প্রগতিশীল সংগীত ব্যক্তিত্ব পণ্ডিত রামকানাই দাশের ৮২তম জন্মজয়ন্তী আয়জন করা হয় রাজধানীর ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবনে। আজ শনিবার সন্ধায় শুরু হয় অনুষ্ঠান রামকানাইকে নিয়ে আলোচনা আর তার গান গেয়ে। আয়োজনটি করেছে রামকানাই স্মৃতি পরিষদ। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কামাল লোহানী, তপন বাগচী, নিমাই মণ্ডল, অনিন্দা চৌধুরী প্রমুখ। এর আগে আজ দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় রামকানাই দাশের গান নিয়ে কর্মশালা। সারা দেশ থেকে শতাধিক ছাত্রছাত্রী এই কর্মশালায় অংশ নেন। পণ্ডিত রামকানাই দাশের লেখা ও গাওয়া ১৫টি গানের প্রশিক্ষণ দেন অনিন্দা চৌধুরী। সন্ধ্যায় রামকানাইগীতি উৎসবের শুরু হয় দলীয় পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। প্রশিক্ষণার্থীরা সমবেত কণ্ঠে গেয়ে শোনান ‘আমি যাব না যাব না জলে’। তপন ওয়াসি গায়, ‘ সাপুড়িয়া সাপ ধরিতে বাজায় যেমন বীণ, তুমি আমায় লইয়া খেলছো খেলা তাক ধিনা ধিন ধিন’।
গানের মাঝে মাঝে চলে আলোচনা। তপন বাগচী বলেন, ‘রামকানাই দাশ সুনামগঞ্জের গ্রাম থেকে উঠে এসে বিশ্বব্যাপী লোকসংগীতের সঙ্গে উচ্চাঙ্গসংগীতের মেলবন্ধন তৈরি করেন। সংগীতের নতুন এক ধারা সৃষ্টি করেছেন।’ নিমাই মণ্ডল বলেন, ‘রামকানাই দাশ সারা জীবন সত্যের পথে থেকে সামগ্রিক সংগীতবোধ নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি বহুমুখী সংগীত প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। সংগীতের সকল শাখায় সফল বিচরণ শেষে লোকগানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তার সংগীতের মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িকতা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি মানুষে মানুষে বিভেদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন গানের মধ্য দিয়ে।’
রামকানাইয়ের নাতনী শ্রেষ্ঠ প্রিয়দর্শিনী তবলার লহরা বাজান।
এরপর আলোচনা করতে আসেন রামকানাই স্মৃতি পরিষদের সভাপতি কামাল লোহানী। তিনি বলেন, ‘রামকানাই শাস্ত্রীয় ও লোকসংগীতের মিশ্রন ঘটিয়ে সংগীতের নতুন এক ধারা সৃষ্টি ও প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বিশ্বসংগীতকে সমৃদ্ধ করেছেন। রামকানাই দাশের জীবন ও কর্মের ওপর আরও গবেষণা হওয়া দরকার। তার কাজগুলো সংরক্ষণ করে নতুন প্রজন্মের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। মানুষটিকে শুধু চেনা নয়, চর্চা করা বেশি প্রয়োজন।’
রামকানাই স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও রাম কানাইয়ের ছেলে পিনু সেন দাশ চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, ‘আজকের এই আয়োজনে গান শিখতে সুনামগঞ্জ, পাবনা, ময়মনসিংহসহ সারা দেশ থেকে মানুষ এসেছে। শতাধিক ছাত্র/ছাত্রী গান শিখেছে। এখন আবার তারা গাইছে। ভবিষ্যতে প্রতি মাসে রামকানাইগীতি প্রশিক্ষণের আয়োজন করার চিন্তা আছে।’
অনুষ্ঠান শেষে প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়।