চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

নির্মাতাদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে: আশফাক নিপুন

হইচইয়ে প্রশংসিত হচ্ছে আশফাক নিপুনের ‘কষ্টনীড়’। কথা বললেন অরজিনাল কন্টেন্টটির নানা বিষয় নিয়ে…

চারদিন আগে ওটিটি প্লাটফর্ম ‘হইচই’-তে মুক্তি পেয়েছে জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুনের অরজিনাল ‘কষ্টনীড়’। একটি পরিবার ও সদস্যের ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শকে কেন্দ্র করে কনটেন্টটি তৈরি হয়েছে। যে গল্পটি হরহামেশাই দেখা যায়। অতি সাধারণ গল্প আশফাক নিপুন তার মুন্সিয়ানা দিয়ে অসাধারণভাবে তুলে ধরেছেন।

সচেতন দর্শক যারাই ‘কষ্টনীড়’ দেখছেন, পছন্দ করছেন। গল্পটি নিজেদের বলে অনুভব করতে পারছেন। এখানেই নির্মাতা হিসেবে আশফাক নিপুনের স্বার্থকতা মনে করছেন সমালোচকরা।

মঙ্গলবার বিকেলে ‘কষ্টনীড়’ প্রসঙ্গে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপ করেন আশফাক নিপুন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছাড়াও কলকাতা থেকে ভালো সাড়া আসছে। প্রশংসা করে ওখান থেকে ফেসবুকে লিখছেন। একটা সহজ সাধারণ গল্প, খুব যে আউটস্টান্ডিং গল্প তা নয়; মানুষ চমৎকারভাবে গল্পটা গ্রহণ করেছেন। আশপাশের চরিত্রগুলো যখন পর্দায় হাজির করতে হয় তখন একটা ঝুঁকি থাকে ফুটিয়ে তোলা নিয়ে। কিন্তু দর্শকদের চরিত্রগুলোর সঙ্গে কানেক্ট করেছে। সবমিলিয়ে যে সাড়া আসছে, আমি খুবই খুশী।

ওটিটিতে মুক্তি পাওয়ায় তুলনামূলক কম আলোচিত অনুভব করছেন কিনা জানতে চাইলে আশফাক নিপুন বলেন, ‘কষ্টনীড়’ হচ্ছে হইচই এর প্রথম ৯০ মিনিটের বেশি কনটেন্ট। তারা সবসময় সিনেমা কিংবা ওয়েব সিরিজ প্রাধান্য দিয়েছে। সাড়া যে সিনেমা বা সিরিজের মতো আসবে তা নয়। মানুষ দেখার দৃষ্টিভঙ্গিতে টিভিতে একটা নির্দিষ্ট সময়ে নাটক প্রচার হয়। হাইপ ওঠে। একটা সময় আর থাকে না। আমার কাছে মনে হয় ওটিটি’র ব্যাপারটা স্ট্রিমিং, টিভির মতো অনএয়ার নয়। স্ট্রিমিং সবসময়ই থাকবে।

তিনি বলেন, ‘কষ্টনীড়’র গল্পটা থেকে যাবে। দর্শক ছয়মাস পরে দেখলেও নিজেদের কানেক্ট করতে পারবেন। আরেকটা কারণ হতে পারে, হইচই এর সাবস্ক্রিপশন সিস্টেম হচ্ছে পুরো বছর বা ছয়মাসের একবারে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা। আমাদের দর্শক এখনও ইউটিউবে দেখে অভ্যস্ত। ওটিটিতে দেখাতে অভ্যস্ত হতে আরও সময় লাগবে। দর্শক মনে করতে পারে ৯০ মিনিটের কনটেন্টের জন্য এতো টাকা দিয়ে সাবস্ক্রাইব করে নেব কিনা! আমি মনে করি, যত দিন যাবে ততই ‘কষ্টনীড়’র গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।

‘কষ্টনীড়’ মূলত পরিবারের গল্প। যে পরিবারের সর্বেসর্বা বাবা চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান। তার সহধর্মিনী সাবেরি আলম। তিন সন্তান সাঈদ বাবু, শ্যামল মাওলা ও ইয়াশ রোহান। দুই মেয়ে রুনা খান ও সাবিলা নূর। পাঁচ সন্তানের পাঁচ রকমের মতামর্শ ও পিতার সঙ্গে তা নিয়ে মনস্তাত্বিক দ্বন্দ সেই সঙ্গে রাজনীতি ও ধর্ম সবকিছুই পর্দায় হাজির করেছেন আশফাক নিপুন। গল্প প্রসঙ্গে নির্মাতা বলেন, হইচই থেকে আমাকে বলা হয়েছিল একটা পরিচ্ছন্ন পারিবারিক গল্প উপহার দেয়ার। তারা পরিবারের গল্প নিয়ে এর আগে সেভাবে কাজ করে নাই। তাদের বেশিরভাগ কনটেন্ট থ্রিলার, অ্যাকশন, রহস্য বা এডাল্ট। পুরোপুরি পরিবারের গল্প কষ্টনীড়ই প্রথম।

আশফাক নিপুন বলেন, আমার মাথায় আসে যে পরিবার দেখাবো সেই পরিবারের সদস্যরা যদি পুরো দেশের একেকটা মতের প্রতিনিধি হয় তাহলে কেমন হয়! দর্শক ‘কষ্টনীড়’ দেখলে বুঝতে পারবে এখানে ইসলামপন্থী, বামপন্থী, নারী জাগরণের ব্যাপার রয়েছে। এ ভাবনা থেকে একটি পরিবারের মধ্যে রাষ্ট্রকে দেখিয়েছি। মোটাদাগে পরিবারের গল্প। চরিত্রগুলোকে ঠিকভাবে তুলে আনতে পেরেছি বলেই হয়তো রাষ্ট্রের চিত্র মনে হয়েছে।

প্রায় চারবছর ধরে বাংলাদেশে ব্যবসা করছে হইচই। তাদের প্রায় প্রতিটি কনটেন্টই দর্শক নন্দিত। বাংলাদেশের অন্যান্য ওটিটি প্লাটফর্মের দর্শক নন্দিত কাজ তুলনামূলক কম কেন জানতে চাইলে আশফাক নিপুন বলেন, হইচই তাদের অভিজ্ঞতার কারণে বুঝতে পেরেছে গল্প সমৃদ্ধ কনটেন্টই ওটিটির প্রাণ। টাকা দিয়ে যেহেতু দেখতে হয় মানুষ সাবস্ক্রাইব করে, তাই আগে ভেবেচিন্তেই সাবস্ক্রাইব করে। এখানে ইউটিউবের মতো ফ্রি দেখা যায়না। হইচই’র ফ্যান্টাসটিক ক্রিয়েটিভ টিম রয়েছে। আমি সরাসরি তাদের সঙ্গে কাজ করেছি, মাঝে কোনো এজেন্সি নেই। কাজ করে আরেকটা জিনিস ভালো লেগেছে তারা নির্মাতার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন।

আগে বলেছিলাম ‘কষ্টনীড়’ যেহেতু পরিবারের গল্প, সদস্যদের একই রকম লাগতে হবে। কাস্টিং করার সময় উমুক তমুককে নিতে হবে এমন কিছু করা যাবে না। তারা একবার বলেনি ওকে তাকে নেন, আরও বেশি দর্শক দেখবে আলোচনা হবে। তারা গল্প ও গল্পের দর্শন পছন্দ করেছে। এরপর বলেছেন, আপনার যাকে ইচ্ছে তাকে নিয়ে কাজ করেন সুবিধামতো। এই ব্যাপারটা আমাদের দেশের ওটিটি প্লাটফর্মগুলোকে মানতে হবে। গল্পের চাহিদা অনুযায়ী শিল্পীকে প্রাধান্য দিতে হবে।

শিল্পী নির্বাচনে নির্মাতাদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। হইচই এর ‘তাকদির’ সিরিজে মন্টু নামে যে চরিত্রটা উঠে এসেছে তার নাম সোহেল রানা। কেন্দ্রীয় চরিত্রের ডান হাত এই চরিত্রটা বের হয়ে এসেছে। আমরা আমাদের কাজে কেন এমন চরিত্র তুলে আনতে পারিনা? এটা পুরোপুরি নির্মাতার কৃতিত্ব। দর্শক সবাই এই চরিত্রের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। শুধু ওটিটি নয়, টিভি বা ইউটিউব বেসিস কাজে নির্মাতার স্বাধীনতা দিতে হবে। স্টার নির্ভর হওয়া একেবারে খারাপ বলছি না। তবে এটা নির্মাতার সিদ্ধান্তে দেয়া হোক। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আমাদের প্রযোজকদের আরেকটু সাহসী হতে হবে নির্মাতাদের ব্যাপারে। প্রযোজকদের বাধ্যবাধকতার কারণেই হয়তো একই মুখ বারবার আসে। নির্মাতার স্বাধীনতা দিলে আরও সুন্দর সুন্দর গল্প পাওয়া যাবে।

সবশেষে আশফাক নিপুন জানালেন, তার পরিচালনায় দেশীয় ওটিটি প্লাটফর্মে আরও একটি কাজ আসছে। বললেন, শুটিং শেষ করেছি। পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ চলছে। বিস্তারিত এখন জানাতে চাইনা। হয়তো ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হবে।