বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার জন্মদিন ১৩ সেপ্টেম্বর। শেখ রেহানার জীবনালেখ্য নিয়ে হয়তো বেশি কিছু জানা যায়নি, তবে জীবনের গভীরতা অনুধাবন করা যায় ব্যাপকভাবে। কারণ, তার সাদামাটা জীবনচরিত এবং অতিথিপরায়ণতা সকলের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বাংলার সাধারণ জনগোষ্ঠীর মতই জীবনাচরণ করে থাকেন। চরিত্রে কখনও আদিখ্যেতা কিংবা অহংকার মনোবৃত্তি পোষণ করেননি। নীরবে নিবৃত্তে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, সংগ্রাম করে যাচ্ছেন জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে। সুযোগ্য মায়ের যোগ্য উত্তরসূরী শেখ রেহানা, মা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব পর্দার অন্তরালে থেকে বঙ্গবন্ধুকে দিয়েছিলেন সাহস ও অনুপ্রেরণা যার ফলশ্রুতিতে শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু হতে পেরেছিলেন। আর এখানে শেখ রেহানার ভূমিকা আরও সুস্পষ্ট, বোন শেখ হাসিনা আজ বিশ্ব নেতৃত্বের অংশীদার হতে পেরেছেন এবং তার পিছনে নিঃসন্দেহে ভূমিকা রয়েছে শেখ রেহানার।
শেখ রেহানার ইতিবাচক ভূমিকার কারণেই শান্তির আলোকবর্তিকা হাতে বিশ্বময় শেখ হাসিনা। আমাদের নিবন্ধের আলোকপাত এখানেই, শেখ রেহানা বেগম মুজিবের পরিপূরক হয়ে উঠেছেন তার কর্মে এবং যোগ্যতার মাপকাঠিতে। বঙ্গবন্ধু থাকা অবস্থায় সংবাদমাধ্যমে খুবই কম এসেছে ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের নাম, কিন্তু পরবর্তীতে অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বেগম মুজিবের ভূমিকার কথা তুলে ধরেছেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু। কিন্তু জীবিত থাকাবস্থায় কখনও বেগম মুজিবকে ফ্রন্টলাইনে দেখা যায়নি। আড়ালে থেকে তিনি নিজের কাজটাই ঠিক মতো করেছেন দেশকে স্বাধীনতা পাইয়ে দেবার আশায়।
বিভিন্ন পুস্তিকায়, গবেষণা গ্রন্থে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর জেলে থাকা অবস্থায় বেগম মুজিব কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন সাপেক্ষে সুপ্রতিষ্ঠিত তথা ইতিবাচক ফল এনেছে তেমনি দেখা যায়। শেখ রেহানাও ঠিক তেমনিভাবে তার বোন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতির বিপদসংকুল পর্যায়গুলোতে আগলে রাখেন এবং সঠিক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকেন। নিজের ভেতরে সামান্য সময়ের জন্য হলেও ক্ষমতার লোভ উসকে উঠেনি।
ইতিহাসবিদগণ যখন আজ থেকে ১০০ বছর পরে বাংলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের ইতিহাস রচনা করবেন সে সময়ে শেখ রেহানার নাম মর্যাদাপূর্ণভাবে বাংলার ইতিহাসে প্রতিষ্ঠিত হবে। মায়ের মত শেখ রেহানার গৃহীত পদক্ষেপগুলো সঠিক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যার শাস্তির বিষয়ে বিশ্বজনমত গড়ার লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করেন শেখ রেহানা এবং আজ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে কিছুটা হলেও দায়মুক্তির পথ খুঁজে পেতে পারে।
আমরা দেখেছি ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় বেগম মুজিবের গৃহীত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধুকে বিনা শর্তে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিলো তৎকালীন সামরিক সরকার। ১/১১ এর সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যে বিভক্তিকরণ দেখা দিয়েছিল তা রুখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন শেখ রেহানা। সে সময়ে পর্দার আড়ালে থেকে দলের ঐক্য বজায় রাখতে ব্যাপক ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। তিনি যদি সে সময় দলকে আগলে না রাখতেন তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো তা অনুমান করাটাও বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত হিসেবে বিবেচিত হত।
নিরহংকারের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ শেখ রেহানা। বোন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী অথচ চরিত্রে তার কোন লেশ নেই। পাবলিক গাড়িতে করে নিজের অফিসে আসা যাওয়ার খবর সংবাদ মাধ্যমে দেখেছি আমরা। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরিফের সাথে কয়েকবার সাক্ষাত হয়েছিলো আমার। ওনার কাছ থেকে শুনেছি, মায়ের ডুপ্লিকেট কপি শেখ রেহানা। যে কাউকে সহজেই আপন করে নেওয়ার মোক্ষম ক্ষমতা পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর জীবিত দুই কন্যা। যে কোন সময়ে বিনা পারমিশনে দেখা করা যায় প্রধানমন্ত্রীর সাথে এবং শেখ রেহানার সাথে।
বৃটেনের যে কোন বাঙালি নাগরিক শেখ রেহানার কাছে নিমেষেই যেতে পারেন। কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহের দৃষ্টান্ত হিসেবে তিনি পাথেয় হয়ে থাকবেন। একবার ভাবা যায়, নিজের বোন প্রধানমন্ত্রী অথচ তিনি অন্যের অফিসে কাজ করেন। সততার এমন দৃষ্টান্ত বিরল এবং শেখ রেহানা তা স্থাপন করেছেন। মানবিক মানুষ হিসেব তিনি অনন্য। বঙ্গবন্ধুর পরিবার বাংলার মানুষের সুখে-দুখে সবসময় থেকেছে এবং এ বিষয়টাতে বোন প্রধানমন্ত্রীকে তিনি উৎসাহ দিয়েছেন, প্রয়োজনে পরামর্শ দিয়েছেন।
সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের নির্মম নির্যাতনের চিত্র সচক্ষে দেখতে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কক্সবাজারের উখিয়ায় গিয়েছেন এবং রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বোন শেখ হাসিনাকে সাহায্য করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য বিভিন্ন বিষয়ে উপদেষ্টা নিয়োগ করা ছিলো এবং সবথেকে বড় উপদেষ্টা ছিলো ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। এবং এ বিষয়টি বঙ্গবন্ধু তার কাছের মানুষদের কাছে উল্লেখ করেছিলেন।
আমার মনে হয়, এখন শেখ হাসিনার সব থেকে প্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা শেখ রেহানা। জাতির দুর্যোগ এবং ক্লান্তিলগ্ন অবস্থায় সব সময় তিনি সদুপদেশ দিয়ে থাকেন এবং বাস্তবায়ন সাপেক্ষে সফল হয়েছে সিদ্ধান্তগুলো। অভিভাবক হিসেবে ও তিনি অনন্য।
বড় মেয়েকে বৃটেনের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করেছেন। লেবার পার্টি থেকে দুবার এমপি হয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। ছেলে আওয়ামী লীগের গবেষণা কাউন্সিল সিআরআই এর সাথে যুক্ত। সিআরআই থেকে প্রকাশিত বইগুলোতে নিজের মুন্সিয়ানার ছাপ দেখিয়েছেন ববি। বঙ্গবন্ধুকে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার নিমিত্তে নিরলস চিত্তে কাজ করে যাচ্ছেন। ছোট মেয়ে এখনো লেখাপড়া করছেন। সুতরাং অভিভাবক হিসেবে তিনি অনন্য।
শুধু কি তাই, প্রধানমন্ত্রীর ছেলেমেয়েদের মানুষ করার ব্যাপারেও তিনি জোরালো ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি শেখ হাসিনাকে বলতেন, আপা তুমি বড়, তাই তুমি রাজনীতিটা কর আর আমি তোমার ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করি। আজকে শেখ হাসিনার ছেলেমেয়েরা বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন এবং তার ফলাফল আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ। আর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ অটিজম ধারণাটিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননা পেয়েছেন। এ সব কৃতিত্বের ভাগীদার শেখ রেহানাও।
বহুমুখী গুণের অধিকারী, মানবিক মানুষ শেখ রেহানার জন্মদিনে শোষিত মানুষের পক্ষ থেকে অভিনন্দন। আশা রাখছি, তিনি তার মতো পর্দার আড়ালে থেকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়তে বোন শেখ হাসিনাকে অবিরত পরামর্শ, সহযোগিতা ও উৎসাহ প্রদান করবেন। বাংলা এবং বাঙালির প্রয়োজনে এমন নির্মোহ মানুষের খুবই প্রয়োজন।
তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে সংগ্রাম করে জীবন জয়ী হওয়া যায়, রিফিউজি হিসেবে ছিলেন তিনি, তারপরেও টিকে ছিলেন জীবন সংগ্রামে। ৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর দুর্বিষহ জীবন যাপন করেছিলেন, অসীম সাহস এবং সক্ষমতার পরিচয় দেখিয়ে তিনি অনেক জায়গায়ই সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি দীর্ঘজীবী হন এবং বাংলার মানুষের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাবেন এমনটাই প্রত্যাশা আজকের দিনে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)