শেষ ওভারের শেষ বলে ছয় মেরে নিধাস ট্রফিতে ভারতকে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছেন দিনেশ কার্তিক। সৌম্য সরকারের করা ওই বলটিতে তাদের দরকার ছিল পাঁচ রান। রোহিত শর্মা আউট হওয়ার পর থেকে শেষ পাঁচ ওভারে ম্যাচ পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ভারত জিতেছে চার উইকেটে। বাংলাদেশ এই নিয়ে পাঁচটি বহুজাতিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে হারল।
নিধাস ট্রফির আগে নিজেদের দেশে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরে যায় বাংলাদেশ। ২০০৯ সালের ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালেও হারতে হয়েছিল। এছাড়া ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনাল, ২০১৬ টি-টুয়েন্টি এশিয়া কাপের ফাইনালেও ব্যর্থতা সঙ্গী হয়েছিল।
ওই পাঁচ ওভারে যা ঘটেছে:
এই ৩০ বলে ভারতের দরকার ছিল ৫২। ক্রিজে দুই তরুণ ব্যাটসম্যান মনীষ পাণ্ডে এবং বিজয় শঙ্কর।
১৬তম ওভারে মোস্তাফিজ দিয়ে যান আট রান। পরের ২৪ বলে তাদের দরকার ৪৪। সাকিব দ্বিতীয়বার সৌম্যকে বলে ডাকেন। আগের ওভারে ১১ দিয়ে যাওয়া সৌম্য এবার দেন ৯।
শেষ ১৮ বলে ভারতের দরকার ৩৫। মোস্তাফিজ তার শেষ ওভার করতে আসেন। স্ট্রাইকে বিজয় শঙ্কর। পরপর চার বল ডট। পঞ্চম বলেও পরাস্ত শঙ্কর। পুল করতে গিয়ে হাতে লাগিয়ে এক রান নেন। শেষ বলে বড় শট খেলেন মনীষ পাণ্ডে। লংঅনে সাব্বিরের হাতে ধরা! ২৭ বলে ২৮ রানে শেষ হয় পাণ্ডের ইনিংস।
১২ বলে দরকার ৩৪। আক্রমণে রুবেল। স্ট্রাইকে নতুন ব্যাটসম্যান দিনেশ কার্তিক। ইয়র্কার মারতে গিয়ে ফুলটস। লংঅন দিয়ে ছয়! পরের বল ওয়াইড ইয়র্কার দিতে গিয়ে হাফভলি। লংঅন দিয়ে চার! তৃতীয় বল শর্টপিচ। স্কয়ার লেগ দিয়ে ছয়। পরের বল অফস্ট্যাম্পের বাইরে স্লোয়ার। ডট। পরের বল লংঅফে ঠেলে দুই। শেষ বলে আবার ইয়র্কারের চেষ্টা। এবার স্কুপ করেন অভিজ্ঞ কার্তিক। লংলেগ অঞ্চল দিয়ে দিয়ে চার! এক ওভারে ২২!
শেষ ওভারে দরকার ১২। সাকিব আবার সৌম্যকে ডাকেন! স্ট্রাইকে শঙ্কর। লেগস্ট্যাম্পে বল। ওয়াইড! পরের বল অফস্টাম্পের অনেক বাইরে। মাপা লেন্থের দারুণ ডেলিভারি। ডট। দ্বিতীয় বল থেক এক। স্ট্রাইকে কার্তিক। তিন বলে দরকার ৯। চাপে ঘেমে একাকার সৌম্য। সাকিব পরামর্শ দিচ্ছেন। স্লোয়ার ডেলিভারি। কাভারের গ্যাপ খুঁজে নেয় কার্তিকের ব্যাট। চার! দুই বলে দরকার পাঁচ। স্ট্রাইকে শঙ্কর। হাফভলি! লংস্টপ অঞ্চলে সাকিব আর মিরাজ বলের কাছে। সাকিবের হাত ফসকে বল যায় মিরাজের কাছে। ক্যাচ!!! শেষ বলে দরকার পাঁচ। স্ট্রাইকে কার্তিক। ওয়াইড হাফভলি। এক্সট্রা কাভার দিয়ে ছয়!!!
এর আগে বাংলাদেশ টস হেরে আগে ব্যাট করে ১৬৬ রান তোলে। সাব্বির রহমান ৭৭ রানের দারুণ একটি ইনিংস খেলে দলকে লড়াইয়ের স্কোর গড়ে দেন।
জবাব দিতে নেমে প্রথম দুই ওভারে ২৪ রান তুলে ফেলে ভারত। এর ভেতর রোহিত শর্মার ছিল ২১। তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে সাকিব এসে ধাওয়ানকে ফেরান। ধাওয়ান (১০) উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে মিডউইকেটের উপর দেয় ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মিডঅনে ধরা পড়েন বদলি ফিল্ডার আরিফুল হকের হাতে।
চতুর্থ ওভারে রুবেলর করা তৃতীয় বলে সবাইকে অবাক করে রায়নার কট বিহাইন্ড আম্পায়ার ওয়াইড ঘোষণা দেন। উইকেটরক্ষক মুশফিক আর মিরাজের ডাকে সাড়া দিয়ে অধিনায়ক সাকিব রিভিউ নেন। থার্ডআম্পায়ার জানিয়ে দেন বল রায়নার (০) ব্যাটেই লেগেছিল।
দশম ওভারের চতুর্থ বলে রুবেল লোকেশ রাহুলকে ফেরান। শর্টবলে পুল করতে গিয়ে ডিপস্কয়ার লেগে সাব্বিরের হাতে ধরা পড়েন ১৪ বলে ২৪ করা রাহুল।
সাকিব ৪ ওভারে ২৮ দিয়ে এক উইকেট নেন। মিরাজ ১৭ দেয়ার পর আর বলে আসতে পারেননি। রুবেল ৩৫ রান দিয়ে দুই জনকে ফেরান। অপু ৩২ রান দিয়ে এক উইকেট। মোস্তাফিজও এক উইকেট। তিনি রান দেন ২১। সৌম্য এক উইকেট নিতে ৩ ওভারে খরচ করেন ৩৩।
শুরুতে দারুণ ব্যাট করা রোহিত ফেরেন ভারতকে ৯৮ রানে রেখে। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে অপুকে বড় শট খেলতে গিয়ে লংঅনে মাহমুদউল্লাহর হাতে ধরা পড়েন। ৪২ বলে চারটি চার, তিনটি ছয়ে ৫৬ করেন রোহিত।
এরপর ওই নাটক। যার শেষ হয়েছে বাংলাদেশের চোখের জলে!