কাল বাদে পরশু ঈদ, শ্যামলী থেকে গাবতলী পর্যন্ত ঘরে ফেরা মানুষের ঢল। শেষ মুহূর্তে দূরপাল্লা বাসের টিকিট না পেয়ে ঢাকায় চলা লোকাল বাস, গরু নামিয়ে দেয়া খালি ট্রাক, ল্যাগুনাসহ নানা রকম যানবাহনে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। গাবতলী থেকে এসব যানবাহনের গন্তব্য নবীনগর, গাজীপুর, পাটুরিয়া ঘাট। গাবতলী টু পাটুরিয়াঘাট দুইশ-তিনশ টাকা ভাড়া হাঁকানো হচ্ছে। ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডার চেয়ে গাড়িতে উঠে সিটে বসাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ঘরে ফেরা মানুষ।
বাড়ি যাবেন কিনা এমন দ্বিধা কিংবা কর্মব্যস্ততায় অনেকে আগেভাগে বাসের টিকিট কাটতে পারেননি। শেষ মুহূর্তের এই ঘরমুখো মানুষদের জন্য ‘স্পেশাল ঈদ সার্ভিস’ চালু করেছে বিআরটিসি।
রংপুর, সৈয়দপুর,ঠাকুরগাও,পঞ্চগড়ের যাত্রীদের তোলা হচ্ছে বিআরটিসির এসব বাসে। বিআরটিসি’র এই ‘ঈদ স্পেশাল’ সার্ভিসের বহরে যুক্ত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিবহনের দ্বিতল বাসগুলো।
রাজধানীর কল্যাণপুরে দূরপাল্লার বাসের কাউন্টার পাড়ায় লাগেজ, ব্যাকপ্যাক নিয়ে বাসের অপেক্ষায় শত শত মানুষ। বেশির ভাগই উত্তরবঙ্গের যাত্রী। কল্যাণপুর থেকে হানিফ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, এসআর পরিবহনের বাসগুলো ছেড়ে যাচ্ছে নির্ধারিত সময়ের এক-দেড় ঘণ্টা পর। তবু প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দময় ঈদের জন্য এই অপেক্ষাও যেনো কিছুই নয়।
এসআর পরিবহনের কল্যাণপুর কাউন্টারের দুপুরের শিফটের দায়িত্বে থাকা মাসুদুর রহমান জানান, দুপুর বিকেল পর্যন্ত যাত্রীদের নিয়ে সময়মতোই রওনা হচ্ছে তাদের বাসগুলো। তবে রাতের দিকে রাস্তায় গাড়ির চাপ এবং শেষ মুহূর্তে ঢাকা ছাড়া মানুষের চাপ বাড়বে। এই চাপ সামলাতে এসআর পরিবহনের অতিরিক্ত গাড়ি মজুদ আছে। মহাসড়কে যানজট মাত্রাতিরিক্ত না হলে বাসের সংকট হবে না।
এসআর কাউন্টারের পাশেই হানিফ,শ্যামলী পরিবহনের উত্তরবঙ্গ কাউন্টার। কাউন্টারগুলোর ভেতর বসার জায়গা নেই। তাই ফুটপাথেই অস্থায়ী যাত্রী ছাউনি বানিয়ে দিয়েছে পরিবহন প্রতিষ্ঠানগুলো।
সেখানেও জায়গা না পেয়ে ফুটপাথ ঘেষে ব্যাগ-লাগেজকেই আসন বানিয়ে পরিবার নিয়ে বাসের অপেক্ষা করছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জাকিরুল ইসলাম। বিকাল ৩ টার হানিফ পরিবহনের বাসে গাইবান্ধা যাচ্ছেন তারা। বাড়তি ভাড়া বা অন্যকোন ভোগান্তির মুখে না পড়লেও রাস্তায় যানজটের সম্ভাবনা নিয়েই শঙ্কিত তিনি।
কল্যাণপুর পাড় হয়ে টেকনিক্যাল মোড়ে গাড়ির জটলা বাড়ছে বেলা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। গাবতলীগামী লোকাল বাসে জায়গা না পেয়ে, সিএনজি অটোরিকশা,ছোট পিকআপসহ সবধরণের যানবাহনে বাস টার্মিনালে যাচ্ছে মানুষ। ফুটপাথ,রাস্তায় পিঠে-হাতে ব্যাগের বোঝা নিয়ে শেকড়ের টানে হেঁটে চলা মানুষের মিছিল।
এই শেকড়ের টানকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে তৎপর ঈদে নতুন রঙে রাস্তায় নামা পুরোনো কোচগুলো। গাবতলীর মাজার রোডের কাছের কাউন্টারগুলোর সামনে ৭’শ-৮’শ টাকায় তাৎক্ষণিক টিকিট দিয়ে বাসে তোলার তোড়জোর এখন চরমে। উপায় না পেয়ে এসব বাসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে অনেকে। “ছাদে গেলে ১’শ, ছাদে গেলে ১’শ” হাঁকডাও আছে।
তবে গাবতলী বাসটার্মিনালের নিজস্ব তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্রে বাড়তি ভাড়া, অজ্ঞান পার্টি, চুরি-ছিনতাইয়ের তেমন অভিযোগ আসছে না বলে জানিয়েছেন গাবতলী বাস টার্মিনালের ফিল্ড সুপারভাইজার মো. সাঈদ।
তিনি বলেন,‘ আজ এখন পর্যন্ত যাত্রীরা বাড়তি ভাড়ার কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ আসলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
রাজধানী ঢাকাকে ফাঁকা করে কয়েকদিনের জন্য ঘরে ফেরাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আছে ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প। মাজার রোডের মোড়ে এবং গাবতলী আন্ডারপাসের পাশেই আছে ডিএমপির অস্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার।
রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এই বাসটার্মিনালে ঈদের যাত্রীদের ভিড় বাড়ছে। গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গাবতলী টার্মিনালে র্যাব-৪ এর অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে কিছুক্ষণ পর পরই টহল দিতে বের হচ্ছেন ৩-৪ জন র্যাব সদস্য। তবে এখানেও অভিযোগ বাক্সটি শূন্য, অভিযোগ লেখার নীল মলাটের খাতাটিতেও গুরুতর কোনো অভিযোগ নেই বলে জানান অস্থায়ী ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা র্যাব কর্মকর্তা।
তিন কাশ্মীরিও বাসের অপেক্ষায়!
র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্পের পাশেই অন্যান্য যাত্রীদের চেয়ে কিছুটা আলাদা ৩ জন তরুণীর সঙ্গে দেখা হয়। সিরাত আয়িশা, ওয়াসিয়া জানজ এবং মিসবাহ ইলিয়াসের সঙ্গে পরিচিত হয়ে জানা গেলো তারা ভারতের কাশ্মীর থেকে বাংলাদেশে এসেছেন। মানিকগঞ্জের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়েন তারা। ঢাকা থেকে কলেজের হোস্টেলে ফিরতে বাসের অপেক্ষা করছেন।
আপনাদের চারপাশে এই যে এতো মানুষ সবাই বাড়ি ফিরছে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে, আপনাদের ঈদ কিভাবে কাটবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মিসবাহ বলেন,‘এবার বাড়ি (কাশ্মীর) যাওয়া হচ্ছে না। হোস্টেলেই আমরা কয়েকজন এক সঙ্গে ঈদ উপলক্ষে রান্না করবো, সময় কাটাবো। কাশ্মীরে নিজেদের বাড়িতে ঈদে যেসব খাবার রান্না হয় একেবারে সেসব খাবার এখানে না পেলেও এবার সেরকম রান্না করার চেষ্টা করবো।’