ইতিহাস হাতছানি দিচ্ছিল। ভারতের মাটিতে প্রথম আর ১৬ বছর পর আরেকটি ঐতিহাসিক জয়ের খুব কাছে গিয়েও শেষ পর্যন্ত হল না। র্যাঙ্কিংয়ে ৮৩ ধাপ এগিয়ে থাকা প্রতিপক্ষকে তাদের মাটিতে নাচিয়ে ১-১ গোলে ড্র করল বাংলাদেশ।
সল্টলেকে যুব ভারতী স্টেডিয়ামে এই ড্রয়ে ২০২২ বিশ্বকাপ ও ২০২৩ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে প্রথম পয়েন্ট পেল লাল-সবুজরা।
অবশ্য ড্রয়ে মোটেও মলিন হচ্ছে না বাংলাদেশের খেলার মাহাত্ম। খেলা না দেখে থাকলে বিশ্বাস করা কঠিন পুরো ৯০ মিনিট র্যাঙ্কিংয়ে ১০৪ নম্বরে থাকা ভারতকে কীভাবে নাচিয়েছেন বাংলাদেশি ফুটবলার। তিনটি দারুণ সুযোগ হাতছাড়া না হলে জয়ী দল হিসেবে লেখা থাকতো বাংলাদেশের নামই!
মঙ্গলবারের ম্যাচের আগে কতই না কথা হয়েছে কলকাতায়। কত গোল করবেন ভারত অধিনায়ক সুনিল ছেত্রী, তা নিয়ে হয়েছে বিস্তর আলোচনা। ভারতের আক্রমণের তোড়ে বাংলাদেশ ভেসে যাবে কিনা, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের আলোচনায় ছিল সেটিও। কিন্তু মাঠে নেমেই পাশার দান সম্পূর্ণ উল্টে দিলেন জেমি ডের শিষ্যরা।
ভারত নয়, সল্টলেকের যুব ভারতী স্টেডিয়ামের প্রায় পুরোটা সময় মাতিয়ে রাখলেন ১১ বাংলাদেশি ফুটবলার। রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতে পারে বাংলাদেশ বলে যে ধারণা ছিল ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের, তা পুরোই উল্টে দিলেন জামাল ভূঁইয়া-সাদ উদ্দিনরা। খেলেন চোখ জুড়ানো ফুটবল!
ম্যাচের প্রথম মিনিটেই বল নিয়ে ভারতের বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন লাল-সবুজ মিডফিল্ডার মোহাম্মদ ইব্রাহিম। কর্নারের বিনিময়ে বল ক্লিয়ার করে স্বাগতিকরা। যদিও সফরকারীদের থেকে পেনাল্টির আবেদন উঠেছিল। রেফারি সাড়া দেননি।
পরের মিনিটে পাল্টা আক্রমণে যাওয়া ভারত অতিথিদের গোলমুখে শট নিয়েছিল। কিন্তু বল সরাসরি গোলরক্ষক রানার গ্লাভসে জমলে বিপদ ঘটেনি।
অষ্টম মিনিটে আবারও ভারত গোলমুখে আতঙ্ক ছড়ান ইব্রাহিম। এবারও তাকে ডি-বক্সে ফেলে দিয়ে বিপদমুক্ত করেন আনাস এথাথোডিকা। এবারও বাংলাদেশের পেনাল্টি আবেদনে সাড়া দেননি সিরিয়ান রেফারি মাসুদ তুফালি। ধারাভাষ্য কক্ষ থেকে তখন আওয়াজ এটিও পেনাল্টি ছিল!
ম্যাচের ৩১ মিনিটে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল বাংলাদেশ। ক্ষিপ্র গতিতে বিপলু আহমেদকে গোলবঞ্চিত করেন ভারতীয় ডিফেন্ডার আনাস। চার মিনিট বাদে রাহুল ভেকের দুরূহ এক হেড ফিস্ট করে ফিরিয়ে বিপদমুক্ত করেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা।
পরে ৪২ মিনিটে সল্টলেকের দর্শকদের স্তব্ধ করে দেন সাদ উদ্দিন সাদ। ভারত ডি-বক্সের বাঁ-প্রান্তের বাইরে থেকে উড়িয়ে ফ্রি-কিক নেন অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। আগের ম্যাচে কাতারকে একাই রুখে দেয়া গোলরক্ষক গুরুপ্রীত সিং বাইরে বেড়িয়ে এসেছিলেন বল ফিস্ট করতে। কিন্তু বল তাকে ফাঁকি দিয়ে পৌঁছে যায় সাদের দিকে। ফাঁকায় দাঁড়ানো লাল-সবুজ ফরোয়ার্ড সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেননি। মাথায় বল ঠেলে উল্লাসে ভাসান বাংলাদেশকে।
দ্বিতীয়ার্ধের ৫১ মিনিটে দলকে দ্বিতীয় গোল এনে দেয়ার অসাধারণ সুযোগ হারান নাবীব নেওয়াজ জীবন। ডি-বক্সের বাঁ-প্রান্ত দিয়ে সোহেল রানার ক্রসে যে শট নেন জীবন, তা ভারত গোলরক্ষকের পায়ে লেগে দিক পাল্টে চলে যায় মাঠের বাইরে।
ম্যাচের ৭২ মিনিটে এই জীবনকে আরেকবার হতে হয়েছে হতাশ। ভারতীয় ডি-বক্সের বাইরে থেকে গোলরক্ষক গুরুপ্রীতের মাথার উপর দিয়ে যে চিপ করেন লাল-সবুজ ফরোয়ার্ড, তা গোল লাইন থেকে ক্লিয়ার করে দেন আদিল খান।
কিন্তু ৮৮ মিনিটে ফিরে আসে বাংলাদেশের পুরনো রোগ! অতীতে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে ম্যাচ হারা কিংবা ড্র করার ইতিহাস আছে। সল্টলেকে সেই ভূতই চেপে ধরল! আশিক কুরিনিয়ানের কর্নার থেকে আদিল খানের হেড স্তম্ভিত করে দেয় বাংলাদেশ দলকে। কাঙ্ক্ষিত গোলে নিজেদের মাটিতে হার এড়ায় ভারত।