সিলেট মহানগরীর চৌহাট্টায় সরকারি অালিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নারী ও প্রতিবন্ধীদের ব্যবহারের জন্য নির্মাণাধীন শৌচাগারকে মাদ্রাসার ঐতিহ্যে আঘাত বলে মনে করছেন সেখানকার ছাত্ররা। এজন্য গত রোববার বেলা বারোটার দিকে নির্মাণানাধীন এ শৌচাগারের দেয়ালে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং দেয়াল ভেঙ্গে প্রতিবাদ জানায় তারা। এই ঘটনায় সিলেট সিটি কর্পোরেশন ও আলিয়া মাদ্রাসা পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি মাদ্রাসার সাথে শৌচাগার নির্মাণ মাদ্রাসার পবিত্রতার জন্য যেমন হুমকি ঠিক তেমনি তাদের শতবছরের ঐতিহ্যে আঘাতের শামিল। অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, নারী ও প্রতিবন্ধীসহ মাদ্রাসা ছাত্রদের সুবিধার্থেই নির্মাণ করা হচ্ছে শৌচাগার।
তবে শৌচাগারটির দেয়াল ভাঙ্গার পরপরই আবার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এবং তা মেরামতের পর থেমে থেমে নির্মাণ কাজ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীরা সোমবার দ্বিতীয় দফায় স্মারকিলিপি প্রদান করেছে মেয়র বরাবর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসার গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত এক কর্মকর্তা চ্যানেল অাই অনলাইনকে জানান, মাদ্রাসার প্রায় ১২ হাত ও সিভিল সার্জনের অফিস সংলগ্ন প্রায় ২০ হাত জায়গার ওপর শৌচাগার নির্মাণের কাজ চলছে। বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকে ছাত্ররা আপত্তি জানিয়ে আসছে। তারা মনে করছে মাদ্রাসা সংলগ্ন এ শৌচাগার নির্মাণ হলে তাদের ঐতিহ্যে আঘাত আসবে।
অপরদিকে সিটি কর্পোরেশন বলছে, প্রতিবন্ধী ও নারীদের সুবিধার্থে গত প্রায় ২০ দিন যাবৎ সিলেট মহানগরীর চৌহাট্টা এলাকায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ও উন্নয়ন সংস্থা ওয়াটার এইডের সহযোগিতায় শৌচাগার নির্মাণের কাজ চলছে। প্রায় ২ সপ্তাহ কাজ চলার পর গত রোববার নির্মাণাধীন সেই শৌচাগারের দেয়াল ভেঙ্গে প্রতিবাদ জানায় চৌহাট্টা এলাকায় অবস্থিত সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্ররা। আগে থেকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হলেও এ ধরণের হামলার কারণ কী, বা কাদের উস্কানিতে ছাত্ররা হামলা চালিয়েছে তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
মাদ্রাসার ছাত্ররা বলছে, মাদ্রাসা সংলগ্ন শৌচাগার নির্মাণ হলে তাতে পবিত্রতা নষ্ট হবে। তবে সিটি কর্পোরেশন বলছে, শৌচাগারটি নির্মাণ হবে সিভিল সার্জনের জায়গায় আর গোসলখানাটি নির্মাণ হবে মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায়। অপরদিকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বলছে, এ ধরণের কোন লিখিত দলিলাদি নেই। যা বলা হয়েছে তা মৌখিক।
বিষয়টি নিয়ে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল প্রফেসর আলী আহমেদ খান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘ভাংচুরের ঘটনার পর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন তারা। মেয়র বলেছেন, জনস্বার্থে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নির্মাণ হচ্ছে শৌচাগার। এবং এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীরও সম্মতি রয়েছে।’
‘কিন্তু ছাত্রদের এখানে একটা সেন্টিমেন্ট কাজ করছে। তাদের দাবি আলিয়া মাদ্রাসা একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান, সেখানে শৌচাগার নির্মাণ হলে হুমকির মুখে পড়বে ঐতিহ্য।’
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন যেখানে জনস্বার্থে এ উদ্যোগ নিয়েছে সেখানে এ ধরণের হামলা সত্যিই খুব ন্যাক্কারজনক।’
ছাত্ররা কেনো এমন করলো তা আমি বুঝতে পারছি না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সিভিল সার্জনের জায়গার ওপর হচ্ছে মূল শৌচাগার এবং আলিয়া মাদ্রাসার পেছনের কিছু অংশে নির্মিত হবে গোসলখানা ও ওযুখানা। তা সত্বেও এসব কিছুকে উপেক্ষা করে ছাত্রদের এ হামলা হামলা সত্যিই খুব দুঃখজনক।’ পড়াশোনা শিখতে আসা ছাত্রদের কাছ থেকে এ ধরণের আচরণ কোনভাবেকই কাম্য নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারি পুলিশ কমিশনার সাদেক কাওসার দস্তগীর বলেন, হামলার পর পরই পুলিশ ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এবং এর কিছু পরই দেয়াল মেরামত করা হয়। এবং সেখানে স্বাভাবিকভাবেই চলছে নির্মাণ কাজ।
তবে হামলার বিষয়ে এখন পর্যন্ত থানায় কেউ কোন অভিযোগ করেনি।