চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

শেখ হাসিনা: ধরিত্রীর আদরের কন্যা

গত শতাব্দীর প্রথমার্ধে (১৯২০ সালের ১৭ মার্চ) বাঙালির জাতি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, জাতির পিতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নের স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয়ের সন্ধান যেমন অলীক কল্পনাই থেকে যেত; তেমনি তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৪৭ এ জন্মেছিলেন এবং ’৭৫-এর ঘাতক বুলেট থেকে বেঁচে থেকে ঝড়ো হাওয়ায় নিপতিত জাহাজের হাল ধরেছিলেন বলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে এগিয়ে যাবার রোল মডেল।

শুধু তাই নয়, তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি আজ বিশ্বে সম্মান ও মর্যাদার শীর্ষ অবস্থানে অধিষ্ঠিত। একাত্তর, পঁচাত্তর ও ২০০৪-এর ঘাতকরা পরাভূত। ঘাতকরা ১৯ বার তাঁকে হত্যার চক্রান্ত করে, কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ কৃপা যে তিনি তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়ক, মধ্যম আয়ের দেশ-এর শীর্ষ কাতারে নিয়ে যেতে শক্তি যুগিয়েছেন।

আজ ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭০তম জন্মদিন। ৬৯ বছরের এক বর্ণাঢ্য অথচ যাপিত জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে অন্ধকারের জীব এবং মৃত্যুর ঝুঁকি উপেক্ষা করে অদম্য সাহসিকতার সঙ্গে আজ তিনি ৭০-এ পা রাখলেন। আসুন আমরা সবাই মিলে এই শুভক্ষণে পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে তাঁর সুস্থ র্দীঘজীবন কামনা করি। জন্মদিনের শুভেচ্ছা- হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ, শুভ জন্মদিন প্রিয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু যে বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি (১৯৪৭ সালে) অর্জন করার পর বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন ও পাকিস্তান সৃষ্টিতে আহত হয়ে বাঙালির আপন জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংকল্প নিয়ে ঢাকায় এলেন, সে বছর অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তাঁর জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা জন্ম নিলেন তাঁরই জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। টুঙ্গিপাড়া তখনও জলে-স্থলে বনে-বাদাড়ে আবহমান বাংলার এক ছায়া সুনিবিড় গ্রাম। বাংলার হাজার নদীর দুই নদী একদিকে মধুমতি অন্যদিকে বাঘিয়ার (স্থানীয় ভাষায় বাইঘার নদী) জল-প্লাবন ও পলিতে উর্বর কৃষকের ফসলি জমি সোনালী-সবুজে ভরা মাঠ আর খাল-বিল জলাভর্তি মাছেদের জলকেলি এই ছিল টুঙ্গিপাড়া। বছরের বেশির ভাগ সময় অনেক এলাকায় চলাচলের বাহন ছিল নৌকা। এখানেই শৈশব কেটেছে শেখ হাসিনার।

গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ঢাকায় এসে আজিমপুর গার্লস হাই স্কুল,গভ: ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বদরুন্নসো গার্লস কলেজ ) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ‘হাসিনা শেখ’ (তখন এই নামেই পরিচিত ছিলেন) আজকের শেখ হাসিনা। ‘ ৭৫-এর পর পদে পদে অন্ধকারের সরীসৃপ এবং মৃত্যু-ঝুঁকি মোকাবিলা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অভাব-অনটন ক্ষুধার রাজ্যে সফল নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্ষুধা মুক্ত এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে এনেছেন যা আজ বহু রাষ্ট্রনেতা বহু দেশের কাছে ঈর্ষণীয়। বলা যায়, শেখ হাসিনা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন দূরদর্শী রাজনীতি দিয়ে কিভাবে একটি দরিদ্র দেশকে সমৃদ্ধির মহাসড়কে তুলে আনা যায়।

এক ডজনেরও বেশি খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডি-লিট, সেরেস কন্যা, সাউথ-সাউথ কন্যা এবং সর্বশেষ জাতিসংঘ ঘোষিত ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্যা আর্থ’ অর্থাৎ ‘ধরিত্রীর আদরের’ কন্যা। আজ হতে শত বর্ষ পরে যে তরুণ তরুণীরা বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করবেন, তাদের কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পাশে একটি নামই শোভা পাবে, সে নাম ‘ধরিত্রীর আদরের কন্যা’ শেখ হাসিনা -আর কেউ নয়। এখানইে শেখ হাসিনার তুলনা তিনি নিজে। শেখ হাসিনাকে আজকের পর্যায়ে উঠে আসতে অনেক বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। আগেই বলেছি, এ পর্যন্ত তাঁকে হত্যার জন্যে ১৯ বার হামলা করা হয়েছে। এমনকি বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া নিজ দলের মধ্য থেকেও বারবার আঘাত এসেছে। তিনি অটল থেকেছেন অভীষ্ট লক্ষ্যে।

’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর প্রথমে মিজানুর রহমান চৌধুরীরা দল ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তিনি ১৯৮১ তে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ৬ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে তৎকালীন মিলিটারি জিয়ার বাধা তোয়াক্কা না করে দেশে ফিরে আসার পর প্রথমে আবদুল মালেক উকিল- আবদুর রাজ্জাকরা ও আরো পরে ড. কামাল হোসেন ও মোস্তফা মহসিন মন্টুরা দল ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বরং নিজেরাই ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছেন। শেখ হাসিনা দলীয় সাংগঠনিক নেতৃত্বে দানে যেমন সফল তেমনি দলে ও সরকারে নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রেও শতভাগ সফল।

যে আমেরিকা আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে চক্রান্ত করেছে, এমনকি সাম্প্রতিককালে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণে বা জিএসপি সুবিধার ক্ষে্রেে প্রতিবন্ধকতা রচনা করেছে, সেই আমেরিকারই প্রতিষ্ঠান আই.আর.আই (ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট) যা প্রধানত দেশে দেশে নেতৃত্ব, গণতন্ত্র, আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ওপর জরীপ করে, তারাও সাম্প্রতিক জরীপের ফলাফলে বলতে বাধ্য হয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রিয়তা ৬২ শতাংশ এবং ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা ৬৭ শতাংশ।

জনপ্রিয়তার দিক থেকে খালেদা জিয়াসহ অন্যরা তাঁর ধারে কাছেও নেই। র্বতমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭০ বছর, মাথাপিছু আয় প্রায় ১৫০০ মার্কিন ডলার, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলারের মত, খাদ্যোৎপাদন ৪ কোটি টন; শিক্ষার হার ৬২ শতাংশ, মৎস্য উৎপাদন বাংলাদেশ বিশ্বে ৪র্থ, এমজিডি বাস্তবায়নের ক্ষে্রেে বাংলাদেশ এ অঞ্চলে সবার শীর্ষে, জিডিপির হার বাড়ে প্রায় ৭ এর কাছাকাছি, বিদেশীরা বলছেন ৬ দশমিক ৭ শতাংশ, নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে কি জনপ্রতিনিধিত্ব কি শিক্ষা কি প্রশাসন কি জুডিসিয়ারি– সব ক্ষেত্রে নারীরা শীর্ষস্থানে উঠে এসেছেন।

এ মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও বিরোধী নেতা নারী, বাংলাদেশের হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতির আসনে নারী, প্রশাসনের শীর্ষ পদ সচিব নারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর নারী, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীতে উচ্চ পদে নারী, এ মুহুর্তে ৩৫০ আসনের পার্লামেন্টে ৭০ জন নারী, মেয়র, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ সর্বত্র নারীর পদচারণা। এসবই সম্ভব হয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন ও মর্যাদা প্রদানের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার আন্তরিক সদিচ্ছার কারণে।

বস্তুত নারী শিক্ষা ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় মহিয়সী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত, সর্বজন শ্রদ্ধেয়া বেগম সুফিয়া কামালের সারিতে শেখ হাসিনার নাম এখন। এ মুহূর্তে ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে প্রায় ১০ কোটি সেল ফোন ব্যবহৃত হচ্ছে, সাফল্যজনকভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে শেখ হাসিনার সরকার।

এইতো গেল একদিক, আরেকদিক হল অবকাঠামো উন্নয়ন ক্ষত্রেে বিদ্যুতায়নের ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে আজ যে কোনো সময় ও কালের চেয়ে বেশি প্রাণচাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছে। আজ শহর-গঞ্জের দিন মজুরের চেয়ে গ্রামের কৃষি, অবকাঠামো ও পরিবহন শ্রমজীবীরা বেশি রোজগার করছে। শেখ হাসিনা গ্রামীণ জীবনকে এমন পর্যায়ে তুলে এনেছেন যেখানে মানুষ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে যেমন স্বাস্থ্য সেবা দোরগোড়ায় পাচ্ছেন, তেমনি অন-লাইন কেন্দ্রের মাধ্যমে বিদেশে কর্মরত স্বামী সন্তানের সাথে যেমন সরাসরি কথা বলতে পারছেন তেমনি ছাত্রছাত্রীরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কিংবা চাকরির আবদেন বা ব্যবসায়ীরা গ্রামে বসে অনলাইনে টেন্ডার তথা ব্যবসায়ে অংশ গ্রহণ করছেন।

৭-৮ বছর আগে যে উত্তরবঙ্গ ছিল ভয়াবহ মঙ্গা কবলিত সেখানে ‘মঙ্গা’ শব্দটিই আজ হারিয়ে গেছে। মানুষ দু’ বেলা পেটপুরে খেতে পারছে, আনন্দময় জীবন যাপন করতে পারছে। আমাদের কৃষি ও মৎস্য গবেষক ও বিজ্ঞানীগণ আমাদের বিলুপ্রাপ্ত কৃষিপণ্য এবং মৎস্য পুনরুদ্বার বা পুনঃপ্রজন্ম গবেষণায় অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে চলেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে আজ রক্তপাত নেই, বরং কমলা, আঙ্গুর, আপেল, মাল্টা, স্ট্র-বেরী প্রভৃতি বিদেশী ফলও প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হচ্ছে, বাজারজাত হচ্ছে। টেক্সটাইল এবং গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির প্রসারের সুফল হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের পোশাক-আশাকেও অভাবনীয় পরিবর্তন এসেছে। এসব কিছুর কৃতিত্ব শেখ হাসিনাকে দিতে হবে। যারা দেবে না তারা অন্ধ। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতা হত্যার বিচার এবং ৩৮ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের শহীদানের ঋণ পরিশোধ ও জাতির আকাংখা অনুযায়ী একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অনুষ্ঠান ও অপরাধীদের শাস্তি প্রদানেও তাঁকে কৃতিত্ব ও ধন্যবাদ দিতে হবে।

একইসঙ্গে শেখ হাসিনা ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করে যেভাবে সাহসিকতার সাথে আল-কায়েদা, আইএস, বোকো হারাম, মুসলিম ব্রাদারহুড বা তালেবানদের এজেন্ট জামাত-শিবির, হিযবুত তাহরীর হিযবুল মুজাহিদিন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হামযা ব্রিগেড-এর মত জঙ্গিদের মোকাবিলা করে চলেছেন, তা বিশ্বের কাছে এক বিস্ময়। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস বা জলবায়ু পরিবর্তনে তার ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে ।

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে শেখ হাসিনা আজ দক্ষতায়, মেধায়, প্রজ্ঞায়, দূরদর্শীতায় সবাইকে পেছনে ফেলে নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী। হ্যাপি বার্থ ডে টু-ইউ, শুভ জন্মদিন ধরিত্রীর আদরের কন্যা শেখ হাসিনা।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)