টাঙ্গাইলে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ও গুদাম কর্মকর্তার দিনভর নাটক শেষে ভূঞাপুর খাদ্য গুদাম থেকে পাচার হওয়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর ৬৪০ বস্তা চালের মধ্যে ২৮০ বস্তা চাল জব্দ করা হয়েছে। এ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে গুদাম কর্মকর্তা বেলাল হোসেন ও নৈশ প্রহরী আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইশরাত জাহানের উপস্থিতিতে এ চাল জব্দ করা হয়। তবে এখনও উদ্ধার হয়নি পাচার হওয়া ৩৬০ বস্তা চাল।
অন্যদিকে মঙ্গলবার বিকালে চাল পাচার হলেও পাচারের ঘটনা ধামাচাপা দিতে ব্যর্থ হয়ে গভীর রাতে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মুক্তা রানী সাহা থানায় অভিযোগ দায়ের করে। পরে পুলিশ তাদের আটক করে। বুধবার দুপুরে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, খাদ্য কর্মকর্তা, ডিলার ও গুদাম কর্মকর্তার যোগসাজশে ভুঞাপুর খাদ্য গুদাম থেকে চাল পাচার হয়ে আসছে। বিশেষ করে ডিলারদের নামে বিভিন্ন কর্মসূচীর বরাদ্দকৃত চাল সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ না করেই গুদাম থেকে তা ট্রাকযোগে বিক্রি করা হতো।
মঙ্গলবার দুপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী ১০ টাকা কেজি দরের দুই ট্রাক চাল পাচারের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে একটি ট্রাক আটকে দিয়ে স্থানীয় সাংবাদকর্মীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. ইশরাত জাহানকে খবর দেন।
পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা এ বিষয়ে গুদাম কর্মকর্তা মো.বেলাল হোসেনের কাছে চালান ও ডিও কপি, গেট পাশ ও ডিলারের নামের তালিকা চাইলে তিনি তা দেখাতে অপারগ হন। এ নিয়ে শুরু করেন নানা টালবাহানা। সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে জানান পাসওয়ার্ড নেই। এছাড়া নানা কিছুতেই চরম অসহযোগিতা করেন তিনি।
পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মুক্তা রানী সাহা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বিষয়টি ওসি মোহাম্মদ আবদুল ওহাবকে জানালে সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে আসেন এসআই টিটু চৌধুরী। নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে লিখিত নেয়া হয় আল আমিন ও বেলাল হোসেনের। লিখিত বক্তব্য দুই রকমের তথ্য দেন দুই জন। আল আমিন চাল পাচারের বিষয়টি স্বীকার করে দায় চাপান গুদাম কর্মকর্তার উপর। আর গুদাম কর্মকর্তা চালের বস্তার ভুল তথ্যসহ পাচারের বিষয়টিই অস্বীকার করেন।
আল আমিন ও গুদাম কর্মকর্তার বেলালের লিখিত বক্তব্যে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য এবং গুদাম কর্মকর্তা দুই রকমের লিখিত বক্তব্যে গড়মিল থাকার পরেও চলে বিষয়টি ধামাচাপা ও ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চেষ্টা চালায় জেলা খাদ্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি। রাত দশটার দিকে খোলা হয় ট্রাকের ছাউনি। ৩০ কেজি ওজনের সরকারি পাটের বস্তার পরিবর্তে একে একে বের হয়ে আসে ৫০ কেজি প্লাস্টিকের বস্তায় ২৮০ বস্তা চাল। যা গত ১১ তারিখ খুলনা থেকে এসেছে বলে নিশ্চিত করেন উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মুক্তা রানী সাহা।
এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মুক্তা রানী সাহা জানান, চালগুলো সোমবার খুলনা থেকে এসেছে। ওসি এলএসডিই চালগুলো রিসিভ করেছেন। এসব চাল গোডাউনে থাকার কথা। কিভাবে ট্রাকে করে পাচার হচ্ছে তা তিনি জানেন না। পাচার হওয়া ট্রাকের বিষয়ে বলেন সেটি তো চোখে দেখিনি তাই কিছু জানি না।
এ বিষয়ে ভূঞাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মুক্তা রানী সাহার অভিযোগের ভিত্তিতে গুদাম কর্মকর্তা বেলাল হোসেন ও নৈশ প্রহরী আল-আমিনকে আটক করা হয়েছে। তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে অভিযুক্তরা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হওয়ায় মামলাটি দুদকে রেকর্ড হবে। এ বিষয়ে দুদক টাঙ্গাইল আঞ্চলিক কার্যালয়ের সাথে কথা হয়েছে। দুদকই এর তদন্ত করবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. ইশরাত জাহান বলেন, ট্রাকসহ ২৮০ বস্তা সরকারি চাল জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করিবে। এর আলোকে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া এবং হওয়া ৩৬০ বস্তা চাল উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগীতা নেয়া হচ্ছে।