চলে এলেন ঢাকা। যোগ দিলেন ঢাকা জেলা জজ আদালতে। তিনি একই সাথে পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকার লিগ্যাল এডভাইজার হলেন। ১৯৬৫ সালে হাইকোর্ট চেম্বারশিপ পরীক্ষায় অংশ নেন। হাইকোর্টের সনদ লাভের পর শুরু হলো ইচ্চ আদালতে আইন ব্যবসা। ১৯৯০ সালে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি পদে নিয়োগ পান। ২০০০ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হন। ২০০১ সালে বিচারপতির পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হন এবং দুই বছর এ পদে ছিলেন।
তার নেতৃত্বে সাংবাদিকদের বেতন বোর্ড রোয়েদাদ গঠন করা হয়। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী শরিফা খাতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক। বিদূষী কন্যাদের গর্বিত জনক-জননী তারা। বড়মেয়ে ড. কাজী ইফফাত হক প্রবাসে থাকেন। ছোটমেয়ে ব্যারিস্টার কাজী জিনাত হক ঢাকায় হাইকোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত।
একুশে পুরস্কার লাভ করায় শুভানুধ্যায়ীদের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন তিনি। মেরুদণ্ডে রক্ত সঞ্চালনের সমস্যায় ইদানিং হাঁটতে সমস্যা হচ্ছে। চিকিৎসকের পরামর্শে সীমিত চলাফেরা করছেন।