চাঁদা না দেয়ার ‘অপরাধে’ গত ১৩ এপ্রিল রাত ১০টার দিকে মাছ মেরে ফেরার সময় লোহাগড়া উপজেলায় শ্রীবাস আর প্রনব নামের দুই জেলের নৌকা নদীপথে ট্রলার নিয়ে আটকায় দুর্বৃত্তরা। লোহার রড দিয়ে প্রথমে প্রনবকে আঘাত করে। তারপর শ্রীবাসকে নির্মমভাবে পেটায়। লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছে শ্রীবাস। তার মাথা, পিঠ, পাঁজরে লোহার রডের আঘাতের ক্ষত। ডাক্তার জানিয়েছেন, মাথার আঘাতও গুরুতর। অসহ্য যন্ত্রণায় কাটছে তার প্রতিটি মুহূর্ত। ডাক্তার ওষুধ-পথ্য লিখে দিচ্ছেন। তার প্রায় সবই কিনে আনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। টাকার জোগাড় হচ্ছে ধারদেনা আর শুভাকাঙ্খীদের কাছ থেকে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা চললে নিত্য অভাবী পরিবারের শ্রীবাসের অবস্থা হবে তেল ফুরানো মাটির কুপির মতো। তার স্ত্রী-সন্তানের কী হবে তা সহজেই অনুমেয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, এসব দুর্বৃত্ত ও চাঁদাবাজরা প্রায় দিনই টাকা অথবা মাছ চাঁদা হিসেবে নিতে আসে। যেদিন জেলেরা চাঁদা দিতে অস্বীকার করে সেদিনই তাদের ওপর নেমে আসে এমন নির্যাতন। পরিবারের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ওরা অধিকাংশ নির্যাতনই নীরবে সহ্য করে। বেঁচে থাকার গল্পের আড়ালে এটাই আসলে শ্রীবাসদের বেঁচে না থাকা জীবন। কিন্তু যখন রক্তাক্ত ক্ষতে মলমের প্রয়োজন হয় তখন আর ঢেকে রাখতে পারে না। ঢেকে রাখতে না পারার কারণে এটা জনসম্মুখে প্রকাশ হয়। আর এতেও ক্ষিপ্ত হয় প্রভাবশালী সেই চাঁদাবাজরা। এরই প্রেক্ষিতে শ্রীবাসদের প্রতিপক্ষ ক্ষমতা এবং টাকার প্রভাব খাটিয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের খুঁটির জোরে পুলিশ প্রশাসনের মামলা না নেয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এ চিত্র নতুন নয়। তারপরও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সেই জোরের কাছে মাথা নত না করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করবে বলে আমরা আশা করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার ফলে তারা নিজেদের মাটিতে পরবাসী হবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। কেননা শ্রীবাসরা যদি তাদের নিরাপত্তার অভাব বোধ করে তবে দেশের অন্যান্য এলাকার মতো কামঠানা গ্রামের জেলেপাড়াও একদিন উজাড় হয়ে যাবে। তাই শ্রীবাসের চিকিৎসার অর্থসহ যাবতীয় সহযোগিতার পাশাপাশি দেশজুড়ে শ্রীবাসদের নিরাপত্তা বিধানের পদক্ষেপ নিতে আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।