চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চলমান শৈত্যপ্রবাহের কারণে রাজধানীতে বাড়ছে নিউমোনিয়া এবং ডায়রিয়ার প্রকোপ। নিউমোনিয়া আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু। ঢাকা শিশু হাসপাতাল এবং আইসিডিডিআরবি থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহে নিউমোনিয়া এবং ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
আইসিডিডিআরবিতে গত ছয় দিনে ভর্তি হওয়া ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ২৩১ জন। এর মধ্যে গত সোমবার থেকে সারা দেশসহ রাজধানীতে অস্বাভাবিক শৈত্যপ্রবাহ চলতে থাকায় ওইদিন থেকে ভর্তি হওয়া ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। সোমবার ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হন ৩৫৭ জন রোগী। মঙ্গলবার এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬৫ জনে, বুধবার ভর্তি হন ৩৭৬ জন।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালে গত ১০ দিনে ভর্তি হয়েছে ৭৬ শিশু। একই সময়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যা ৭১ জন।
গত সোমবার থেকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সোমবার শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয় ৮ জন নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু, মঙ্গলবার ৯ জন এবং বুধবার ভর্তি হয় ১৫ জন।
শিশু হাসপাতালের ভর্তি তথ্য অনুযায়ী নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়লেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসদের দাবি, অস্বাভাবিক শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও শিশুরোগের প্রকোপ তেমন একটা বাড়েনি। এর কারণ হিসেবে তারা সরকারিভাবে শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন বিতরণের সুফলতার কথা বলছেন।
বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ইউনিট ঘুরে দেখা যায়, সেখানে রোগীর চাপ নেই খুব একটা। অনেক বেডই ফাঁকা। শিশু ইউনিটের রোগী ভর্তির রেকর্ড বইয়ে সংরক্ষিত তথ্য অনুযায়ী বুধবার মাত্র ৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। ভর্তি হওয়া রোগীদের বেশিরভাগেরই সর্দি-কাশি জাতীয় সমস্যা বলে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
শিশু মেডিসিন বিভাগের কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: অন্যান্য বছর এ সময়ে যে রোগী থাকে তার চেয়ে এবারের সংখ্যাটা কম। তাছাড়া স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও এখন কম রোগী ভর্তি আছে। যারা ভর্তি আছেন তাদের বেশির ভাগেরই সর্দি-কাশি জাতীয় সমস্যা। দু’একজন আছে নিউমোনিয়ার রোগী।
ওই চিকিৎসক আরো বলেন, খুব বেশি শীত পড়লে ছোটখাটো রোগের জন্য সাধারণত অভিভাবকেরা শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি করাতে চান না। এজন্য বেশি শীত পড়ায় রোগীর সংখ্যা কমে যেতে পারে।
তাছাড়া নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা অন্যান্যবারের তুলনায় কম থাকার কারণ হিসেবে তিনি বলেন: এবার সরকারিভাবে শিশুদের মাঝে নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। যার কারণে নিউমোনিয়ার প্রকোপ কম হতে পারে বলে আমার ধারণা।
গত সোমবার সারাদেশের তাপমাত্রা নেমে আসে ইতিহাসের সর্বনিম্ম পর্যায়ে। উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এদিন সর্বনিম্ন ২.৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায় রাজধানীসহ সারাদেশে। কিন্তু মঙ্গলবার থেকেই বাড়তে শুরু করেছে তাপমাত্রা। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে, ৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে, ২৫.৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী দুই দিন পর শীতকালের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বিরাজ করবে। এই দুইদিন তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়তে থাকবে। আগামী এক/দুই দিন বিদ্যমান অবস্থা অব্যাহত থাকলেও ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়বে। তবে ১৩ জানুয়ারি পর থেকে শীতকালের স্বাভাবিক তাপমাত্রা পাওয়া যাবে।