চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বাংলাদেশের কোচ-খেলোয়াড়দের

দূষণে দিল্লিতে জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা জারি

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। তবে রাজনৈতিক কারণে নয়, জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকিতে। শুক্রবার দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনেই তা করেছে পরিবেশ কর্তৃপক্ষ। ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ মাস্ক বিতরণ করার সময় দিল্লিকে গ্যাস চেম্বারের সঙ্গে তুলনা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

দিল্লির ভয়াবহ দূষণের কারণে ক্রমেই চিন্তা বাড়ছে বাংলাদেশ-ভারতের ক্রিকেট ম্যাচ ঘিরে। ২০১৭তে সেখানে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালীন অসুস্থ বোধ করেন শ্রীলঙ্কার কয়েকজন ক্রিকেটার। তারা মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান। পরে মাঠে ফেরেন মুখে মাস্ক নিয়ে। রোববার এমন পরিস্থিতিতেই অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ভারত সিরিজের প্রথম টি-টুয়েন্টির লড়াই। যার আগেও দূষণ নিয়ে চিন্তায় আয়োজকরাও।

বুধবার ভারতে পৌঁছার পর বৃহস্পতিবার দিল্লির মাঠে অনুশীলনে নামে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। সেখানে দলের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান লিটন দাসকে দেখা যায় মুখে মাস্ক জড়িয়ে অনুশীলন করতে। যদিও অন্যরা সেদিন মাস্ক ছাড়াই ছিলেন। পরে হিন্দুস্তান টাইমসকে লিটন বলেন, ‘এটি আমার ব্যক্তিগত সমস্যা। তখন আমার মোটেই ভালো লাগছিল না।’

তবে পরের দিনগুলোতে খেলোয়াড় এবং স্টাফদের জন্য বাড়তি মাস্কের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানায় ওই পত্রিকা। বাংলাদেশ দলের পক্ষ থেকে হিন্দুস্তান টাইমসকে বলা হয়েছে, ‘হ্যাঁ, আমরা আরও মাস্ক নেয়ার কথা ভাবছি।’

লিটন ছাড়া অন্য খেলোয়াড়দের মুখ থেকে দূষণ নিয়ে কিছু শোনা না গেলেও দলের হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর সমস্যা হয়েছে বলে জানায় হিন্দুস্তান টাইমস। ‘আমাদের কোচ ভালো অনুভব করছেন না। তিনি বলেছিলেন যে তার চোখ জ্বলছিল এবং পরিষ্কার বাতাসের অভাবে শ্বাস নিতেও অসুবিধা হচ্ছে।’

ডমিঙ্গোর সমস্যা দেখার পরে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট আরও মাস্কের ব্যবস্থা করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।

চোখ জ্বলা, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাগুলোই অনুশীলনে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের একমাত্র উদ্বেগ ছিল না। এমনকি ধোঁয়ার কারণে অনুশীলনের সময় তাদের বল দেখতেও সমস্যা হচ্ছিল। ফিল্ডিং ড্রিল চলাকালীন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম একাধিকবার আকাশের দিকে ইঙ্গিত করে বলছিলেন, তিনি বল ধরতে পারবেন না।

‘হ্যাঁ, বল দেখতে অবশ্যই সমস্যা হয়েছিল, তবে আমি মনে করি রোববার আলোর নিচে (রাতে ম্যাচ) এটি ঠিক হওয়া উচিত’ মন্তব্য লিটন দাসের।

এসব সমস্যা থাকার পরও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলি বলেছেন, সূচি অনুযায়ী ম্যাচটি দিল্লিতেই হবে। বেশ কয়েকটি পরিবেশবাদী সংস্থা বিসিসিআইয়ের কাছে চিঠি লিখে ম্যাচের ভেন্যু পরিবর্তনের আবেদন জানালেও নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল বোর্ডটি।

রোটেশনের নিয়ম মেনে এই ম্যাচ পেয়েছে দিল্লি, কিন্তু দূষণের এমন মাত্রাছাড়া অবস্থায় ম্যাচের ভবিষ্যৎ কী তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে দেশটির ক্রীড়াঙ্গনে। এরমধ্যেই তারা ভবিষ্যতে দিল্লিতে ম্যাচ আয়োজন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে, বিশেষ করে এই সময়টাতে। আগামীতে দিল্লি হয়ত ফেব্রুয়ারি-মার্চের ম্যাচগুলোই বেশি পাবে।

দিওয়ালির পর থেকে ক্রমেই বাড়ছে দিল্লির দূষণের মাত্রা, এখন তা উদ্বেগজনক অবস্থাও ছাড়িয়ে গেছে। এখন দিল্লির দূষণের মাত্রা ‘সিভিয়ার প্লাস’ বা ‘ইমার্জেন্সি’ শ্রেণিতে পড়ছে।

ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের আওতাভুক্ত পরিবেশ দূষণ (প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ) কর্তৃপক্ষ ১০ সদস্যের দূষণ-বিরোধী টাস্কফোর্স গঠন করেছে। টাস্কফোর্সের সুপারিশে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত দিল্লি-এনসিআর এলাকায় নির্মাণকাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি আতশবাজি পোড়ানোর উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি আছে।

 

দিল্লি দূষণ: মুখে ‘মাস্ক’ নিয়ে অনুশীলনে লিটন

যে সংস্থাগুলো প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার করে না সেগুলি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শীতকালে দিল্লি ও তার আশপাশের এলাকায় বাজি ফাটানো যাবে না বলেও নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

রাজধানীর এই অবস্থার জন্য প্রতিবেশী পাঞ্জাব ও হরিয়ানাকে দুষেছেন কেজরিওয়াল। তিনি মনে করেন, প্রতিবেশী দুই রাজ্যে বছরের এ সময়ে আবর্জনা পোড়ান কৃষকরা, যার কারণে ধোঁয়ায় ভরে যায় দিল্লি। দূষণের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, প্রাতঃভ্রমণকারীদের পর্যন্ত সকালে মাস্ক পরে হাঁটতে বের হতে হচ্ছে। দিল্লির স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০ লাখের বেশি মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে বলেও জানাচ্ছে রাজ্য সরকার।