মাঠজুড়ে ৫৫০-এর বেশি পাস! গোল বরাবর ৬-এর বেশি শট। একের পর এক আক্রমণ। সবই হয়েছে। শুধু হয়নি একটি গোল। যে গোলে প্রায় নিশ্চিত হতে পারত আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ স্বপ্ন! মেসিদের মাথা নিচু করে দেওয়া এক গোলশূন্য ড্রয়ে এখন উল্টো হাতছাড়া হওয়ার গভীর শঙ্কায় আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ যাত্রা। সেখানে ড্রয়ে নিজেদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন ভালোভাবেই জিইয়ে রাখল পেরু।
জিতলেই বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বের হাতছানি। হারলেই ছিটকে যাওয়ার শঙ্কা। এমন সমীকরণের ম্যাচে স্নায়ুচাপটা উতরে যেতে পারল না আর্জেন্টিনা। ঘরের মাঠের গোলশূন্য ড্রয়ের পর বিশ্বকাপে যেতে এখন অন্যদের ফলের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে আলবিসেলেস্তাদের। সঙ্গে জিততে হবে নিজেদের শেষ ম্যাচেও।
আগামী ১০ অক্টোবর ইকুয়েডরের কিটোতে সাড়ে ৯ হাজার ফুট উঁচুতে গিয়ে জয় নিয়ে ফেরাটা ভীষণ কঠিনই হবে আর্জেন্টিনার জন্য। পয়েন্ট টেবিলের ৬ নম্বরে এখন আর্জেন্টিনা। সরাসরি বিশ্বকাপে জেতে চাই সেরা চারে থাকা, আর পাঁচে থাকলে মিলবে ওশেনিয়া অঞ্চলের সেরা দলের সঙ্গে প্লে-অফের সুযোগ।
বোকা জুনিয়র্সের মাঠ লা বোমবোনেরায় দর্শকরা খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করতে সবই করেছেন। শুরু থেকে একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে গেছে মেসিরা। ১৪ মিনিটেই অধিনায়কের একটি শট প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে দিক পাল্টেছে।
দিবালা ও ইকার্দিকে সরিয়ে রেখে মেসির সঙ্গে ডারিও গোমেজ এবং বোকা জুনিয়র্সের স্ট্রাইকার দারিও বেনোদেত্তোকে আক্রমণ ঝালানোর সুযোগ দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনা কোচ। আক্রমণও জমছিল।
ম্যাচের ২৭ মিনিটে গোলের অসাধারণ সুযোগ হেলায় হারিয়েছেন অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া। মেসির বাড়ানো বলে নিয়ন্ত্রণ হারানোর আগে ডি মারিয়ার পায়ে ঠেলে দেন বেনোদেত্তো। সেই বল তাড়াহুড়োয় পেনাল্টি বক্সের বাইরে থেকে বার উঁচিয়ে মাঠের বাইরে পাঠান পিএসজি মিডফিল্ডার।
পরে কর্নার থেকে বল পেয়ে নেওয়া মেসির একটি শট এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে দিক পাল্টায়। ম্যাচের ৩৯ মিনিটে ভাগ্যদোষে গোল পাওয়া হয়নি মেসির। ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া অধিনায়কের শটটি বাম বার ঘেঁষে চলে গেছে বাইরে।
বিরতির পর মাঠে ফিরে প্রায় গোল পেয়েই যাচ্ছিল আর্জেন্টিনা। ৪৬ মিনিটে মেসির পাসে বল পেয়ে বেনোদেত্তো শট নিলে ঠেকিয়ে দেন পেরু গোলরক্ষক গালেজে। পরে মেসির ফিরতি শট বারে লেগে ফিরেছে।
পরের মিনিটে লুকাস বিগলিয়ার ২৫ গজ দূর থেকে নেয়া রকেট গতির শট ঠেকিয়েছেন পেরু গোলরক্ষক। ৫৭ মিনিটে দলকে গোল এনে দেওয়ার অসাধারণ সুযোগ হারিয়ে বসেছেন আলেজান্দ্রো গোমেজ। মেসির রক্ষণচেরা পাস থেকে বল পেয়ে পেরু গোলরক্ষকের গা বরাবর মেরে বসেন তিনি।
ম্যাচের ৬১ মিনিটে একই দোষে দুষ্ট এমিলিয়ানো রিগোনি। মেসির দারুণভাবে বানিয়ে দেওয়া বল সুবিধা মত জায়গায় পেয়েও মাঠের বাইরে ফেলেছেন এই মিডফিল্ডার। ৬৯ মিনিটে আবারও গোল হারানো নাটকের পুনরাবৃত্তি। বোকা জুনিয়র্স স্ট্রাইকারের নিচু শট আটকে গেছে পেরু গোলরক্ষকের বিশ্বস্ত গ্লাভসে।
স্ট্রাইকার-মিডফিল্ডারদের ব্যর্থতায় গোল বরাবর শট নিয়েছেন হাভিয়ের মাশ্চেরানোও। ৭৭ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া তার শট আটকে গেছে পেরুর নায়ক গোলরক্ষক গালেজের হাতে।
দারুণ খেলার এক ম্যাচে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত আক্রমণ চালিয়েও দলকে গোল এনে দিতে পারেননি মেসি। ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে দুদফা আক্রমণ চালিয়েছেন। তাতে দলের বিশ্বকাপ স্বপ্ন ম্লান হয়ে যেতে দেখা ছাড়া ভিন্ন ফল আসেনি।
দিনের অন্য দুই খেলায় চিলির কাছে ২-১ গোলে হেরে বসেছে ইকুয়েডর। আর প্যারাগুয়ের কাছে ১-২ গোলে হার দেখেছে কলম্বিয়া।