‘শিল্পীর পেশাকে স্বীকৃতি’ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেন সংরক্ষিত মহিলা আসন-৪ এর সাংসদ ও অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা।
রবিবার সংসদ অধিবেশন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে জনপ্রিয় এ অভিনেত্রী বলেন, ‘আপনি শিল্পী সমাজকে দীর্ঘদিনের বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা করুন। শিল্পীর পেশাকে স্বীকৃতি দিন।’
স্পিকার অধ্যাপক ড. শিরিন শারমিনের উপস্থিতিতে নাম না উল্লেখ করে একটি ঘটনা শেয়ার করতে চাই জানিয়ে সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, “তাকে এবং তার কণ্ঠের সঙ্গে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত। গত বাজেট অধিবেশনে অডিও ভিজ্যুয়াল পুরোটার ভয়েস ওভার তার ছিল। মহান জাতীয় সংসদের বঙ্গবন্ধুর উপর তথ্যচিত্রের ভয়েস ওভারটিও তার ছিল। মুজিববর্ষে এই সংসদে তার নির্দেশনায় নাট্য আলেখ্য মঞ্চস্থ হয়েছে। সংসদ টিভিতে প্রচারতি হয়েছে তার নির্মিত বঙ্গবন্ধুর চরিত্র ‘কারাগারের রোজনামচা’। তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত নাট্যকার নির্দেশক অভিনেতা। কিন্তু তিনি ব্যাংক থেকে হোম লোন পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন না।”
‘ঘুড্ডি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘আজ রবিবার’, ‘পালাবি কোথায়’র মতো নন্দিত সব নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করা সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, ‘একজন সাধারণ কর্মজীবী তার মাসিক বেতনের খতিয়ান দেখিয়ে ব্যাংক লোন নিতে পারেন। কিন্তু একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী যিনি ওই চাকুরীজীবীর চেয়ে অবশ্যই বেশি উপার্জন করেন, নিয়মিত আয়কর দেন, সমস্ত কাগজপত্র জমা দেয়ার পরও সামান্য একটি হোম লোন পান না।’
সুবর্ণা মুস্তাফা তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমি ব্যাংককে দোষারোপ করছি না। তারা তাদের পলিসি ও নিয়মের মধ্যে থাকবে। শুধু ভরসা করতে পারছে না একজন শিল্পী মাসে মাসে লোনের কিস্তি শোধ করতে পারবে। কারণ শিল্পী কোনো স্বীকৃত পেশা নয়।’
প্রাণপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী আপনি শিল্পীদের সহায় উল্লেখ করে সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, “বারবার আমরা আপনার কাছে ফিরে আসি। আপনার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মঞ্চ নাটককে কর মুক্ত করেছিলেন। আপনার ভাই শহীদ শেখ কামাল মঞ্চে অভিনয় করতেন, সেতার বাজাতেন, ছবি আঁকতেন। আমি সেই সৌভাগ্যবানদের একজন যে মঞ্চে অভিনয়রত অবস্থায় আপনাকে মহিলা সমিতিতে দর্শক সারিতে পেয়েছি। তাই আপনাকে বলতে চাই, শিল্পীর পেশাকে স্বীকৃতি দিন।”
সকল শিল্পীদের জন্য ‘শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট’ গঠন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞা প্রকাশ করে সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, “দলমত নির্বিশেষে প্রধানমন্ত্রী শিল্পীর পাশে দাঁড়িয়েছেন। ‘শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট’ প্রধানমন্ত্রীর সেই ভালোবাসার পূর্ণাঙ্গ প্রকাশ।”
৭ মিনিটের বক্তব্য দেয়ার সময় সুবর্ণা মুস্তাফা দেশের মঞ্চ, যাত্রা, বেতার, টেলিভিশন, আবৃত্তি, চলচ্চিত্র, সংগীত, নৃত্যশিল্পীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দেশের যেকোনো ক্রান্তিকালে শিল্পীরা তাদের রাজনৈতিক বন্ধুদের পাশে ছিলেন রাজপথে মিছিলে যুদ্ধে।
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান এবং ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ট্রাকে চড়ে শিল্পীরা সাধারণ মানুষদের উদ্বুদ্ধ করতে ছুটেছিলেন। শরণার্থী শিবিবের সেবকের ভূমিকা পালন করেন।
“৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী শাসনে দিনের পর দিন এসব শিল্পীদের কেটেছে রাজপথে। গত নির্বাচনে আমাদের শিল্পী সমাজের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। এতো গৌরব গাঁথার মধ্যে একটি বিষাদের ছায়া থেকে যাচ্ছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য শিল্পী আমাদের দেশে কোনো স্বীকৃত পেশা নয়। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি শিল্পী পেশাকে স্বীকৃতি দিন।”
সংসদে দাঁড়িয়ে শিল্পীদের পক্ষে অধিকার নিয়ে কথা বলায় সুবর্ণা মুস্তাফা এমন বক্তব্যকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মঞ্চ, টেলিভিশন ও সিনেমার সঙ্গে যুক্তদের অনেকে। শিল্পীদের পক্ষে বলায় বাহবা দিচ্ছেন।
নির্মাতা, নাট্য নির্দেশক থেকে শুরু করে তারকারাও সুবর্ণার দেয়া বক্তব্য’র ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন। শাকিব খান থেকে শুরু করে জয়া আহসান, প্রত্যেকেই সুবর্ণা মুস্তাফাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
শাকিব খান তার ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “দেশের আপামর শিল্পীর কণ্ঠস্বর হয়ে কথা বলার জন্য ধন্যবাদ আমার ভীষণ প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় সুবর্ণা মুস্তাফা ম্যাডাম। আপনার মতো প্রকৃত শিল্পী যখন মহান জাতীয় সংসদ অধিবেশনে অন্যান্য শিল্পীদের সম্মান ও অধিকারের কথা বলেন তখন আমরা অনুপ্রাণিত হই আর সাহস পাই। স্বপ্ন দেখি সুন্দর আগামীর।”