প্রভাত নাকি দিনের পূর্বাভাস দেয়! ইনিংস শেষে স্কোরবোর্ডটা এই প্রবাদকে অনেকটাই ভুল বানিয়ে দিল। শুরুতে রানের ঘরে ১৯। উইকেটের ঘরে ৩। পরে ৪০/৪। কিন্তু ইনিংস শেষে আফগানিস্তান ১৬৪/৫। এটা দেখে কে বলবে, বাংলাদেশের শুরুটা অমন দারুণ ছিল! শুরু আর শেষের এই অমিলই এখন টাইগারদের ভয়।
রশিদ-মুজিবদের দমিয়ে ১৬৫ রান তাড়া করে জিততে হবে বাংলাদেশ। আফগানদের বৈচিত্র্যময় বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে এই স্কোর অসম্ভব না হলেও বেশ চ্যালেঞ্জিংই।
টস হারলেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে শুরুটা দুর্দান্ত করে বাংলাদেশ। স্কোর কুড়ির ঘর ধরার আগেই আফগানিস্তানের তিন ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে পাঠান সাইফউদ্দিন-সাকিবরা। ইনিংসের প্রথম বলেই আফগান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজকে বোল্ড করে সাজঘরে পাঠান মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
ইনিংসের প্রথম বলটা মিডল স্টাম্পে পিচ করেন সাইফউদ্দিন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেই বল বাতাসে ভেসে সামান্য আউট সুইংয়ে গুরবাজের অফস্টাম্প উপড়ে দেয়। অবিশ্বাস্য এক ডেলিভারি। উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিমের সামনে বাতাসে ভাসতে থাকে স্টাম্প।
ইনিংসের প্রথম বল হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই রানের খাতা খুলতে পারেননি গুরবাজ। পরে তৃতীয় ওভারের শেষ বলে আরও এক আফগান ব্যাটসম্যানকে তুলে নেন সাইফউদ্দিন। সাব্বির রহমানের হাতে ক্যাচ বানিয়ে নাজিবুল্লাহ তারাকাইকে (১১) ফেরান তিনি।
মাঝে নিজের প্রথম আর ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে সাফল্য পান সাকিব আল হাসান। স্লগ খেলতে গিয়ে বাউন্ডারির কাছে লিটন দাসের হাতে ধরা পড়েন হযরতউল্লাহ জাজাই (১)। পরে সাকিবের বলে আউট হন নাজিবুল্লাহ জাদরানও। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঝড় তোলা জাদরান এদিন দুই অঙ্ক স্পর্শ করতে পারেননি (৫)।
এরপরই শুরু হয় মোহাম্মদ নবি ও আসগর আফগানের লড়াই। ওপেনার রহমানউল্লাহ ছাড়া তাদের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানই আউট হন কিছুটা তাড়াহুড়া করতে গিয়ে। সেটা খেয়াল রেখেই নিজেদের শুরুটা বেশ দেখেশুনে করেন তারা। ফলও পান। মাঝে তাইজুলের বলে আউট হলেও নো বল ‘ভাগ্যে’ বেঁচে যান আসগর। সুযোগ পেয়ে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন তিনি।
নবি-আসগরের ব্যাটিং ধার একটু বাড়তেই যেন খেই হারিয়ে ফেলেন বাংলাদেশের বোলাররা। শুরুর আত্মবিশ্বাসটা কিছুটা হারিয়ে ফেলায় ঠিক জায়গায় বল রাখতে পারেননি তারা। ফলে পছন্দের জায়গায় বল পেয়ে সেগুলোকে আকাশে উড়িয়ে গ্যালারিতে ফেলেন আফগান দুই ব্যাটসম্যান।
১৭তম ওভারে আসগর যখন আউট হন, ততক্ষণে কাজের কাজ অনেকটাই সেরে ফেলে আফগানিস্তান। প্রথম বলের মতো আরেকটি বলে গুলবাদিন নায়েবকে বোল্ড করেন সাইফউদ্দিন। কিন্তু নবিকে থামাতে না পারায় শুরুর সাফল্য তেমনভাবে কাজে আসেনি।
আগের ম্যাচে ১৮ বলে ৩৮ রান করেছিলেন নবি। কোনো চার ছিল না, ছক্কা চারটি। এদিনও চারের চেয়ে ছক্কার মার বেশি। সাত ছক্কার সঙ্গে চার মেরেছেন তিনটি। শেষ পর্যন্ত ৫৪ বলে ৮৪ রানে অপরাজিত থাকেন নবি। আসগরের সঙ্গে ৭৯ রানের মহামূল্যবান জুটি গড়ার পর সপ্তম উইকেট জুটিতে করিম জানাতকে নিয়ে তোলেন অবিচ্ছিন্ন ৪৩ রান। এর মধ্যে জানাত করেন ৬ বলে ৫ রান। শেষ তিন ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৪২ রান নেয় আফগানিস্তান।
বাংলাদেশের হয়ে সাইফউদ্দিন চারটি ও সাকিব দুটি উইকেট নেন। বাকি পাঁচ বোলারের কেউ উইকেটের দেখা পাননি।