তিনি ভাবেন শিশুদের কথা। শিশুদের সুস্বাস্থ্যের কথা ভাবেন। আর তাই শিশুদের রোগ থেকে দূরে রাখার জন্য টিকাদান কর্মসূচি দেশব্যাপী নিয়ে থাকেন প্রতিবছর। একটি শিশুও যাতে এই টিকাদান কর্মসূচি থেকে বাদ না পড়ে সে ব্যাপারেও তাঁর থাকে বিশেষ নির্দেশনা। আর সে কারণেই সম্প্রতি জাতিসংঘে বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে দেয়া হয়েছে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননা।
তাকে এ সম্মাননায় ভূষিত করেছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। পুরস্কার প্রাপ্তির পর তিনি বলেছেন, এ পুরস্কার আমার নয়, এটা বাংলাদেশের জনগণকে উৎসর্গ করলাম। এ পুরস্কারের প্রশংসাপত্রে বলা হয়েছে,এই পুরস্কার তাদের জন্য, যারা শিশুদের জীবন রক্ষায় জরুরি টিকাদানে উদ্যোগী হয়েছেন এবং কোনো শিশু যাতে বাদ না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে কাজ করেছেন। শুধু টিকাদান নয়, শিশু অধিকার ও নারীর ক্ষমতায়নেও তিনি সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন।
তিনি চান একটি সুন্দর সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। দূর হবে দারিদ্র্য। নিরক্ষর থাকবে না একজন মানুষও। তিনি ভাবেন কৃষকের কথা। যে কৃষক ফসল উৎপাদন না করলে না খেয়ে থাকবে দেশের অনেক মানুষ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন সেই বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি পদ্মা সেতুর জন্য বিদেশি সাহায্যের দিকে না তাকিয়ে থেকে নিজেদের অর্থায়নেই পদ্মা সেতু করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন।
তার প্রতিটি দিন শুরু হয় ফজর নামাজ আদায় শেষে কোরআন পাঠ করে। নিজের চাওয়া পাওয়ার কোনো বোধ অনুভব করেন না।
তিনি সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে চান বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে।
মানুষের ভালোবাসাই তার সমস্ত কাজের অনুপ্রেরণা। দেশের সব খবরই তার নখদর্পণে। তিনি বয়স্কদের কথাও ভাবেন।
তিনি মানবিক একজন মানুষ। আর তাইতো মিয়ানমারের সামরিক সরকার যখন ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের নির্যাতন চালিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছিল তখন আশ্রয় দিয়েছিলেন। বিশ্বব্যাপী তার মানবতার কথা পৌঁছে যায়। তাকে মাদার অব হিউম্যানটি উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আকাশ সমান। তিনি জানেন জাতির এই সোনার সন্তানদের জন্যেই আজ দেশকে নিজের মতো গড়ে তোলার স্বাধীনতা পেয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতার ব্যবস্থা করেছেন অতীতের যেকোনো সরকারের চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশি।
শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি তার সীমাহীন দুর্বলতা। তাই তো কোনো শিল্পী সাহিত্যিক অসহায় হয়ে পড়লে তার মানবিক দু’হাত বাড়িয়ে দেন।
তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ছোটবেলা কেটেছে দাদা-দাদির কোলে পিঠে। রাজনৈতিক কারণে বাবা শেখ মুজিবুর রহমানকে খুব একটা কাছে পেতেন না।
তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ায় পাঠশালায়। ১৯৫৩ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে ঢাকা চলে আসেন। ১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলি নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৬৭ সালে বর্তমানের বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কলেজে থাকতেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সদস্য হন, এবং বেগম রোকেয়া হল শাখার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
১৯৭৫ সালে পাকিস্তানের প্রেতাত্মা খন্দকার মোশতাকের ষড়যন্ত্রে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবাই অসহায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছিল। আওয়ামী লীগ ছিল তখন যেন মাঝিছাড়া নৌকার মতো। শেখ হাসিনা তখন স্বামীর সঙ্গে জার্মানি থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন। তার সঙ্গে ছোটবোন শেখ রেহানা ছিলেন, তাই অনিবার্য মৃত্যু থেকে তিনিও বেঁচে গিয়েছিলেন।
৭৫ পরবর্তী সরকার তাকে কোনোভাবেই দেশে আসতে দেয়নি। তার অবর্তমানে আওয়ামী লীগ ছিল অনেকাংশেই দ্বিধাবিভক্ত। সেই আওয়ামী লীগ যেন প্রাণ ফিরে এলো ১৯৮১ সালের ১৭ মে। শেখ হাসিনা ফিরে এলেন নিজ দেশে। বিমানবন্দরে লাখো মানুষের ঢল দেখে তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে গেলেন। এমনিতেই ছিলেন পিতা-মাতা ভাইসহ স্বজনহারা।
মানিক মিয়া এভিনিউয়ের জনসমুদ্র দেখে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আজ আমি এসেছি বাংলায়। এ দেশের মানুষের মুক্তির সংগ্রামে অংশ নিতে। আমার আর হারানোর কিছু নেই।’
দেশে ফিরে তিনি অনুভব করলেন মুক্তিযুদ্ধের সেই বাংলাদেশ আর নেই। স্বাধীনতা বিরোধীরা সবকিছুকে তছনছ করে দিয়েছে। জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধুলায় মিশে দিয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতা, ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবোধের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধ। অভ্যুদয় হয়েছিল বাংলাদেশের। সংবিধানে ছিল- গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষতা। কিন্তু নতুন রাষ্ট্রের এই চার স্তম্ভ গুঁড়িয়ে দিয়েছে জেনারেল জিয়াউর রহমান।
কিন্তু নিয়তির লিখন কেউ খণ্ডাতে পারে না। যেভাবে ক্ষমতায় এসেছিল সেভাবেই ১৯৮১ সালের ৩০ মে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হত্যা করা হয় জিয়াউর রহমানকে। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ আরেক স্বৈরাচার এরশাদ ক্ষমতা দখল করে। এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। স্বৈরাচার এরশাদ সেই সময় শেখ হাসিনাকে অসংখ্যবার কারাগারে নিয়েছে। কিন্তু যার ধমনীতে বইছে বঙ্গবন্ধুর মতো একজন নেতার রক্ত, তাকে কি অত সহজেই এরশাদ সরকার টলাতে পারে? পারেনি। এর কারণ শেখ হাসিনার দৃঢ় মনোবল আর মানুষের ভালোবাসা। তার দৃঢ়তা, দূরদর্শিতা আর প্রজ্ঞার পথ বেয়েই বাংলাদেশে এগিয়ে গেছে জনতার মুক্তির আন্দোলন, এগিয়ে গেছে এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।
এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ১৯৮৩ সালে শেখ হাসিনা ১৫ দলের একটি জোট গঠন করেন। ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে তিনি তিনটি আসন থেকে বিজয়ী হয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালের গণআন্দোলনে তার জোট এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সক্ষম হয়।
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি, আওয়ামী লীগ ৮৮টি, জাতীয় পার্টি ৩৫টি এবং জামায়াতে ইসলামী ১৮টি আসন লাভ করে। বাকি আসনগুলো পায় অন্যদল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ না হওয়ায় জামায়াতের সহায়তায় বিএনপি সরকার গঠন করে। গণতন্ত্রের স্বার্থে শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর আবার চলে আন্দোলন। সেই আন্দোলন ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুনরুদ্ধার।
দীর্ঘ আন্দোলনের পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকাজ শুরু করেন শেখ হাসিনা। কিন্তু পরবর্তীতে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেই বিচারপ্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে। ২০০৮ এ আবার ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর হত্যাসহ জেলহত্যার বিচার, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার এবং ১ সালের মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ শুরু করেন। দেশি-বিদেশি নানা ধরনের চাপের মুখেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে কোনো আপস করেননি।
এরপর তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জনগুলো হলো: শিক্ষায় অনন্য সাফল্য, আলোকিত পথে যাত্রা,স্বাস্থ্য খাতে অর্জন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিপ্লব, যোগাযোগব্যবস্থায় অগ্রগতি, কৃষিতে সাফল্য, এমডিজি-এসডিজির পথে দুর্বার অভিযাত্রা,স্বাধীনতার পর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের অর্থনীতি, তৈরি হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী, আধুনিকায়ন করা হচ্ছে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, জাতির কলঙ্কমোচনে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেটা বলেন সেটা করে ছাড়েন। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, মাদক এর ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। যত প্রভাবশালী হোক না কেন, এমন কি নিজের দলের হলেও শাস্তি পেতে হবে তাকে। তার সেই নীতির যথাযথ প্রমাণ দেখছেন বাংলাদেশের মানুষ সাম্প্রতিক সময়ে।
সম্প্রতি তিনি ছাত্রলীগের দুই নেতাকে বাদ দিয়েছেন। কারণ তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়েছেন। এরপর ধরেছেন যুবলীগের নেতাদের অবৈধ উপার্জনের বিষয়ে। এরপর তিনি মূল দলের ব্যাপারেও সোচ্চার হবেন সেরকম ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। অর্থাৎ কাউকেই তিনি শাস্তি দেবার ব্যাপারে পক্ষপাত করবেন না। তিনি জেনে গেছেন টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকার কারণে অনেকের ভেতরে দাম্ভিকতার ভাব চলে এসেছে। তাদের পৃষ্ঠপোষকদেরও তিনি ছাড় দেবেন না। তার এই দৃঢ় মনোবল অটুট থাকুক। তা হলেই দেশ থেকে যত রকমের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা দূর হবে।
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিন। শুভ জন্মদিন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশের জন্য আপনার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন অপরিহার্য ছিলেন, বাঙালিদের কাছে আপনার উপস্থিতিও অপরিহার্য।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)