উর্ধ্বগামী থাকা দেশের দুই শেয়ারবাজারে হঠাৎ ব্যাপক দরপতন ঘটেছে। সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া সবকটি ব্যাংকের দরপতন হয়েছে। একই অবস্থা হয়েছে অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। মূলত ব্যাংক খাতের শেয়ারের দাম পড়ে যাওয়া দেশের দুই পুঁজিবাজারে এই ধস নেমেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, কয়েকদিন ধরে একটানা বেড়েছে বাজার। এছাড়াই ব্যাংকিং খাতের অনিয়মের খবর ছড়িয়ে পড়ায় বাজারে দরপতন ঘটেছে। তবে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করেন তারা।
সম্প্রতি শেয়ারবাজারের নিয়ম ভেঙে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করাসহ বিভিন্ন অসঙ্গতির দায়ে একটি সরকারি ও ৬টি বেসরকারি ব্যাংকসহ মোট সাতটি ব্যাংককে জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো নির্ধারিত সীমা থেকে বেশি বিনিয়োগ করছে। একই সাথে এই বাড়তি বিনিয়োগের তথ্যও গোপন করেছে।
জরিমানার শিকার হওয়া ওই সাত ব্যাংক ছাড়াও আরো আটটি ব্যাংকের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ব্যাপারে বিশেষ পরিদর্শন চালিয়ে বেশ কিছু অনিয়ম পাওয়া গেছে। এছাড়া সন্দেহমূলক লেনদেন পরিলক্ষিত হওয়ায় আরও সাতটি ব্যাংকের বিনিয়োগ যাচাই করে দেখা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ২২টি ব্যাংক কঠোর নজরদারিতে রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অপরাধের ধরন অনুযায়ী তাদের ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ব্যাংকগুলোর নাম জানা যায়নি।
সোমবার গণমাধ্যমে জরিমানার এই খবর প্রকাশের পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ব্যাংকে খাতের দর কমতে থাকে। যার প্রভাব পড়েছে পুরো বাজারে।
এতে উভয় বাজারে মূল্য সূচকের বড় পতন হয়ছে। ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৭৬ পয়েন্ট এবং সিএসইর সার্বিক মূল্য সূচক সিএসসিএক্স কমেছে ১৩২ পয়েন্ট।
মূল্য সূচকের পতনের সঙ্গে উভয় বাজারে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। ডিএসইতে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কমেছে ৮৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর সিএসইতে কমেছে ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, কয়েকদিন টানা বেড়েছে বাজার। এখন কমবে এটাই স্বাভাবিক। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সাত ব্যাংককে জরিমানা করার কিছু প্রভাব বাজারে পড়েছে। দরপতন ঘটায় আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করে তিনি।
শাকিল রিজভী বলেন, ব্যাংকের টাকায় শেয়ারবাজারে দর বাড়া ভালো দিক নয়। স্বাভাবিক নিয়মে বাড়লে সেটাই ভালো। তবে বাজার আরও বেড়ে উঠার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা ভালো হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
ব্যাংক ও আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর দরপতনের কারণে দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৭৬ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ১২৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হওয়া ২০৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম আগের দিনের তুলনায় কমেছে। দাম বেড়েছে ৯২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫টির দাম। লেনদেন হয়েছে মোট ৯৬৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১ হাজার ৫৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ লেনদেন কমেছে ৮৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
অপর শেয়ারবাজার সিএসইতে সিএসসিএক্স সূচক ১৩২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৫২৩ পয়েন্টে। মোট লেনদেন হয়েছে ৪৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া ২৪৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম কমেছে ১৫৬টির, বেড়েছে ৭০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩টির দাম।