প্রিয় তাপস ,
প্রথমে আমার সালাম নিও। আশা করি সুস্থ শরীর নিয়ে ভাল আছো। পর লিখি। আজ দীর্ঘ ২৪/২৫ বছর পর যে তোমাকে চিঠি লিখতে হবে ভাবিনি। সে এক আশ্চর্য সময় আমরা পার করেছি ঢাকায় ভুঁইয়া একাডেমি এবং পরে লন্ডনে। ক্রিশ্চিয়ান স্ট্রিটের সেই বাসার কথা মনে হয় মনে আছে। আশেক ভাই , মেহেদি ভাই, শুভ ভাই, রাশেদ এরা থাকতো। মাঝে মধ্যে আমি রুমি বা ছানু মিয়া বেড়াতে যেতাম। সেই জীবন। সেই চা খাওয়া। যাক ঢাকার মেয়র হিসেবে তোমাকে যখন নমিনেশন দিলো সেই সময় এই দূর পরবাসে বসে ভেবেছি নেত্রী একটা রাইট চয়েস করেছেন ।
অনেকেরই অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে। অনেক কিছুই অনেকে করতে চায় ,করতে পারে না। অনেকের স্বপ্ন থাকে, স্বপ্নগুলো এমনি তেই নিঃশেষ হয়ে যায়। হয়ত আল্লাহতায়ালা চাননি। তবে এই দীর্ঘ প্রবাস জীবনে মনে হয়েছে আল্লাহতালার এই চয়েস করার ক্ষেত্রে একটা স্টাইল আছে। আমার মনে হয় শেখ তাপসকে নিয়ে ঢাকাবাসি সেই স্বপ্ন দেখতেই পারে। সেটা আল্লাহর ইচ্ছা। ঢাকায় অনেকেই মেয়র হয়েছেন। কয়জনকে মানুষ মনে রেখেছে। কয়জন কাজ করতে পেরেছেন। এটার নাম ক্ষমতা। এর জন্য বলতে পেরেছো ,” শেখ তাপস বলেছে “। এই ঢাকাকে বদলে দেওয়া যায়। শত সীমাবদ্ধতার মাঝেও ।
সিটি কর্পোরেশন অনেক আইনি জটিলতায় কাজ করতে পারে না। স্থানীয় সরকারের অধীন এই প্রতিষ্ঠান এজন্য প্রয়াত মেয়র হানিফ “সিটি কর্পোরেশন গভর্নেস ” এর কথা বলেছেন । তারপরও এই সীমাবদ্ধতার মাঝে কাজ করেছেন আনিসুল হক। মাঝে মাঝে তিনি বলতেন, আমিও গুণ্ডা। কাজ করতে গেলে কখনো কঠোর কখনো কোমল হতে হয়। আর হলো, “পারতে পারা “। শেখ তাপস শেখ মনির ছেলে , বঙ্গবন্ধুর নাতি। এটা তার প্লাস পয়েন্ট। মনে হয় তাপস পারবেন। এই উপলব্ধি ঢাকার মানুষের হচ্ছে। অনুমিত হচ্ছে।
এই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে আমি আমার স্মার্ট টিভিতে বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপ দেখেছি । কোথাও যেন একটি কমিউনিটি সেন্টারে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য শুনছিলাম। চেয়ার মানুষকে ম্যাচুয়রড করে ফেলে। প্রিয় তাপসের বক্তব্য না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। ঢাকা নিয়ে স্বপ্ন এবং নিজের কিছু স্বপ্নের কথা বলেছো। মা বাবার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর ঢাকা শহরে কেউ বাড়ি ভাড়া দিত না। সেই ঢাকার আরামবাগে শৈশব কেটেছে। একান্ত একা। কিছু মানুষ ছাড়া। কেঁদেছো। সেই দৃশ্যগুলো আমরা দেখেছি। শ্বশুর বাড়ি ঢাকার ওয়ারীতে সে কথাও আমরা শুনেছি। ঢাকা নিয়ে ৫ দফা শুনেছি। আমার কাছে এগুলো কথার কথা মনে হয়নি । লক্ষ্যে স্থির মনে হয়েছে। একটা ব্যাপক উন্নয়ন যজ্ঞ হবে বুঝতে পারি ।
নির্বাচনের আগে ঢাকা বাসীর প্রতি “খোলা চিঠি” টি নজরে এসেছে। পাঁচ দফা। ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা এবং উন্নত ঢাকা। সুন্দর ঢাকা এবং সচল ঢাকা একটি বিরাট কাজ । কঠিন কিন্তু দুঃসাধ্য নাও হতে পারে। এতো যানজট । ইউরোপ থেকে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এর আইডিয়া গুলো কাজে লাগানো যেতে পারে। মেট্রোরেলগুলো পুরান ঢাকায় না পারলেও যতটুকু সম্ভব গুরুত্ব পূর্ণ স্থানে সংযোগ স্থাপনে উদ্যোগী হওয়া উচিত। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মতো “প্যাডিস্টারিয়ানাইজ” করা হোক। পৃথিবীর দেশে দেশে ‘হেলদি লাইফ স্টাইলের’ জোয়ার বইছে। ঢাকার মানুষকে হাঁটা শিখতে হবে। ফুটপাতগুলো দখল মুক্ত করতে হবে। নিঃশ্বাস এর জায়গাগুলো ফিরিয়ে আনতে হবে। সবুজ ঢাকা স্লোগানে। আমস্ট্রাডাম, লন্ডনের আদলে সাইকেল লেইন গড়ে তুলে মানুষকে সাইকেল চড়ায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আর উন্নত ঢাকা। প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার একটি মেগা প্রজেক্ট শুনেছি হাতে নেওয়া হবে। আর বলতে চেয়েছিলাম “খাই খাই” পার্টির কথা। দুর্নীতিমুক্ত নগর ভবন দুনীতিমুক্ত হবে এই প্রতিশ্রুতির মধ্যে একটা প্রত্যয় দেখছি।
এতো গেলো ঢাকা বাসীর প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির বিষয়। জাতীয় রাজনীতি নিয়ে বলা হয়নি এখনো! একটা জিনিস কিন্তু পরিষ্কার। বর্তমান দুনিয়ার সিটি মেয়র পরে জাতীয় রাজনীতিতে মেজর রুল প্লে করেন। দশ বছর আগের লন্ডনের মেয়র বরিস জনসন আজ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তাইপে এরদোগান ইস্তাম্বুলের মেয়র থেকে আজ তুরস্কের কামাল আর্তাতুক পরে সবচেয়ে শক্তিমান প্রেসিডেন্ট। তেহরানের মেয়র আহমেদ দিন নাজাদ তেহরানের মেয়র পরে ইরানের শক্তিশালী প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ফ্রান্সের জ্যাক সিরাক প্রায় দুই যুগ প্যারিসের মেয়র থেকে ফ্রান্সের ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট লি মিয়ং বাক সিউলের মেয়র ছিলেন। নিউ ইয়র্কের সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুম বার্গ এখনো মার্কিন রাজনীতিতে ফ্যাক্টর। আমি যে কথা বলতে চেয়েছিলাম সেটা হলো বাংলাদেশের রাজনীতিতে তরুণদের অভিষেক। বাংলাদেশ যে রাজনীতি ধারায় অভ্যস্থ সেই প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ফেরা। শেখ হাসিনা এই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন। গত আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে তার কিছুটা আঁচ পাওয়া গেছে। শেখ মনির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু যা করতে চেয়েছিলেন। সেই পতাকাই শেখ তাপস আপনার হাতে।
গত কয়দিন আগে শেখ পরশ ভাইয়ের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখছিলাম । সেখানে তিনি লিখেছেন, “৭৫ এর পর যে পরশ-তাপসকে ঢাকা শহরে কেউ বাড়ি ভাড়া দিতো না, সেই তাপস আজ এই ঢাকা শহরের মেয়র..! আল্লাহ মহান”। চারিদিকে এতো চাটুকারিতা আর তেল দেখে উপরের কথাগুলো মনে পড়লো। সিটি কর্পোরেশনকে দুনীতিমুক্ত করতে এই কথাগুলো যেন মনে থাকে।
চিঠি শেষ করতে চাইছি। সম্বোধনটা মাঝে মাঝে তুমি থেকে আপনিতে চলে যাচ্ছে।বাংলা ব্যাকরণে পদাধিকার বা সম্মান সূচক অর্থে মাঝে মাঝে আপনি ব্যবহার করতে হয়। শাহরুখ খান আর ইরফান খান এর “বিল্লু বারবার” সিনেমাটা খুব মনে পড়ছে। বিল্লুর বউ বিল্লুকে বার বার বলছে সুপারস্টার “শাহির খান” কি তোমাকে চিনতে পেরেছে ? চিঠি শেষ করছি। মানুষের হৃদয়ের স্থান সেটা যেন অক্ষয় থাকে সেটা কামনা করে এবং মহান আল্লাহতালার কাছ থেকে নেক হায়াত কামনা করছি যাতে এই “গুড ডিড” করার তৌফিক দান করেন। আমীন ।
ইতি
এক অভাজন বন্ধু। যুক্তরাজ্য।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)