প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী শ্রীলংকাকে সহায়তার বাংলাদেশ আজ ২০ কোটি টাকার চিকিৎসা সামগ্রী অনুদান দিয়েছে।
শ্রীলংকা বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে।
বাংলাদেশ সরকার এবং স্থানীয় বেসরকারী উদ্যোক্তারা প্রত্যেকে বন্ধুত্ব এবং ভাল প্রতিবেশী সম্পর্কের স্বীকৃতি হিসেবে ১০ কোটি টাকার চিকিৎসা পণ্য সরবরাহ করেছে।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. এ কে আব্দুল মোমেন এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার অধ্যাপক সুদর্শন সেনেভিরত্নেকে টোকেন হিসেবে ওষুধের কিছু বাক্স হস্তান্তর করেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শ্রীলঙ্কাকে জরুরি এই ঔষধ উপহার হস্তান্তর করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
ঢাকায় নিযুক্ত শ্রীলঙ্কার হাই কমিশনার প্রফেসর সুদর্শন সেনেভিরাত্নে ঔষধ বুঝে নেন। এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম উপস্থিত ছিলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক শ্রীলঙ্কাকে জরুরী ঔষধ দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশীদ আলম দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
ঔষধ উৎপাদনকারী সরকারী প্রতিষ্ঠান ইডিসিএল এর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে ১০ কোটি টাকার ঔষুধ । বাকি ১০ কোটি টাকার ওষুধ বেসরকারী ঔষধ কোম্পানির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএপিআই) সভাপতি নাজমুল হাসান ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
ড. মোমেন এই চিকিৎসা সামগ্রী সহায়তাকে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সংহতি ও বন্ধুত্বের বহিঃকাশ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য যে কোনো দেশকে, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোকে সাহায্য করতে দ্বিধা করে না। এই অনুদান অবশ্যই ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্পের উচ্চ মানের ওষুধ উৎপাদনে সক্ষমতা, আর্থিক সক্ষমতা প্রকাশ করবে এবং এটি প্রতিবেশীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির সংকল্পকেও প্রমাণ করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বস্ত করেন যে বাংলাদেশ সম্ভাব্য সব উপায়ে শ্রীলঙ্কাকে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে। দুই দেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করছে।
শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার শ্রীলঙ্কার জনগণের জন্য ওষুধ সরবরাহের এই বন্ধুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তার সরকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি উল্লেখ করেন যে, শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় এবং আগামী দিনে তা আরও জোরদার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিপথ সঠিক দিকে এগোচ্ছে তা আরেকবার প্রদর্শিত হলো।
কয়েক দিনের মধ্যে চিকিৎসা সামগ্রী শ্রীলঙ্কায় পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দেয়।
যেসব ওষুধ দেওয়া হলো
অ্যালবেনডাজোলে ৪০০ এমজি ট্যাবলেট ২৪০০ ইউনিট। অ্যামিনোসিলিন ২৫০ এমজি/১০ মিলি আইভি ইনজেকশন ১৮৭৫ ইউনিট। অ্যামোক্সিসিলিন থাইরয়েড ১২৫ এমজি/৫ এমএল ৩০০ ইউনিট, অ্যামোক্সিসিলিন থাইরয়েড ৫০০ এমজি ক্যাপসুল ৫০০০ ইউনিট, অ্যাজিথরোমাইসিন ২০০ এমজি/৫মিলি সাসপেনশন ২০০ ইউনিট, অ্যাজিথরোমাইসিন ৫০০ এমজি ট্যাবলেট ২০০০ ইউনিট, ব্যাকলোফেন ১০ এমজি ট্যাবলেট ৫০০০ ইউনিট, বিসোপ্রলল হেমিফুমারেট ৫ এমজি ট্যাবলেট ৩ লাখ ৫০ হাজার ইউনিট, ক্যালসিয়ামপ্লাস ভিটামিন ডিথ্রি ৫০০ এমজি প্লাস ২০০ আইইউ ট্যাবলেট ৩০০০ ইউনিট, সেফিক্সজিম থ্রিহাইডেট ৪০০ এমজি ক্যাপসুল ৭০০ ইউনিট, সেফট্রিএক্সোন সোডিয়াম ওয়ানগ্রাম ট্যাবলেট ৪০০ ইউনিট, সেফুরোক্সিম ৫০০ এমজি ট্যাবলেট ২ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ ইউনিট, সেটিরিজিন ১০ এমজি ট্যাবলেট ২ লাখ ২০ হাজার, ছোলরফেনিরামিন মালেট ১০এমজি/এমএল ২৫ হাজার ইউনিট, সিপ্রোফ্লোক্সিন ২৫০ এমজি/৫ এমএল ২০০ ইউনিট, সিপ্রোফ্লোক্সিন ৫০০ এমজি ট্যাবলেট ৬ হাজার ইউনিট, সিটারাবিন ওয়ান গ্রাম/ ১০ এমএল ১০০ ইউনিট, ডাইক্লোফেনাক পটাশিয়াম ৫০ এমজি ট্যাবলেট ১০ হাজার ইউনিট, ডবুটামিন ২৫০এমজি/২০এমএল ৫ হাজার ইউনিট, ডমপেরিডন ১০ এমজি ট্যাবলেট ৯ হাজার ইউনিটসহ ৫৬ ধরনের ঔষধ ও ঔষধ সামগ্রী।