চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

শ্রীনিবাসন সর্ম্পকে যা বলেছিলেন মুস্তফা কামাল

বিশ্বকাপে কিছু বির্তকিত উপায়ে বাংলাদেশকে হারিয়ে দেওয়া এবং ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন ডায়াসে পুরস্কার দিতে দাঁড়াতে না দেওয়ার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছিলেন আইসিসি সাবেক সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল। ১ এপ্রিল দেশে ফিরে বিমানবন্দরে আইসিসি’তে এন শ্রীনিবাসনের অনৈতিক বিভিন্ন কর্মকান্ডের কথা গণমাধ্যমকে জানিয়ে ছিলেন তিনি। বলেছিলেন, “আমার কাছে আইসিসি সভাপতির আগে দেশ।” ওই সব ঘটনার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুস্তফা কামাল যাকে দায়ী করেছিলেন সেই শ্রী নিবাসনকে আইসিসি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। 

জেনে নেই পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে  আ হ ম মুস্তফা কামাল যা বলেছিলেন,
‘ক্রিকেট একটি গৌরবের খেলা। এর ইতিহাস আছে, আইন আছে। এখানে কার কী কর্তব্য এবং সভাপতি হিসেবে তার কী দায়িত্ব সেটাও বলা আছে। সংবিধান মোতাবেক অনুচ্ছেদ ৩.৩ (বি) ধারা মোতাবেক আইসিসির যেসব ওয়ার্ল্ড ইভেন্টগুলো হয় সে সব ইভেন্টে ট্রফি দেয়ার একমাত্র দায়িত্ব থাকে সভাপতির ওপর। সেখানে কোন রকম বিচ্যুতি অনুচ্ছেদ নেই। গত ২৯ মার্চ মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের যে খেলা হলো চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফি দেয়ার কথা ছিল আমার, কিন্তু আমি সেটা দিতে পারি নাই। কেন পারিনি? মূল কারণটি হলো ১৯ তারিখে বাংলাদেশ-ভারতের মাঝে যে খেলাটি হলো সে খেলাটি নিয়ে আমি কিছু মন্তব্য করেছিলাম। মাঠে গিয়েই প্রথমে দেখলাম মেলবোর্নে যেটা আগে কখনও হয়নি সেটা হলো। স্পাইডার ক্যামেরাই নেই। জায়ান্ট স্ক্রিন যেটা আছে, এর মালিক স্বয়ং আইসিসি। আমি দেখলাম খেলা শুরুর পরে সেখানে জায়ান্ট স্ক্রিনে লেখা আছে ‘জিতেগা ভাই জিতেগা, ইন্ডিয়া জিতেগা।’ আমি এটা দেখে সঙ্গে সঙ্গে আইসিসির সিইওকে (ডেভ রিচার্ডসন) বললাম এটা বন্ধ করুন। তিনি সরাসরি কমার্শিয়াল ম্যানেজারকে বললেন এটা বন্ধ কর। কিন্তু বন্ধ করা হলো না। এর মাঝে স্পাইডার ক্যামেরা তো ছিলই না, সঙ্গে যে সিদ্ধান্তগুলো বিতর্কিত ছিল সেগুলোতেও অন্য ম্যাচের মতো প্রযুক্তি ঠিকমতো ব্যবহার করা হলো না। ব্যবহার না করার কারণে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তগুলো বিতর্কিত দেখতে পেলাম। এখানে আম্পায়ারদের ভুল পুরোপুরি দাবি করব না। কারণ তারাও মানুষ। বিচার বিশ্লেষণে ভুল হতে পারে। কিন্তু আমার যেটা পর্যবেক্ষণ ছিল সেটা হলো সেই দিন যদি প্রযুক্তি পূর্ণমাত্রায় ব্যবহার করতে পারতাম, তাহলে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত কতটা সত্য বা অসত্য সেগুলো ভালভাবে জানতে পারতাম। এখন এইভাবে যখন খেলা চলতে থাকল বার বার যখন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত আসতে লাগল বাংলাদেশ থেকে ফোন আসতে লাগল। আপনি তো খেলার মাঠে আছেন, কী করছেন আপনি? এখন ঠিক এভাবেই বিতর্ক যখন চলতে থাকল তখন মাঠে অনেক পোস্টার, প্ল্যাকার্ড দেখলাম যেখানে বলা হলো ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল হ্যাজ বিকাম ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল।’ যখন খেলা শেষ হলো বাইরে গেলাম। মিডিয়া সামনে পড়ল এবং মিডিয়াকে আমি মনের কথাগুলো বললাম। আমি জানি আমি আইসিসি সভাপতি। খেলায় বাংলাদেশ না হয়ে অন্য কেউ হলেও আমি সেই দিন আমার পর্যবেক্ষণ বলতাম। ‘আমি হিউম্যান বিং’ আমার নিজস্ব আবেগ-আত্মসম্মান আছে। সঙ্গতকারণেই আমি আমার প্রতিবাদ যে স্বরে হওয়ার কথা ছিল তার থেকে একটু উচ্চৈঃস্বরেই হয়েছে। কিন্তু আমি এখানে কোথাও তো বলি নাই এগুলো ইচ্ছাকৃত করা হয়েছে।’ 

মুস্তফা কামাল আরও বলেছিলেন, ‘আমি বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলেছি, এদের কথা হলো আমি বাংলাদেশের পক্ষে কথা বললাম কেন? আমার কথা হলো আমার কাছে দেশ আগে। আমার কাছে আইসিসি সভাপতির আগে দেশ। সে জন্যেই দেশের পক্ষে কথা বলেছি। আমাকে মিডিয়া থেকে প্রশ্ন করা হলো ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল’ বলে কিছু নেই। এটা হয়ে গেছে ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল।’ এখানে আপনার বক্তব্য কী? আমি বললাম আপনারা মাঠে যা দেখেছেন আমিও দেখেছি। কিন্তু আমি আইসিসির সভাপতি, ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সভাপতি নই। যদি সত্যিকার অর্থে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল হয়ে যায় তাহলে আমার পদত্যাগ ছাড়া উপায় নেই। তাহলে আমার দ্রুত পদত্যাগ করা উচিত। আমি সে কথাই বলেছি। এখন এ কথাগুলো মিডিয়ায় আসল। আমি বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলেছি, এদের কথা হলো আমি বাংলাদেশের পক্ষে কথা বললাম কেন? যে তারিখে ট্রফি দেয়ার কথা সেই ট্রফি দেয়া হলো না। কী কারণ? এর আগের দিন বিকেল বেলায় একটি মিটিং ডাকা হলো। কয়েকজন ডিরেক্টর ছিলেন যারা আমাকে বললেন ওই দিনের মন্তব্যের জন্যে ‘এ্যাপোলজি স্টেটমেন্ট’ সাবমিট করার জন্য। কিন্তু সভাপতি তো এ্যাপোলজি সাবমিট করতে পারে না। এরপর বলা হলো, ঠিক আছে যদি আপনি আপনার এ্যাপোলজি সাবমিট না করেন তাহলে ওই দিনের স্টেটমেন্ট প্রত্যাহার করেন। আমি বলেছি আমি প্রত্যাহার করব না। তখন আমাকে বলা হলো আপনি কোনটিই যদি না করেন তাহলে ফাইনালে ট্রফি দিতে পারবেন না। আমি বললাম পুরস্কার দেবে আইসিসি সভাপতি। সভাপতিকে বাদ দিয়ে অন্য কেউ পুরস্কার দেয়ার অধিকার রাখে না। সংবিধান পরিপন্থী কাজ করে ক্রিকেটকে কবর দেবেন না, ক্রিকেটের গায়ে ক্ষত আনবেন না। অনেক অনুরোধ করলাম। ফাইনালে কী দেখলাম? খেলা শেষ হলো, ওই বিতর্কিত মানুষের (এন শ্রীনিবাস) নাম যখন বলা হলো তখন দেশের ষোলো কোটি মানুষের কণ্ঠস্বর মনে হলো যেন সেখানে আছে। এই ষোলো কোটি মানুষের কণ্ঠের সঙ্গে মিলিয়ে নব্বই হাজার দর্শক বলল ‘মানি না, মানি না।’ সেটিই আমাদের বিজয়। 

মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষ আবার বিশ্বের সঙ্গে নিজেদের পরিচয় করিয়ে দিল। তাদের মনের কথা আরেকবার দর্শকরা নিজেদের কথা জনিয়ে দিলেন ওই পচা লোকটাকে, ওই গন্ধময় লোকটাকে। সে নিগৃহীত হলো। সে ট্রফি দিয়ে কোন রকম লুকিয়ে মাঠ থেকে বের হয়ে আসে। এখন কথাটি হচ্ছে যেই মানুষটি বিতর্কিত, বিভিন্নভাবে বিতর্কিত, বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত, আপনারা জানেন মামলাগুলো কী, এখন সেই মানুষটি যদি ক্রিকেটের দায়িত্বে থাকে তাহলে ক্রিকেট কিভাবে চলবে আপনারাই বলেন। আর সেখানে তার সঙ্গে সভা করার জন্যে আমি যাব কেমন করে! আমি পদত্যাগ দিতে চাই। ক্রিকেটে এ রকম ন্যাক্কারজনক ঘটনা যারা প্রথম ঘটাল তাদের মস্তিষ্ক বিকৃত। ক্রিকেটকে কলুষিত করা হয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি ক্রিকেট বিজয়ী হয়েছে। কিভাবে বিজয়ী হয়েছে? কারণ সেই মানুষটি যিনি ক্রিকেটকে কলুষিত করার চেষ্টা করেছেন সেই মানুষটিকে মাঠের সব মানুষ সমস্বরে বলেছে ‘মানি না, মানি না।’

আ হ ম মুস্তফা কামালের ওই পদত্যাগে ক্রিকেট দুনিয়ায় ঝড় উঠেছিলো এবং টেস্ট মর্যাদার বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রী নিবাসনের অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানানো হয়েছিলো।