হাসেম ফুডস কারখানায় সম্প্রতি ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৫১ জন শ্রমিক নিহত ও বহুশ্রমিক আহত হন। এই দুর্ঘটনার পর কারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ কর্মপরিবেশ, অগ্নি নিরাপত্তা ও অবকাঠামোগত দুর্বলতার বিষয়টি আবারও আলোচনায় আসে। কাছাকাছি সময়ে রাজধানীর মগবাজারে ব্যস্ত এলাকায় একটি ভবনে ভয়াল বিস্ফোরণে ১২ জনের প্রাণহানি হয়। ওই ভবনে নিচ তলা ও দোতলায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছিল। দেশের কলকারখানাগুলো সরকারে প্রচলিত নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছে। শিল্প কারখানাগুলোতে প্রায় নিয়মিত বিভিন্ন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে অসহায় শ্রমিক। নিরাপত্তাহীন ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে শ্রমিকদের জীবনের তোয়াক্কা না করেই প্রতিদিন উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এক শ্রেণীর মুনাফালোভি শিল্প মালিকরা। তাদের লাগাম টেনে ধরার সময় এসেছে।
দেশের বিদ্যমান আইন মেনে কারখানা নির্মাণ ও ঝুঁকিহীন পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে অবিলম্বে সব শিল্প কারখানা সরেজমিনে পরিদর্শনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়ে কারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে দুর্ঘটনা রোধের পাশাপাশি সবার জন্য নিরাপদ কাজের পরিবেশ ঠিক রাখতে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বহুপক্ষীয় একটি কমিটি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক প্রজ্ঞাপনে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এর নেতৃত্বে ২৪ সদস্যের এই কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়। উচ্চ পর্যায়ের এই কমিটি গঠনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পৃথক ‘অনুশাসনে’ অবিলম্বে সব শিল্প কলকারখানা সরেজমিনে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নেতৃত্বে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে অবিলম্বে সকল শিল্প কলকারখানা সরেজমিনে পরিদর্শনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বহু কর্মী ও শ্রমিকের হতাহত হওয়ার ঘটনায় দেশে শিল্প কারখানায় নিরাপদ কর্ম পরিবেশের বিষয়টি সামনে আসার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ ধরনের একটি উদ্যোগ নেওয়া হল।
সরকারের এই শুভ উদ্যোগের বাস্তবায়ন দেখতে চাই আমরা। একইসঙ্গে আমরা মনে করি কেবল সরেজনি পরিদর্শনও যথেষ্ট নয়। একই সঙ্গে বিদ্যমান আইনী কাঠামোর অধীন নীতিমালার কঠিন বাস্তবায়নও জরুরি। এছাড়া প্রচলিত শিল্প আইনে যদি কোনো ত্রুটিপূর্ণ ধারা থাকে তা বাতিল করে শ্রমিকদের জীবন বাঁচানোর জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে। আশা করি সরকারের সব শুভ উদ্যোগের মত এটিও ভেস্তে যাবে না আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়।
কোনো সভ্য দেশে এত অনিরাপদ শিল্প কারখানা গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নয়ন যাত্রায় এগুলো মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। সুতরাং সরকারের সরেজমিন পরিদর্শন কার্যক্রম দ্রুত যেন সক্রিয় হয় এবং কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন যেন না হয়। তাতে করে সরকারের ইমেজ আরও নষ্ট হবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।