চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

শীতের হাওয়ায় লাগল কাঁপন

আসি আসি করে শেষ পর্যন্ত আরেকটা শীতকাল বুঝি চলেই এলো। গ্রামেগঞ্জে শীতের অস্তিত্ব কয়েক সপ্তাহ ধরেই টের পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু রাজধানীতে আসতে একটু দেরি হলো।

আবহাওয়া অফিস অবশ্য জানিয়েছিল, এবার শীত আসবে দেরি করে। ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ। হ্যাঁ, অবশেষে শীতের হাওয়ায় আমলকির বনে কাঁপন ধরতে শুরু করেছে। রাজধানীতেও টের পাওয়া যাচ্ছে শীতের অস্তিত্ব।

অথচ গেল সপ্তাহ পর্যন্ত শীত নিয়ে ছিল আফসোস। বাংলায় অগ্রহায়ণের প্রায় শেষ, ইংরেজির ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। ক্যালেন্ডারে সময় এসে গেছে অনেকদিন, কিন্তু শীত এখনও এল না। কোনও কোনও সকালে শীতল বাতাস ছেড়েছে বটে। ক্ষণিকের গা শিরশির। ব্যস, তারপরে আর কিছু নয়। উল্টে গরমে হাঁসফাঁস। ফ্যান ছাড়া গতি নেই। এমনকী এসিও লাগছে।

বাংলায় শীত হাতে গোনা ক’দিনের। বাকি সারা বছরই ঘেমে-নেয়ে কাবু থাকতে হয়। বাঙালি মধ্যবিত্তের এই ক’দিন যেটুক সুখ ভোগ। ভোরের কুয়াশা, হিমেল বাতাস, গরম চাদর, রঙিন সোয়েটার, হাল-ফ্যাসনের জ্যাকেট, শীতের পিঠা। সেই সঙ্গে সার্কাস, পিকনিক, জঙ্গলে আর নদীর বুকে ভ্রমণ। এবার কি তবে সব বরবাদ হবে?

আবহাওয়া অফিস বলেছিল, একটা নিম্নচাপ আছে, তার প্রভাব শেষ হলে শীত পড়তে শুরু করবে। শীতের ক্ষেত্রেই যত হিসাব-নিকাশ, বাধা-বিপত্তি-ঝামেলা। প্রকৃতি যেন আমাদের প্রতি বিরূপ। বাঙালিকে ‘সামান্য শীতে সুখে’ রাখবার কোনও ইচ্ছে নেই তার! তাই শীত আসতে কেবলই দেরি হয়। অথচ একটা গরমকাল চোখে পড়ে না, যখন ঠিক মতো গরম পড়ে না। যত দোষ শীতের বেলা!

চিরকাল প্রেমের প্রতীক হিসেবেই নাকডাক গোলাপের সেই গোলাপই কি না এবার বাঙালির শীতপ্রেম তছনছ করে দিতে চলেছিল! আসলে গেল সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে উদয় হয়েছিল নতুন ঘূর্ণিঝড় পাকিস্তান নাম রেখেছিল-ওয়ারদা বাংলায় যার অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘গোলাপ’।  জন্ম নিয়েই ওই ঘূর্ণিঝড় ভারতের তামিলনাড়ুতে আছড়ে পড়ে। এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে শীত আসতে দেরি হয়েছে। আক্ষরিক অর্থেই গোলাপের ঘায়ে মূর্চ্ছা যেতে বসেছিল শীত! অবশেষে সব আপদ-বিপদ কাটিয়ে সুবোধ বালকের মত শীত এক পা, দু পা করে ফিরে আসতে শুরু করেছে।

চলতি মৌসুমে ঘূর্ণিঝড়ের বান ডেকেছে বঙ্গোপসাগরে বর্ষার আগে হাজির হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর ছন্দ নষ্ট করে চট্টগ্রামে আছড়ে পড়েছিল তার পর বর্ষা-বিদায়ের পর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট হয় ঘূর্ণিঝড় ক্যান্ত এবং নাডা এবার এল ওয়ারদা
যাহোক, শেষ পর্যন্ত ওয়ারদার দৌরাত্ম্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শীতের হাওয়া বইতে শুরু করেছে।

লেপ-কম্বলের নীচে শুয়ে উষ্ণতার সুখ উপভোগের প্রত্যাশা এখন করাই যায়। এখন সময় হলো বেড়িয়ে পড়ার। শীতকাল এখন শহুরে নাগরিকদের জন্য ভ্রমণেরও কাল। একালের শিশুরা সারা বছর লেখাপড়ার চাপে থাকে। এই ডিসেম্বরেই তাদের কয়েকদিনের ছুটি। পরীক্ষা শেষে ঘুরে বেড়াবার আয়োজন তাই শীতকালেই করতে হয়। ইতিমধ্যে বড়দিনের ছুটিকে সামনে রেখে ভ্রমণ-বিলাসীরা ভ্রমণের পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে।

দাদাবাড়ি, নানাবাড়ির পাশাপাশি পরিবারের সদস্যরা মিলে কুয়াকাটা, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি কিংবা সিলেট, শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে বাস বা ট্রেনে চড়ে বসার ব্যাপক আয়োজন চলছে।

আমরা শহরের নাগরিকরা শীতকালকে খুব ভালোবাসি। আমাদের দেশে শীতকাল অতিথির মতো। কয়েকদিনের জন্য আসে। আর এই অল্প কয়েকটা দিনের জন্যই সোয়েটার পরা, লেপের তলায় যাওয়া আর পানি গরম করে হাতমুখ ধোয়া। এরপর সারা বছর তো ঘামতেই থাকা।

শীত মানেই বনভোজন, বিয়েশাদি ভ্রমণ আর পিঠাপুলির উৎসব। কিংবা শীত মানে স্রেফ পথের ধারে দাঁড়িয়ে ধোঁয়া ওঠা এক কাপ আগুন গরম চা ধীরে ধীরে উপভোগ। শীত মানেই আনন্দ, ফুর্তি আর অলিখিত উৎসব। আমাদের সামর্থ্যে যত সীমিতই হোক না কেন, এর মধ্যেও আমরা শীতকালকে উপভোগ করি। ইতিমধ্যে শীতের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।

আলমারির ভেতর থেকে বের করা হয়েছে কম্বল আর সোয়েটার। ধুয়ে-রোদে দিয়ে তা গায়ে চাপানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। অনেকেই নতুন শীতের পোশাক কিনেও ফেলেছেন। শীতের সকালে আয়েশ করে রোদ বা আগুন পোহানো, সুস্বাদু পিঠা খাওয়া, খেজুরের রস, পুকুরে মাছ ধরা কিংবা কুয়াশা মাখা সবুজ প্রান্তরে ঘুরে বেড়ানোর মজাগুলো ফিরে আসে।
আসুন আমরাও সেই মজাগুলো উপভোগ করি। দুনিয়া বারবার দেখেছে, এবার প্রকৃতিও দেখুক বাঙালিকে দমিয়ে রাখা যায় না!