পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান (৩৪) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
মিডিয়ায় অভিনয়ের সুবাদে শোবিজ-এর রহমতউল্লাহ নামের এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় ছিল মামুনের। রহমতউল্লাহ পেশায় প্রকৌশলী হলেও শোবিজই ছিল তার ঠিকানা। গত চার-পাঁচ বছর ধরে মামুনের সঙ্গে রহমতউল্লাহর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
পুলিশ জানায়, গত ৮ জুলাই, রোববার বিকালে রহমতের সঙ্গে ফোনে কথা হয় মামুনের। এ সময় রহমত তাকে মডেল ও অভিনেত্রী মেহেরুন নেছা আফরিন ওরফে আন্নাফি আফরিনের জন্মদিনের পার্টি আছে বলে জানায়। পরে একটি মোটরসাইকেলে করে মামুন রাজধানীর বনানীর একটি বাসায় যায়।
রহমতউল্লাহ জন্মদিনের ওই অনুষ্ঠানে মামুনকেও যেতে অনুরোধ করে। আর সেই জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়েই খুন হন পুলিশ কর্মকর্তা মামুন।
বুধবার (১৮ জুলাই) দিনগত রাতে রাজধানীর বাড্ডা ও হাজারীবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
তারা হলো- মিজান শেখ, মেহেরুন্নেছা স্বর্ণা ওরফে আফরিন ওরফে আন্নাফি, সুরাইয়া আক্তার ওরফে কেয়া এবং ফারিয়া বিনতে মীম।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন।
আব্দুল বাতেন জানান, ঘটনার দিন রহমতউল্লাহ তার গাড়ি নিয়ে আফরিনের ঠিকানা অনুযায়ী বনানীর বাসায় যান এবং মামুন মোটরসাইকেল নিয়ে ওই বাসায় যান। এর কিছুক্ষণ পর স্বপন, মিজান, দিদার, আতিক বাসায় ঢুকে তারা অপকর্মে লিপ্ত বলে অভিযোগ করতে থাকে। তখন মামুন নিজেকে পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিলে তারা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে রহমতউল্লাহ ও মামুনকে বেঁধে মারধর শুরু করে।
‘রহমতউল্লাহকে ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় করাই তাদের টার্গেট ছিল। কিন্তু মামুন নিজেকে পুলিশ পরিচয় দেওয়ায় তাদের টার্গেট মামুনের দিকে চলে যায়। মারধরের এক পর্যায়ে মধ্যরাতে মামুন মারা যায়। এতে তারা চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং রহমতউল্লাহর বাঁধন খুলে দেয়। তখন রহমতউল্লাহ মামুনকে ডেকে আনায় সে ফেঁসে যাবে ভেবে খুনিদের সাথে সেও যোগ দেয়।
পরদিন সকালে মামুনের লাশ বস্তায় ভরে রহমতউল্লাহর গাড়িতে উঠায়। এদের মধ্যে স্বপন, দিদার ও আতিক সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন বলে জানা গেছে। তারা গাড়ি নিয়ে রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্টে যায় এবং খাওয়া-দাওয়া করে। মিজান লাশটি পুড়িয়ে ফেলার পরিকল্পনা করে এবং ক্যান্টনমেন্টের একটি পাম্প থেকে পেট্রোলও কিনে।’
সন্ধ্যার দিকে তারা গাড়ি নিয়ে গাজীপুরের কালীগঞ্জের দিকে যায়। এরপর জঙ্গলে লাশ নামিয়ে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। পরে তারা রহমতউল্লাহকেও মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়।
১০ জুলাই বাসায় ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই রহমতউল্লাহকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বুধবার তিন নারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল বাতেন বলেন, তারা বনানীর ওই বাসাটি ২ মাস আগে ভাড়া নেয়। মানুষকে ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় করাই তাদের লক্ষ্য ছিল। আর তাদের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন রবিউল।
‘ওই বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল নজরুল নামের একজন। তবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নজরুলের সম্পৃক্ততা কেউ স্বীকার করেনি।’
তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় জড়িত অন্তত আরো চারজনের বিস্তারিত নাম পরিচয় পেয়েছেন। যাদেরকে দ্রুতই গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।