শিল্পকলা একাডেমির সাজসজ্জাই বদলে গেছে। চেনাই যায়না জাতীয় চিত্রশালা ভবন। নান্দনিক শিল্পকর্ম আর অনবদ্য সাংস্কৃতিক উপস্থাপনায় আলোড়িত অন্দর বাহির। বিদেশি শিল্পীদের পদচারণায় মুখর একাডেমি প্রাঙ্গণ। উন্মুক্ত অংশে যে আড্ডার এবং খাওয়ার ব্যবস্থাপনা সঙ্গে রবীন্দ্রসংগীতের যন্ত্রানুযোগ তা রুচিবোধকে স্নিগ্ধ করে।
দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় শিল্প প্রদর্শনীর আসর ঢাকা আর্ট সামিটের চতুর্থ আসরের শুক্রবারের শুরু আগামী ১০ তারিখ পর্যন্ত যে কারো জন্য অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতার জন্ম দেবে তা বলা বাহুল্য। অন্যদিকে উদ্বোধনে প্রধান অতিথির আশাবাদ ঢাকা আর্ট সামিটের চতুর্থ আসরের প্রতি কৌতূহলের দ্বিগুন উৎসাহ সঞ্চার করে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আবুল মাল আব্দুল মুহিত যখন বলেন, ‘ ‘দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় শিল্প প্রদর্শনীর আসর এটি। যা বাংলাদেশকে গর্বিত করেছে। শিল্প চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। আমাদের দেশে চিত্রশিল্পের অনেক পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস সবার সামনে তুলে ধরতে হবে । আমার বিশ্বাস এই সামিট দক্ষিণ এশীয় শিল্পের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।’ তখন তার কথাকে বাগাড়ম্বর বলে মনে হয়না।
শিল্প এবং স্থাপত্যকে নতুন আঙ্গিকে মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন-এর উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় শুরু হয়েছে দক্ষিণ এশীয় শিল্পকর্মের জন্য বৃহত্তম আন্তর্জাতিক প্লাটফর্ম ঢাকা আর্ট সামিট (ডাস)। ঢাকা আর্ট সামিট এর চতুর্থ এ পর্ব বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সামিটটি জনসাধারনের জন্য সর্ম্পূণভাবে উন্মুক্ত এবং টিকেটবিহীন।
উদ্বোধনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এছাড়াও উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা আর্ট সামিটের সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান ফারুক সোবহান এবং সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক নাদিয়া সামদানী।
এ প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন ৩৫টি দেশের ৩০০ এর বেশি শিল্পী; দক্ষিণ এশিয়ার কিছুটা অজানা এবং একই সাথে সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময় শিল্পকলার উন্নয়নকে সামনে রেখে সামিটে ১২০ জনেরও বেশি বক্তার অংশগ্রহনে থাকছে মোট ১৬ টি প্যানেল আলোচনা এবং ২টি সিম্পোজিয়াম। থাকছে প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীদের জন্য সামদানী আর্ট অ্যাওয়ার্ড এবং সামদানী সেমিনার প্রোগ্রাম।
বাংলাদেশের প্রায় শতাধিক শিল্পীর অংশগ্রহন থাকছে সামিটের চতুর্থ আসরে। বাংলাদেশি ১২টি আর্টিস্ট-লেড অর্গানাইজেশন তাদের শিল্পীদের নিয়ে ঢাকা আর্ট সামিটে অংশগ্রহন করছে। আন্তর্জাতিক কিউরেটর, শিল্পী, লেখক, গবেষক, সমালোচকসহ ১২০০ এর বেশি আন্তর্জাতিক অতিথি সমাগম এর আশা করছেন আয়োজকরা।
এছাড়া চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য, ভিডিও আর্ট, তাছাড়াও থাকছে আন্তর্জাতিক শিল্পীদের অংশগ্রহনে মাল্টিস্টেজ পারফরম্যান্স প্রোগ্রাম যা এবারের ঢাকা আর্ট সামিটের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক নাদিয়া সামদানী চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, সামিটে ২০১৮ সংস্করণে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সংপৃক্ততাকে তুলে ধরা হবে নতুনভাবে। জাতীয় উন্নয়নকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করার জন্য রয়েছে শ্রীলঙ্কার অজানা শিল্পকলার ইতিহাস। এছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার প্রদর্শনীর ইতিহাসের ওপর আলোকপাত করা হবে। সামিটে এবার প্রথমবারের মত সম্পৃক্ত হতে যাচ্ছে ইরান ও তুরস্ক।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের শিল্পকর্ম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পৌঁছে দেওয়া আর্ট সামিটের অন্যতম উদ্দেশ্য। এর অংশ হিসেবে আর্ট সামিটে থাকছে এশীয় শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর অন্যতম পুরানো প্ল্যাটফর্ম এশিয়ান আর্ট বিয়েনালের উপর একটি বিশেষ প্রদর্শনী যেখানে প্রখ্যাত বাংলাদেশী শিল্পী সফিউদ্দিন আহমেদ, এম এম সুলতানসহ অন্যান্য শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনী করা হবে। এ প্রদর্শনী আর্কাইভে সহযোগিতায় আছে জাপানের ফুকোওয়াকা মিউজিয়াম এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
৫৫টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আর্ট সামিটের সাথে পার্টনার হিসেবে রয়েছে। এছাড়াও সরকারি বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে সহযোগি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আরো রয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর।
ছবি : সাকিব উল ইসলাম