চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

শেখ রেহানা: এক প্রেরণাদায়ী সহচর

একজন সাধারণের মতই জীবনযাপন করেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা। যেন একদম সাদাসিধে একজন নারী । চরিত্রে কখনও আদিখ্যেতা কিংবা অহংকার মনোবৃত্তি পোষণ করেননি। দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন নীরবে নিভৃতে। সংগ্রাম করে যাচ্ছেন জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে। সুযোগ্য মায়ের যোগ্য উত্তরসূরি তিনি। মা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব পর্দার অন্তরালে থেকে বঙ্গবন্ধুকে দিয়েছিলেন সাহস ও অনুপ্রেরণা। যার অনুপ্রেরণায় শেখ মুজিব হতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। আর এখন পর্দার অন্তরালে বড় বোন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাশে থেকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি হলেন শেখ রেহানা, জাতির পিতার কনিষ্ঠ কন্যা।

শেখ রেহানার ইতিবাচক ভূমিকার কারণেই শান্তির আলোকবর্তিকা হাতে বিশ্বময় শেখ হাসিনা। শেখ রেহানা বেগম মুজিবের পরিপূরক হয়ে উঠেছেন তার কর্মে এবং যোগ্যতার মাপকাঠিতে। শেখ রেহানার জীবনালেখ্য নিয়ে হয়তো বেশি কিছু জানা যায়নি, তবে জীবনের গভীরতা অনুধাবন করা যায় ব্যাপকভাবে। কারণ, তার সাদামাটা জীবনচরিত এবং অতিথিপরায়ণতা সবার নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে ঘরোয়া আলোচনায় বলেন যে, শেখ রেহানা ছাড়া তিনি অচল, শেখ রেহানা ছাড়া তিনি পরিপূর্ণ নন। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা নন তিনি। তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দুঃসময়ে, বিভিন্ন ক্রান্তিকালে তিনি যেন আশা-ভরসার স্থান। বিশেষ করে শেখ রেহানার কথা উচ্চারণ হলে ২০০৭-এর ওয়ান ইলেভেনের কথা দৃশ্যপটে সামনে চলে আসে। সেসময় আওয়ামী লীগকে বিভক্তির হাত থেকে বাঁচাতে, শেখ হাসিনার মুক্তির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে এবং আন্তর্জাতিক মহলে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে শেখ রেহানাই মূখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।

যদিও তিনি রাষ্ট্রীয় কোনো পদে বা কর্মকাণ্ডে জড়িত নন। কিন্তু আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জটিল সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার সঙ্গে পরামর্শ করেন। শেখ হাসিনা ছোটবোন শেখ রেহানার মধ্যে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ছায়া দেখতে পান। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান যখন বাংলাদেশের মুক্তির আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, ছয় দফা থেকে শুরু করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৭৯-এর গণআন্দোলনে জীবন বাজি রেখেছিলেন বাঙালির মুক্তির জন্য- সেসময় বঙ্গবন্ধুকে আগলে রেখেছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। বিশেষ করে, সেসময় আওয়ামী লীগের সব ধরনের সংকটে বঙ্গমাতার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত সাহসী এবং সপ্রতিভ। প্যারোলে মুক্তি নিয়ে গোলটেবিল বৈঠকে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল বঙ্গমাতার। আওয়ামী লীগ যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলাকালে ছিন্নভিন্ন, দলের শীর্ষ স্থানীয় সফল নেতাকর্মী যখন কারান্তরীণ, তখন বঙ্গমাতাই আওয়ামী লীগের কোনো পদে না থেকেও দলকে আগলে রেখেছিলেন। নেতাকর্মীদের সহায়তা করেছিলেন এবং আন্দোলনের জন্য দলকে সংগঠিত করেছিলেন। কিন্তু তিনি কখনোই কোনো পদে ছিলেন না।শেখ রেহানা-জন্মদিন

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই একাধিকবার বক্তৃতায় বলেছেন, ৭ মার্চের ভাষণের ক্ষেত্রে বঙ্গমাতা মুজিবের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। তিনিই জাতির পিতাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন তার মনের মধ্যে যা আসে তা বলার জন্য। ঠিক একইভাবে শেখ হাসিনাকে ছায়ার মতো আগলে রেখেছেন শেখ রেহানা। শেখ রেহানাই হলেন শেখ হাসিনার অভিভাবক। তিনি শেখ হাসিনাকে শাসন করেন, পরামর্শ দেন, নিঃসংকোচিত্তে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ান। রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ হাসিনা অত্যন্ত দক্ষ, দূরদর্শী হলেও ব্যক্তিজীবনে তিনি নিজের প্রতি মোটেও যত্নশীল নন। প্রায়ই তিনি তার ওষুধপথ্য খেতে ভুলে যান, খাওয়া-দাওয়াও সময়মতো করেন না।

সারাক্ষণই দেশের মানুষের কথা চিন্তা করতে গিয়ে নিজে বেছে নিয়েছেন এক অগোছালো জীবন। কিন্তু এখানে তাকে শাসন করেন শেখ রেহানা। শেখ রেহানা বয়সে শেখ হাসিনার চেয়ে বয়সে ছোট হলেও একজন অভিভাবকই বটে। শেখ হাসিনা যার বকুনির ভয় করেন, তিনিও শেখ রেহানাই।
কিন্তু যারা শেখ রেহানাকে ঘনিষ্ঠভাবে চেনেন তারা জানেন যে তিনি মূলধারার রাজনীতিতে কখনো যুক্ত হতে আগ্রহী নন। তিনি একজন ‘রত্নগর্ভা মা’ও বটে। তিনি তার তিন সন্তানকে সঠিক উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। তাদের মধ্যে টিউলিপ সিদ্দিক ইতোমধ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একজন গুরুত্বপূর্ণ এমপি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি একজন গবেষক এবং চিন্তাশীল ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রুপন্তী মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে এর মধ্যেই পাশ্চাত্যে সাড়া ফেলেছেন।

শেখ রেহানা এখন নিজেই বলেন, যে এখন আমার অবসরের সময়। শেখ হাসিনার পাশে থাকা, তাকে নিঃস্বার্থ পরামর্শ দেওয়া ছাড়া তার কোনো কাজ নেই বলেই তিনি তার ঘনিষ্ঠদের বলেন।

বঙ্গবন্ধু পরিবারের কনিষ্ঠ মেয়ে রেহানা। মায়ের ডাক নাম রেণুর প্রথম অক্ষর আর বড়বোন হাসিনার শেষের অক্ষর অক্ষুণ্ণ রেখে নাম। পারিবারিক পদবি যুক্ত হয়ে পরিপূর্ণ নাম শেখ রেহানা। অতি আদরের ছোট ভাই রাসেলের কাছে যিনি ছিলেন ‘দেনা’ আপা। রাসেলের দেনা আপা কিংবা বাবা-মায়ের আদরের রেহানা বা মুন্নার জন্ম এমন ও বেড়ে ওঠা এমন এক সময়ে যখন বঙ্গবন্ধু ধীরে ধীরে হয়ে উঠছেন বাঙালি জাতির সব আশা-ভরসার মূর্তপ্রতীক। বাংলা ও বাঙালির মুক্তির প্রতিকৃত। জেল-জুলুম-নির্যাতন যার নিত্যসঙ্গী। শেখ রেহানা যখন বুঝতে শিখেছেন, তখনই দেখেছেন বাবা শেখ মুজিব বাঙালি জাতির শোষণমুক্তির জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কারাগারে। কারাগারই যেন তার মূল বাড়ি। আর নিজ বাড়িতে তিনি যেন ক্ষণিকের অতিথি। ঈদ-পার্বণে প্রায়ই তিনি কারাগারে। যদিওবা কখনো তিনি বাড়িতে থাকার সুযোগ পেতেন তখন বঙ্গবন্ধু পরিবারে সে বছরের ঈদ হতো সবচেয়ে সেরা ঈদ। শেখ রেহানা এক স্মৃতিচারণে লিখেছেন, ‘ছোটবেলায় দেখতাম, আব্বা প্রায়ই থাকতেন জেলখানায়। আমদের কাছে ঈদ ছিল তখন, যখন আব্বা জেলখানার বাইরে থাকতেন, মুক্ত থাকতেন। আব্বাও জেলের বাইরে, ঈদও এলো এমন হলে তো কথাই নেই। আমদের হতো ডাবল ঈদ।’

বঙ্গবন্ধুর এমনই কপাল তিনি কোনো মেয়ের বিয়েতেই উপস্থিত থাকতে পারেননি। বড় মেয়ের বিয়ের সময় জেলে আর ছোট মেয়ের বিয়ের আগেই তো ঘাতকের হাতে জীবন দিতে হলো। আর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেসা রেণু নিজ হাতে বড় মেয়ে হাসুর বিয়ে দিতে পারলেও ছোট মেয়ের বিয়ে দিতে পারেননি ঘাতকের হাতে নিহত হওয়ার কারণে। শেখ হাসিনার সন্তান জয়-পুতুল নানা-নানী-মামাদের আদর পেলেও, শেখ রেহানার সন্তান ববি, টিউলিপ, রূপন্তি তাদের আদর থেকে বঞ্চিত হয়েছে। পরিবারের বড় জামাতা ড. ওয়াজেদ মিয়া শ্বশুর-শাশুড়ির আদর-আপ্যায়ন পেলেও, ছোট জামাতা ড. শফিক সিদ্দিক তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

শেখ রেহানার বিয়ে সম্পন্ন হয় লন্ডনের কিলবার্নে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সুখ দুঃখের সাথী, বঙ্গবন্ধুর ফুফাতো ভাই মোমিনুল হক খোকার বাড়িতে ১৯৭৭ সালের জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে ড. শফিক সিদ্দিকের সাথে বিয়ে হয়। শফিক সিদ্দিক তখন বিলেতের সাউদাম্পটন ইউনিভার্সিটিতে উচ্চ শিক্ষারত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় থাকাকালীন তিনি সেখানে এসেছিলেন। শেখ রেহানাও বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহীদ হওয়ার পর বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে জার্মান থেকে দিল্লি চলে যান এবং সেখান থেকে পরে তাদের প্রিয় খোকা চাচার কাছে লন্ডনে এসে বসবাস শুরু করেন। শফিক সিদ্দিকের পরিবার ও শেখ রেহানাদের পরিবার ছিলেন পূর্ব পরিচিত এবং ১৯৭৪ সালেই পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ের পাকা কথা হয়েছিল। সব ঠিকঠাক থাকলে শেখ রেহানা জার্মানি থেকে ফিরে আসার পর বিবাহের কাজটি সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পনেরোই আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর দেশে যাওয়া এবং বেঁচে থাকাই যেখানে অনিশ্চিত হয়ে যায়, সেখানে আবার বিয়ে? তারপরও জীবন থেমে যায় না। জীবন নদীর মতো বহমান। কিন্তু একটি কথা বলতেই হয় বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবচেয়ে দুঃখী সন্তানের নাম হলো ‘রেহানা’। ছোট ভাই রাসেল ছাড়া সবার কাছে যে ছিলেন আদরের ‘মুন্না’। বড় বোনের বিয়েতে বাবা উপস্থিত না থাকতে পারলেও মা, ভাই, চাচা ও তিনি নিজেসহ আত্মীয়স্বজন উপস্থিত ছিলেন। ভাইদের বিয়েতে পিতা মুজিব উপস্থিত থেকে আশীর্বাদ করেছেন। কিন্তু শেখ রেহানার বিয়েতে একমাত্র জীবিত বোন টিকিটের টাকা জোগাড় করতে পারেননি বলে অনুপস্থিত ছিলেন।

এ প্রসঙ্গে তার স্বামী শফিক সিদ্দিক লিখেছেন, ৮৩ সালে তখন হাসিনা আপা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে ঢাকায় অবস্থান করছেন। ওই সময়ে আমি আমার পিএইচডি থিসিসের কাজে ঢাকা গিয়েছিলাম। এক দিন হাসিনা আপার বাসায় উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলাম, উনি হাশেম ভুঁইয়া নামের একজন কর্মীর অসুস্থ মেয়েকে লন্ডন পাঠাবার ব্যবস্থা করছেন। তখন হাসিনা আপা বেশ দুঃখ করে আমাকে বললেন, ‘শফিক দেখ, আজকে আল্লাহর ইচ্ছায় আমি আমার একজন কর্মীর অসুস্থ মেয়েকে বিদেশ পাঠাতে সাহায্য করতে পারি। কিন্তু সেদিন আমার একমাত্র বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দিল্লি থেকে লন্ডন যেতে পারিনি, কেবল টিকিটের টাকার অভাবে।’ এর চেয়ে বড় কষ্ট ও দুঃখের ঘটনা কারও জীবনে হতে পারে না।
বিয়ের পর শফিক সিদ্দিক ও শেখ রেহানাকে নানামুখী সংকট মোকাবেলা করে অগ্রসর হতে হয়েছে। সে সময় আর্থিক কষ্টটাই ছিল প্রবল। বিয়ের পরপরই স্বামীর সঙ্গে চলে আসেন সাউদাম্পটন ইউনিভার্সিটিতে। মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন আরেক বাঙালি পরিবারের সঙ্গে রুম ভাগাভাগি করে। আর্থিক অনটনের কারণে চাইলেই একক বাড়ি ভাড়া করে থাকার সামর্থ্য তাদের ছিল না। তাই শেখ রেহানাও বিভিন্ন জায়গায় চাকরির চেষ্টা করছিলেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনেও কর্মখালি দেখে চেষ্টা করেছেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়নি। নববিবাহিতা স্ত্রীর চাকরি করার বিষয়টি মন থেকে না চাইলেও শফিক সিদ্দিক রাজি হয়েছিলেন দুটি কারণে। প্রথমতঃ শেখ রেহানা প্রায়ই একা বাসায় থাকতেন এবং সার্বক্ষণিক মা, বাবা, ভাইদের ছবি সামনে নিয়ে কান্নাকাটি করতেন। ফলে শফিক সিদ্দিকের সন্দেহ জেগেছিল, এভাবে একা থাকতে থাকতে শেখ রেহানার মানসিক সমস্যা যদি দেখা দেয়। সুতরাং কাজে থাকলে মানুষের সান্নিধ্যে ও ব্যস্ত থাকার কারণে পনেরোই আগস্টের ভয়াবহ স্মৃতি কিছুটা হলেও ভুলে থাকতে পারবেন। দ্বিতীয়তঃ কিছুটা হলেও আর্থিক সমস্যার সমাধান হবে, এই বিবেচনায় তিনি স্ত্রীর চাকরির ব্যাপারে সম্মত হন।

নিরহংকারের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ শেখ রেহানা। বোন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী অথচ চরিত্রে তার কোনো লেশ নেই। পাবলিক গাড়িতে করে নিজের অফিসে আসা-যাওয়ার খবর সংবাদ মাধ্যমে দেখেছি আমরা। ব্রিটেনের যে কোনো বাঙালি নাগরিক শেখ রেহানার কাছে নিমেষেই যেতে পারেন। কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহের দৃষ্টান্ত হিসেবে তিনি পাথেয় হয়ে থাকবেন। একবার ভাবা যায়, নিজের বোন প্রধানমন্ত্রী অথচ তিনি অন্যের অফিসে কাজ করেন। সততার এমন দৃষ্টান্ত বিরল এবং শেখ রেহানা তা স্থাপন করেছেন। মানবিক মানুষ হিসেব তিনি অনন্য।

রোহিঙ্গাদের নির্মম নির্যাতনের চিত্র সচক্ষে দেখতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কক্সবাজারের উখিয়ায় গিয়েছেন এবং রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বোন শেখ হাসিনাকে সাহায্য করেছেন।

বড় মেয়েকে ব্রিটেনের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করেছেন। লেবার পার্টি থেকে দুবার এমপি হয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। ছেলে রাদওয়ান সিদ্দিক ববি আওয়ামী লীগের গবেষণা কাউন্সিল সিআরআইয়ের সঙ্গে যুক্ত। সিআরআই থেকে প্রকাশিত বইগুলোতে নিজের মুন্সিয়ানার ছাপ দেখিয়েছেন ববি। বঙ্গবন্ধুকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার নিমিত্তে নিরলসচিত্তে কাজ করে যাচ্ছেন। ছোট মেয়ে এখনো লেখাপড়া করছেন। সুতরাং অভিভাবক হিসেবে তিনি অনন্য।

শুধু কি তাই, প্রধানমন্ত্রীর ছেলেমেয়েদের মানুষ করার ব্যাপারেও তিনি জোরালো ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি শেখ হাসিনাকে বলতেন, আপা তুমি বড়, তাই তুমি রাজনীতিটা কর আর আমি তোমার ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করি। আজকে শেখ হাসিনার ছেলেমেয়েরা বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত। ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন এবং তার ফলাফল আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ। আর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ অটিজম ধারণাটিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননা পেয়েছেন। এ সব কৃতিত্বের ভাগীদার শেখ রেহানাও।
তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে সংগ্রাম করে জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়া যায়। রিফিউজি হিসেবে ছিলেন তিনি, তারপরেও টিকে ছিলেন জীবন সংগ্রামে। ’৭৫-এর পট পরিবর্তনের পর দুর্বিষহ জীবনযাপন করেছিলেন, অসীম সাহস এবং সক্ষমতার পরিচয় দেখিয়ে তিনি অনেক জায়গায়ই সফলতার পরিচয় দিয়েছেন।

এরপরও দুঃখ-কষ্ট তাকে, তাদের দুই বোনের পরিবারকে তাড়া করে ফিরেছে। এখনো তো বাবা-মা-ভাই হারানোর বেদনা তাদের তাড়া করে বেড়ায়। যদিও পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে তারা অনেকটাই এখন সুখের পরশ পাচ্ছেন। তবে একটা বিষয়ে তাদের চরম শত্রুও স্বীকার করতে বাধ্য হবে, পারিবারিক শিক্ষা, বিশেষ করে মায়ের দেওয়া শিক্ষা তাদের ধৈর্য, সাহস, বিচক্ষণতা, অধ্যবসায়, ত্যাগ, নির্লোভতা চলার পথকে সুগম করেছে। বিজয়ী করেছে। পুরোপুরি সুখী করতে না পারলেও স্বস্তি দিয়েছে। প্রেরণা জুগিয়েছে যুদ্ধজয়ের।
শেখ হাসিনার সব থেকে আপনজন এবং গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা শেখ রেহানা। জাতির দুর্যোগ এবং ক্লান্তিলগ্ন অবস্থায় সব সময় তিনি সুপরামর্শ দিয়ে থাকেন। অভিভাবক হিসেবেও তিনি অনন্য।

শুভ জন্মদিন : বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সহোদরা শেখ রেহানার ৬৫তম জন্মদিন আজ। ১৯৫৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ছোট বোন শেখ রেহানাকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে আর্শিবাদ করেছেন তার বড় বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খালা শেখ রেহানাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, মেয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য টিউলিপ সিদ্দিকী ,ছেলে রেদওয়ান সিদ্দিকী ও ছোট মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকী রুপন্তী মায়ের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন । এছাড়াও জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেখ রেহানাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। আমরাও ছোট আপার জন্মদিনে জানাই শুভেচ্ছা । শুভ হোক জন্মদিন। সুস্থ ও সুন্দর কাটুক আগামীদিন গুলো।

আজকের এই জন্মদিনে রেহানা আপাকে অভিনন্দন জানিয়ে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে চাই , ‘সন্ত্রাসের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান/ সঙ্কটের কল্পনাতে হোয়ো না ম্রিয়মাণ/ মুক্ত করো ভয়/ আপনা-মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়/ দুর্বলেরে রক্ষা করো, দুর্জনেরে হানো/ নিজেরে দীন নিঃসহায় যেন কভু না জানো/ মুক্ত করো ভয়/ নিজের ’পরে করিতে ভর না রেখো সংশয়।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)