মনে পড়ে গানের সেই লাইন? ‘শ্রমিকের মনে আগুন জ্বালাও কঠিন আত্মবিশ্বাসে / ছোট পাখিদের ঈগলের সাথে যুদ্ধে লড়িয়ে দাও।’
গতিময় সেই গান। অপূর্ব দৃপ্ত সব ফ্রেম। লাঙ্গল কাস্তে। সিনেমার দৃশ্য। কিন্তু সে অর্থে বিকল্প ধারার কোন সিনেমা নয়। মূল ধারার বানিজ্যিক সিনেমা। স্বাধীনতারও আগের সিনেমা ‘জীবন থেকে নেওয়া’। জহির রায়হানের অমর সৃষ্টি। বাণিজ্যিক বিচারেও সফল। কিন্তু এমন জীবনঘনিষ্ঠ শ্রমিক উচ্চারণ এখনকার মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমাতে অনুপস্থিত বললেই চলে।
কিংবা আমজাদ হোসেন এর ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’র মনপোড়ানো নির্মম সত্য গল্প অথবা শহীদুল ইসলাম খোকনের কমেডির ঢংয়ে গার্মেন্টস মালিকের অন্যায় আচরণ ও তিন নারীর প্রতিবাদ খুব বেশি মূর্ত হয় না বাংলা সিনেমায়। বাংলাদেশের সিনেমায়।
বাংলাদেশের মূলধারা বাণিজ্যিক সিনেমায় শ্রমিক ঘণিষ্ঠ গল্প বা চরিত্র উঠে আসলেও তার উপস্থাপন অনেকটাই মশলাময় বা চড়া ঢংয়ের। বিশেষ করে গরীব শ্রমিক আর বড়লোকের মেয়ের প্রেম ও তার পরিণতি-ইটই যেন বাঁধাধরা। তবে তার বাইরেও হয়েছে সিনেমা।
মে দিবসে দাড়িয়ে সিনেমায় শ্রমশোষণের রূপ-প্রতিবাদ কি ভাবেন এখনকার নির্মাতা, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা? আর কি বলেন তারা? কিইবা বলেন সেসময়ের নির্মাতা-
আমজাদ হোসেন
‘জীবন থেকে নেওয়া’ সিনেমার ওই গান কি এমনি এমনি এসেছে। ভেতরের তাগিদ থেকে এসেছে। উপলব্ধি থেকে এসেছে। সিনেমা করেছি আমরা ভালবাসা থেকে একটা ইন্ডাস্ট্রি দাঁড় করানোর ভাবনা থেকে। তাই বাণিজ্যিক সাফল্যের লক্ষ্য অবশ্যই ছিল আমাদের। কিন্তু আদর্শিক জায়গাটাকে একদম বিকিয়ে নয়। বামপন্থী রাজনীতি করেছি। বাংলাদেশ-সোভিয়েত মৈত্রী করেছি। নিজস্ব পঠনপাঠনের অভ্যাস এবং মৃত্তিকা সংলগ্নতা ছিল হয়ত। এখন কি সেটা আছে? আমার মনে হয় না। বরং একধরণের দেখনদারী। অন্যকে ছোট করার প্রবণতা অনেক বেশি বিদ্যমান। তারপরও মনে করি বদলাবে সব। সময়ের দুঃসহনীয় অবস্থা, শ্রমিকের যন্ত্রণা কেবল নয় মানবতার যন্ত্রণা পপুলার সিনেমাতে উঠে আসবে সহজ ভঙ্গিতে-নবীনদের মাধ্যমে। এ বিশ্বাস করি।
মুশফিকুর রহমান গুলজার
তখন ভালো চিত্রনাট্য ছিল যেমন, তেমনি সে মনোবৃত্তির প্রযোজকও ছিলেন। এখন সে অর্থে ভালো চিত্রনাট্যকারের অভাব। যারা শ্রমিক জীবন বা শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে বাণিজ্যিক ভাবনার চিত্রনাট্য লিখবেন সব সমন্বয় করে তেমন চিত্রনাট্যকার কই? চিত্রনাট্য হলে কিন্তু চলচ্চিত্র নির্মাণ অসম্ভব নয়। ‘জীবন থেকে নেওয়া’ বা ‘যাহা বলিব সত্য বলিব’ র মত চিত্রনাট্য হলে নির্মাতা কিন্তু আছে। কিন্তু প্রযোজনার দায়িত্ব নেবে কে? আছে কি তেমন প্রযোজক?
আরেফিন শুভ
আজ আমি কোলকাতা যাচ্ছি। ‘আহা রে’ সিনেমার শুটিংয়ে। যেখানে একজন শেফ। পাঁচতারা হোটেলের রন্ধণ শ্রমিক। তবে চরিত্র শ্রমিক নিয়ে কথা বলার আগে আমি নিজেই একজন শ্রমিক হিসেবে বলব আমাদের শ্রম সেভাবে দৃশ্যমান নয়। অনেকে এখনও মনে করেন সিনেমার কাজ খুব সহজ। তা কিন্তু নয়। মে দিবসে সব পেশার সব শ্রমিককে শুভেচ্ছা।
পরীমণি
আমি নিজেকে শ্রমিক হিসেবে ভাবি। অভিনয় শ্রমিক। আর সিনেমার অভিনীত চরিত্রে শ্রমিক চরিত্র প্রথম সিনেমাতেই পেয়েছিলাম। ‘রানা প্লাজা’ সে সিনেমায় অভিনয় আমার স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। পোশাক শ্রমিকদের কষ্টের উত্তাপ টের পেয়েছি। তবে মে দিবসে রানা প্লাজা’ সিনেমাটি মুক্তি না পাওয়ার কষ্টটা বেশি করে বুকে বাজছে।